Panchayat vote 2023

রক্ত ঝরেই চলেছে রাজ্যে

রাজ্য

 রক্তাক্ত বাংলা। এখনও নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর্ব শেষ হয়নি, নির্বাচন ঘোষণার পরে সবে দশ দিন পার হয়েছে, এর মধ্যেই রাজ্যে ৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে রাজনৈতিক হিংসায়। শনিবার রাতে কোচবিহারের দিনহাটায় খুন হয়েছেন এক ব্যক্তি। নিহত শম্ভু দাসের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা ধারালো অস্ত্রের কোপে তাঁকে খুন করেছে। নিহত যুবকের বউদি পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি’র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দিয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরে রবিবার ভোরে বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হয়েছেন আরিফ মোল্লা নামের এক যুবক। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, রোজগার না থাকায় তৃণমূল নেতাদের নির্দেশে তিনি বোমা বাঁধছিলেন। 
গত ৮ জুন রাজ্য নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত নির্বাচনের সূচি ঘোষণার পরেই বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা দিতে তৃণমূলের একের পর এক সশস্ত্র হামলায় বহু মানুষ জখম হয়েছেন, প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। দক্ষিণবঙ্গের ক্যানিং কাকদ্বীপ ভাঙড় থেকে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম, মালদহের সুজাপুর, উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া, কোচবিহারের দিনহাটা সহ বিভিন্ন জায়গায় হিংসাত্মক ঘটনা সংবাদের শিরোনামে চলে এসেছে। রাজ্যপাল মাঠে নেমে পড়েছেন, কলকাতা হাইকোর্টে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামাতে বলেছে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কিছুতেই রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনতে রাজি নন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বে হিংসাশ্রয়ী হামলাকে ও প্রাণহানির ঘটনাকে ‘ছোট ঘটনা’ এবং ‘নিজেদের মধ্যে বিবাদ’ বলে দেখাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সরকারে আসার পরেই মানুষের মৃত্যুকে ‘ছোট ঘটনা’ বলেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। পঞ্চায়েতের মনোনয়ন পর্বে মৃত্যুর মিছিল দেখেও তিনিই বলেছেন, ‘৭৩-৭৪ হাজার বুথ রাজ্যে, তার মধ্যে ৩টে জায়গায় ঝামেলা হয়েছে। তাও নিজেদের মধ্যে বিবাদের জেরে। আমাদের দল এতে কোনোভাবেই যুক্ত নয়। পঞ্চায়েতের ইতিহাসে এগুলো নতুন কিছু নয়। সিপিএমের আমলে এর থেকে অনেক বেশি মৃত্যু হয়েছিল। পঞ্চায়েতে এত নিচু স্তরে ভোট, কখনও কখনও একই বাড়ির চারজন ভোটে দাঁড়িয়ে যায়।’ এভাবেই মানুষের জীবনের মূল্যকে তুচ্ছ করে দিয়ে হিংসায় উসকানি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বামপন্থীদের হুমকি দিয়েছেন, ‘নন্দীগ্রামে এখনও খুঁজলে লাশ পাওয়া যাবে। নিজেদের প্রতিরোধ করুন, নইলে কিন্তু এক হাতে তালি বাজে না।’
সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিত্বের এই মনোভাবের কারণেই কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর নির্দেশ দিলেও তা পালন করেনি সরকার। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার প্রথম দিনে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামাতে হাইকোর্টের নির্দেশের বিরোধিতা না করলেও মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব জানার পরেই কেন্দ্রীয় বাহিনীতে আপত্তি জানিয়েছে। রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশন মিলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশের বিরুদ্ধে। রাজ্যের মানুষের পয়সায় সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়া হচ্ছে যাতে বাহিনী না আসে, মানুষকে জীবন হাতে করে ভোটকেন্দ্রে পাঠাতে। 
এই নিরাপত্তাহীনতাই প্রমাণিত করে শনিবার রাতে প্রাণ গিয়েছে দিনহাটার শম্ভু দাসের। দিনহাটা ২ নং ব্লকের কিসামত দশগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের টিয়াদহ এলাকায় গভীর রাতে বিজেপি প্রার্থীর দেওর শম্ভু দাসকে বাড়ির সামনেই মাটিতে ফেলে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির বাবা নরেন দাস বলেন, আমার মেজো ছেলের বউ বিজেপি’র হয়ে প্রার্থী হয়েছে তাই ছোট ছেলে শম্ভুকে তৃণমূল খুন করেছে।
গত ৮ জুন রাজ্য নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত নির্বাচনের সূচি ঘোষণার পরেই মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের রতনপুরে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হয় ফুলচাঁদ শেখ নামের এক কংগ্রেস কর্মীর, আহত হন কবিরুল শেখ নামে আরও এক ব্যক্তি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি ঐ খুনের জন্য তৃণমূলকে দায়ী করে রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ করেছেন। ১৫ জুন মনোনয়ন জমার শেষদিনে আরাবুল বাহিনীর হামলায় দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় ভাঙড়ে। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজারে। দেদার বোমাবাজি ও গুলি চলে। মৃত্যু হয় তিন জনের। ওইদিনই মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে মোজাম্মেল শেখ নামের এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন। ১৭ জুন মালদহের সুজাপুরে মোস্তফা শেখ নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। নবগ্রাম এবং সুজাপুরের নিহত দুই ব্যক্তি তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলেই প্রাণ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ কংগ্রেসের। নিহতরা যে দলেরই সমর্থক হোন না কেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের প্রাণ রক্ষায় আগ্রহী নন বলেই কি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টে ছুটেছেন?
 

Comments :0

Login to leave a comment