Panchayat vote 2023

৮জুলাই পঞ্চায়েত ভোট, মনোনয়ন আজ থেকেই

রাজ্য

 রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দামামা বেজে গেল। আগামী ৮ জুলাই রাজ্যে এক দফাতেই পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পঞ্চাগেত নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা করে দেওয়ায় সব মহলেরই বক্তব্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার আগে থেকেই জানা ছিল নির্বাচনী নির্ঘন্ট কী হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি জানান, দার্জিলিঙ এবং কালিংপঙে দ্বিস্তর এবং বাকি জেলাগুলিতে ত্রিস্তরে নির্বাচন হবে।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানিয়ে দেন, ঘোষণার সাথে সাথে রাজ্যে নির্বাচনী আচরণবিধিও কার্যকরী হয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার থেকেই মনোনয়ন পত্র দাখিল করা যাবে। রবিবার ছুটির দিন বন্ধ থাকাবে মনোনয়ন পর্ব। আবার সোমবার থেকে শুরু হবে। ১৫জুন  পর্যন্ত মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া যাবে। ১৭ জুন মনোনয়ন পত্রগুলি পরীক্ষার দিন ধার্য হয়েছে। ২০ জুন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ঘোষণা হয়েছে। ১১ জুলাই ভোট গণনা, এমনটাই জানা‍‌ গেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যে রাজ্য পুলিশের হাতে থাকছে তাও এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজীব সিনহা। সাংবাদিক বৈঠকে এদিন বারবার প্রশ্ন ওঠে সর্বদলীয় বৈঠক নিয়ে। কমিশনার উত্তরে জানান, আইনে কোন সর্বদলীয় বৈঠকের সংস্থান নেই। ২০১৮ সালে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাড়হিম করা সন্ত্রাসের মুখে কমিশন হোয়াটস্‌অ্যাপ মনোনয়ন পত্র দাখিলের সুযোগ দিয়েছিল। এবার কি অনলাইনে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া যাবে? এ প্রশ্নের উত্তরে কমিশনারের বক্তব্য, ‘‘কাল, পরশু পরিস্থিতি কোথায় যায় দেখি, তারপর বলা যাবে।’’ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরেও প্রায় একই বক্তব্য কমিশনের, ‘‘কাল থেকে অবস্থা কী হয় দেখি’’। তাঁর কথায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। আশা করি সবাই সিরিয়াসলি নেবেন।
রাজ্যে ৬৩ হাজার ২২৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন, ৯৭৩০টি পঞ্চায়েত সমিতি আসন এবং ৯২৮টি জেলা পরিষদ আসনে এবার নির্বাচনে ৫ কোটি ৬৭ লক্ষ ২১ হাজার ২৩৪ জন ভোটার ভোটদান করবেন। শুক্রবার সকালে প্রতিটি জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনী আধিকারিকরা বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন। তারপর থেকেই মনোনয়ন পত্র দাখিলের কাজ শুরু হয়ে যাবে। নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে রাত ১০টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত কোথাও কোন সভা, সমাবেশ, মিছিল করা যাবে না বলে জানিয়েছে কমিশন। ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে সমস্ত রকম প্রচার বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। অতিরিক্ত বুথ নিয়ে এবার নির্বাচনে মোট বুথের সংখ্যা ৬১ হাজার ৬৩৬টি। সবচেয়ে বেশি বুথ রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়, ৬ হাজার ২২৬টি। ঝাড়গ্রামে সবচেয়ে কম, ১ হাজার ৪৫টি। কালিম্পঙে বুথ রয়েছে ২৬৩টি এবং দার্জিলিঙে ৫১৪টি। ভোটারের নিরিখেও এগিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এই জেলায় ভোটার রয়েছেন ৫৭ লক্ষ ৭৪ হাজার ৪৮২ জন। তারপরেই র‍‌য়েছে মুর্শিদাবাদ, এই জেলায় ভোটার ৫১ লক্ষ ৪ হাজার ৩২৯ জন। সবচেয়ে কম ভোটার আলিপুরদুয়ারে, ১১ লক্ষ ৭ হাজার ৮০ জন। তারপরেই রয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর। এই জেলায় ভোটার রয়েছেন ১১ লক্ষ ৫৭ হাজার ৭১৭ জন। পাহা‍‌ড় দার্জিলিঙে ভোটার ৩ লক্ষ ৮৭ হাজার ৯৫২ জন এবং কালিম্পঙে ভোটার রয়েছেন ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৯৩২ জন।
শুক্রবার থেকে মনোনয়ন পর্ব শুরু হওয়ার অর্থ রাজ্যে ৬৩ হাজারের বেশি আসনে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার জন্য সময় পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৬ দিন। সেক্ষেত্রে অশান্তি, হাঙ্গামা শুরু হয়ে গেলে আরও অসুবিধায় পড়বে বিরোধী দলগুলি। অতীতে ২০১৮ সালে যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল সেখানে গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪৮ হাজার ৬৫০টি আসনের মধ্যে ১৬ হাজার ৮৬১টি আসনে বিরোধীদের প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি। পঞ্চায়েত সমিতিতে ৯ হাজার ২১৭টি আসনের মধ্যে ৩ হাজার ৯৮টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন প্রার্থীরা। জেলা পরিষদে ৮২৫টি আসনের মধ্যে ২০৪টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই প্রার্থীরা জয়ী হন। ও‍‌ই বছর সন্ত্রাসের মাত্রা এমন জায়গায় পৌঁছায় যে প্রায় ২ কোটি ভোটার ভোট দানের সুযোগই পাননি। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী কোন প্রার্থী ছিল না। ওই অভিজ্ঞতা থেকে এদিন সাংবাদিক বৈঠকে সকলেরই একটাই প্রশ্ন, এ রাজ্যের পুলিশ দিয়ে কি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ভোট সম্ভব? কমিশনারের বক্তব্য, রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা রাখা উচিত।
এবারের নির্বাচনে সিভিক পুলিশ এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অস্থায়ী কর্মীদের ব্যবহার করা নিয়ে আপত্তি তুলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছিল সিপিআই(এম)। ফলে এদিন সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রসঙ্গ উঠলে কমিশনার জানান, সিভিক পুলিশ নিয়ে আদালতের একটা রায় আছে। আমরা দেখবো আগে এরা ছিল কি না। যদি আগে থেকে থাকে তাহলে এবারেও থাকবে। আর আগে যদি না থেকে থাকে তাহলে থাকবে না। অস্থায়ী কর্মীদের ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য, আলাদা করে বলার কিছু নেই। জেলায় জেলায় জেলাশাসকরা ঠিক করবেন বিষয়টি। তবে সবকিছুর পর তিনি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment