Independence day special

দেশ বাঁচাতেই চলছে লড়াই দুর্নীতিবাজ দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে

জাতীয় রাজ্য

প্রতীম দে

‘‘পুলিশ চাইলে সব করতে পারে। তারা নাকি চাইলে যে কোন অপরাধীকে মাটির তলা থেকে ধরে আনতে পারে। কিন্তু কই ২০ দিন হয়ে গেলো সন্দেশখালির শাহজাহান শেখকে তো তারা ধরতে পারলো না। আচ্ছা সত্যি বলো তো এরা কি ধরতে পারবে?’’ 
না, কোনও রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রীর কথা নয়। সাধারণ মানুষের মনে এই প্রশ্নটা ঘুরছে।
দুর্নীতি আর দুষ্কৃতী চক্র কিভাবে ফাঁপা করে দিচ্ছে সাংবিধানিক গণতন্ত্রকে, বারবারই সে প্রশ্ন এসেছে আলোচনায়। আসছে এবারও, ৭৫তম সাধারণতন্ত্র দিবসের মুখেও। সাধারণতন্ত্র বা গণরাজের সাংবিধানিক ধারণা সঙ্কটে পড়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র এবং সংবিধান নিয়ে অনাস্থা তৈরি করছে দুর্নীতি-দুষ্কৃতী চক্রের রাজনীতি। তার সুযোগে বাড়ছে দাঙ্গাবাজের বিচরণ ক্ষেত্র। সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা,  গণতন্ত্রের উলটো অসহিষ্ণু সাম্প্রদায়িক রাজনীতি জমি পাচ্ছে।  
সত্যি তো তাই পুলিশ প্রশাসন চাইলে একজন ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না যে কিনা রোজ ‘ভয়েস মেসেজ’ পাঠাচ্ছে। আদালত নামায় সই করছে। আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ রাখছে। সেই তৃণমূল নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারছে না! মানুষের মনে সন্দেহ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
২০১১ সালে মমতা ব্যানার্জি ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক ফেরার মাওবাদী নেতা, কর্মী যাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ছিল তারা মহাকরণে এসে ধরা দিয়েছেন। আবার সেই মাওবাদী নেতা যারা গোটা জঙ্গলমহল জুড়ে একের পর এক সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকদের খুন করেছিল তারা হয়েছে তৃণমূলের নেতা। যেমন ছত্রধর মাহাত, সুচিত্রা মাহাতো। 
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বহুবার বলেছেন, ‘‘রাজ্যে এমন একটা সরকার তৈরি হয়েছে যারা দুষ্কৃতীদের কেবল মদত দিচ্ছে না, দুষ্কৃতীরা মনে করছে এই সরকার তাদের।।’’ আর তাই পুলিশকে বোমা মারতে বলা তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি দলের সম্পদ।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বার বার বলেছেন যে রাজ্যে দুর্নীতি এবং দুষ্কৃতীতন্ত্র চলছে। রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল গড়া হয়েছে। বামপন্থীদের এলাকাছাড়া করার জন্যই এই ব্যবস্থা করেছে তৃণমূল। তেমনই হয়েছে সন্দেশখালিতে। এদেরই কেউ কেউ এখন বিজেপি’র শীর্ষ নেতা। আসলে শাহজাহান, অনুব্রতরা যেমন একাধিক দুর্নীতিচক্রের মাথায়, তেমনই এরা ভোটের সময় তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনীর সেনাপতির ভূমিকাও পালন করে।
শেখ শাহজাহান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, এলাকার ত্রাসও। সন্দেশখালি, হাড়োয়া, মীনাখার রাজনীতিকে বিরোধী শূন্য করার কারিগর। এই শাহজাহানের নিজস্ব একটা বাহিনী আছে। যারা অস্ত্রে প্রশিক্ষিত বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। তাদের একটা পোশাকি নামও আছে। এই বাহিনী নাকি শাহাজাহান ব্যবহার করে একাধিক অনৈতিক কাজের ক্ষেত্রে। 
আজ ৭৫ তম প্রজাতন্ত্র দিবসে এসে আমরা দেখছি তৃণমূল শাসনে রাজ্যের একাধিক সাংবিধানিক, প্রশাসনিক কাঠামোকে কাজে লাগিয়ে চলছে লুঠ। মানুষের টাকা লুঠ করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের পদকে কাজে লাগিয়ে সন্দেশখালি জুড়ে জমি দখল, বেআইনি অস্ত্র পাচার সব কিছু চালিয়ে গিয়েছে শাহজাহান। আর এখন আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা যাদের কাজ সেই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযুক্তকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার অভিযোগ জোরালো হচ্ছে। 
বাংলায় আইনের শাসন যে শেষ হতে চলেছে বা হবে তার প্রমান পাওয়া যায় যখন ২০১২ সালে সংবিধানের নামে শপথ নেওয়া একজন মুখ্যমন্ত্রী ভবানীপুর থানায় গিয়ে দোষীদের ছাড়িয়ে আনছেন। একজন মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘‘আমি গুন্ডা কন্ট্রোল করি।’’ আবার ২০১৯ সালে ৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন কলকাতা পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়ি সিবিআই রেড করলে তিনি ধর্না দিয়েছিলেন গোটা মন্ত্রিসভাকে সাথে নিয়ে।
২২ জানুয়ারি রাম মন্দির উদ্বোধনের আমরা দেখলাম ভারতীয় সংবিধানের ধর্ম নিরপেক্ষতার পরিচয় ভেঙে খান খান হয়ে গেলো। রামের নামে নরেন্দ্র মোদীকে হিন্দুত্বের পোস্টার বয় হিসাবে তুলে ধরা হলো। এই মোদী ২০১৪ সালে লোকসভায় ঢোকার আগে মাটিতে শুয়ে প্রণাম করেছিলেন।
আরও একটা ঘটনা তুলে ধরা যাক। চলতি বছর নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন হয়েছে। সংসদের কাজ সংবিধান মেনে আইন তৈরি করা। গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ এই সংসদ। এই নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে লক্ষ করা গেলো হিন্দু ধর্মীয় রীতি মেনে আচার বিচার চলছে। ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে সাংবিধানিক পদে থেকে চলছে রীতি পালন। সাধুদের আশীর্বাদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দন্ড হাতে নিয়ে প্রবেশ করছেন সংসদে। ধর্মীয় রীতি অনুসারী দণ্ড রয়েছে, কিন্তু ন্যায়ের দণ্ড কোথায়?
গুজরাট আর কেন্দ্রের বিজেপি সরকার একযোগে শাস্তির মেয়াদ ফুরানোর আগে খুনী এবং ধর্ষকদের মুক্তির ব্যবস্থা করেছে। সুপ্রিম কোর্টে তথ্য গোপন করেছে। বিলকিস বানোর ধর্ষক এবং তাঁর শিশু সহ পরিবারের সদস্যদের ছাড়ানোর তৎপরতা। 
সে কারণেই সংবিধান, সাংবিধানিক গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে শামিল রয়েছে দেশবাসী বড় অংশ। ৭৫ তম সাধারণতন্ত্র দিবসে সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করে আসলে গণরাজ রক্ষার লড়াইয়ে নামার শপথ নিতে হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment