Bengal education policy

বিজেপি’র শিক্ষানীতি মেনে তিন ভাষা সূত্র প্রয়োগ করছে রাজ্য

রাজ্য

পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনটি ভাষা পড়তে হবে পশ্চিমবঙ্গের পড়ুয়াদের। প্রাথমিকে দু’টি ভাষা থাকবে। তারপর পঞ্চম শ্রেণি থেকে যুক্ত হবে তৃতীয় ভাষা বা ‘থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’। 
মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু দাবি করেছেন যে একজন ছাত্র বা ছাত্রী নিজের পছন্দ মতো প্রথম ভাষা বেছে নিতে পারবে, সরকার তাতে কোন হস্তক্ষেপ করবে না। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা শহরের একজন ছাত্র বাংলাকে তাঁর প্রথম ভাষা হিসাবে নিতে পারেন, আবার দার্জিলিঙয়ের একজন ছাত্র নেপালি ভাষা নিতে পারেন।’’ সংবাদসংস্থা ব্রাত্য বসুকে উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে যে তিনি বলেছেন, ‘‘জেলা এবং এলাকা অনুযায়ী একজন ছাত্র বা ছাত্রী রাজবংশী, অলচিকি বা উর্দুকে প্রথম ভাষা হিসাবে বেছে নিতে পারেন।’’
উল্লেখ্য, সাঁওতালি ভাষার হরফ অলচিকি। 


ব্রাত্য জানিয়েছেন পর্ষদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় গুলির মাধ্যমেই নয়া শিক্ষা নীতির বিভিন্ন দিক কার্যকর করা হবে। তবে শিক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন মাধ্যমিক এবং উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে। পরীক্ষা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদই পরিচালনা করবে। 
রাজ্য সরকার সূত্রে খবর তৃতীয় ভাষার ক্ষেত্রে একজন পড়ুয়া সংস্কৃত, হিন্দি, বাংলা বা কোন বিদেশি ভাষা নিতে পারেন। মুখে কেন্দ্রের নয়া শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করেছে রাজ্য সরকার। মমতা ব্যানার্জি কমিটি গঠন করেছিলেন রাজ্যের আলাদা শিক্ষা নীতি তৈরি করার জন্য। কিন্তু সেই কমিটির রিপোর্ট আজও দিনের আলো দেখেনি।


সোমবার শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে তাতে ঘুরিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তিন ভাষা সূত্রকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। কী বলছে এই তিন ভাষা সূত্র?
জাতীয় শিক্ষানীতিতে হয়েছে যে একজন পড়ুয়া তৃতীয় ভাষা হিসাবে ভারতের যে কোনও ভাষাকে বেছে নিতে পারে, এমনকি সে বিদেশি ভাষাও বাছতে পারে। মানে ধরা যাক, বাংলা এবং ইংরেজি যদি যথাক্রমে প্রথম এবং দ্বিতীয় ভাষা হয় তবে তৃতীয় ভাষা হিসাবে সে তামিল নিতে পারে বা বিদেশি কোনও ভাষা নিতে পারে। খাতায় কলমে শিক্ষানীতিতে বলা হলেও বাস্তবে প্রয়োগ নিয়ে সংশয় রয়েছে শিক্ষা মহলে।
কেন?
কারণ জাতীয় শিক্ষানীতিতে সব শ্রেণিতে সংস্কৃত বাধ্যতামূলকও করা হয়েছে। প্রাচীন ভারতে যে ভাষায় প্রান্তিক, অন্ত্যেজীবী অংশের কোনও অধিকার দেয়নি বর্ণ বিভাজন। বিজেপি আরএসএস’র কাছে জনিশক্ষার প্রসারের থেকে অনেক জরুরি ‘দেবভাষার’ প্রসার।


ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে এই জাল তৈরি করেছে বিজেপি। শিক্ষা নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ষষ্ঠ এবং অষ্টম শ্রেণিতে ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ নামে একটি  প্রোজেক্ট করতে হবে পড়ুয়াদের। এই প্রজেক্টে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার সঙ্গে সংস্কৃত এবং অন্যান্য ধ্রুপদি ভাষার সঙ্গে যোগসূত্রের উল্লেখ করতে হবে।
শিক্ষানীতির ৪.১৮ নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে, সব শ্রেণির জন্য সংস্কৃত বাধ্যতামূলক। ‘Three Language Formula’ র মাধ্যমে সংস্কৃতকে বাধ্যতামূলক করা হবে। তাহলে তামিল পড়তে ইচ্ছা হলে কেউ পড়তে পারবে না। বিদেশি কোনও ভাষা শিখতে চাইলে কেউ পড়তে পারবে না। বাকি যেই ভাষাগুলি পড়ার কথা বলা হচ্ছে সেগুলি কুমিরছানা দেখানোর মতো, বলছেন শিক্ষাবিদরা।


বামপন্থীরা বলছেন, মোদী সরকারের মাধ্যমে আরএসএস’র লক্ষ্য ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ তৈরি করা। যে রাষ্ট্র ধর্মের ভিত্তিতে খেটে খাওয়া মানুষকে ভাগাভাগি করবে। আবার বড় মাপের কর্পোরেট মালিকদের নিশ্চিন্ত ছায়াও জোগাবে। জোট বেঁধে প্রতিবাদ করা যেখানে অন্যায়। এই রাজনীতি এবং সমাজের পক্ষে শিশু মনে সম্মতি তৈরির প্রাথমিক ধাপ হলো ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০’।
আর এই রাজ্যে তৃণমূল বিজেপি’র একনিষ্ঠ অনুগামীর মতো সেই নীতিই প্রয়োগ করছে।

Comments :0

Login to leave a comment