বইকথা
পরিবেশ দিবসে সুন্দরবন ভাবনা
প্রদোষষকুমার বাগচী
নতুনপাতা
সুন্দরবন! মানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার! নামেই গা ছম ছম করে। এটাই বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ। এই ব-দ্বীপে কেবল বাঘই থাকে না, বাঘ-কুমীর-নদী-জঙ্গলের নোনা হাওয়া মাটিতেই সুন্দরবনের বাদাবনে থাকে মানুষও। আজ থেকে আনুমানিক ২৪০০ বছর ধরে বাদাবনের আশেপাশে মানুষ বসতি করে রয়েছে। এভাবেই জীবজগতের সাথে মিলেমিশে দুঃসাহসিক জীবন কাটাতে অভ্যস্ত সেখানকার মানুষ। প্রকৃতির কোলে অবস্থান করে তৈরি করেছে তাদের নিজেদের সংস্কৃতি। এটাই বিশ্বের একমাত্র ব-দ্বীপ যা একই সঙ্গে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ এবং ‘বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ’-এর স্বীকৃতি আদায় করেছে।
সেই সুন্দরবনের প্রকৃতি আজ বিপন্ন। যার সূচনা সংগঠিতভাবে শুরু হয়েছিল ব্রিটিশদের হাতে। তারাই প্রথম প্রকৃতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুন্দরবন ধ্বংসের প্রাথমিক আয়োজন সেরে রেখেছিল। বাঘ হরিণ মেরে বাদাবন কেটে চাষের জমি বাড়ানো থেকে শুরু করে বসতির সংখ্যাও বাড়িয়েছিল রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনায়। একটা সময়ে সুন্দরবনে বাঘ ছিল অন্তত ৪০ হাজার। এখন সেই সংখ্যা আমাদের আতঙ্কিত করে। আজ ভারতের অংশের সুন্দরবন অঞ্চলে বাঘের সংখ্যা শুনলে অবাক হতে হয়! মাত্র ৯৬! সংখ্যাটাই বলে দিচ্ছে কিভাবে বিঘ্নিত হয়েছে সুন্দরবনের জৈব বৈচিত্র। এভাবেই আড়াইশ বছর ধরে বিপন্ন হয়েছে সুন্দরবন। বিপন্ন হচ্ছে সুন্দরবনের অস্তিত্ব। ম্যানগ্রোভ অরণ্যের যে বিপুল সম্পদ রয়েছে এখানে তা আজ চিহ্নিত হচ্ছে সমগ্র বিশ্বের কার্বণ শোষণ ও অক্সিজের সরবরাহের অন্যতম ভান্ডার হিসাবে। সুন্দরবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের উল্লেখে এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র ও বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে যে একটা দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার সে কথাও আলোচিত হয়েছে বইটিতে। পরিবেশ নিয়ে যাঁরা ভাবেন, বিশেষ করে সুন্দরবন ও তার পরিবেশ নিয়ে জানতে চান তাঁরাও এই বইটি থেকে উপকৃত হবেন।
সুন্দরবন : অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ
শমীক লাহিড়ী। ২য় প্রকাশ। আবুল বাসার বুক সেন্টার। বারুইপুর, ২০২১। ১৫ টাকা।
Comments :0