মলয়কান্তি মণ্ডল- আসানসোল
‘‘মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে চোরেরা। লোহা, বালি, কয়লা- এই অঞ্চলে সবেতেই চুরির ব্যবস্থা। চোরেরা বুঝেছে জনগণ সঙ্গে নেই। পালটা লড়াই জোরালো বলেই ভোট লুট সহজ হবে না।’’
চতুর্থ দফার ভোটের আগে এমনই জানাচ্ছেন সিপিআই(এম) পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি। এই জেলাতেই ১৩ মে ভোট আসানসোল এবং বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে। আসানসোলে সব কয়টি বিধানসভা কেন্দ্রই এই জেলায়।
আসানসোলে প্রার্থী জাহানারা খান। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সভাপতি। এই অঞ্চলের প্রাক্তন বিধায়ক। জাহানারা কোলিয়ারি শ্রমিক পরিবারের সন্তান। বাবা ছিলেন কোলিয়ারি শ্রমিক আন্দোলনের নেতা। কোলিয়ারি অঞ্চলে এমন কথা আছে, খনি শ্রমিকের মেয়ে এবার সংসদে কেন যাবে না।
সাতটি বিধানসভা চষে ফেলছেন জাহানার। চেনা এলাকা। জনতার সাড়ায় মিলেছে ভরসা। গুরুত্ব দিচ্ছেন খাদান এলাকায় ধস আর গ্যাসের সমস্যায়। বহু বাড়ি বিপন্ন হয়েছে কেউ ক্ষতিপূরণ পায়নি। জোর দিচ্ছেন বেকারত্বের সমস্যায়। বেসরকারিকরণে বাড়ছে বেকারত্ব। চাহিদা কমছে অর্থনীতিতে। আর জোর দিচ্ছেন পানীয় জলের প্রকল্পে।
জাহানারা বলছেন, ‘‘এই এলাকায় বালি মাফিয়ারা সক্রিয়। বালি খনন হচ্ছে নদীর বুকে। পানীয় জলের ভরসা যে নদী, নেমে যাচ্ছে তার জলের স্তর। তার ওপর হয়নি নতুন একটিও পানীয় জলের প্রকল্প। যেখানে যাচ্ছি মা-বোনেরা এই সমস্যার কথা বলছেন। বলছেন, কিছু করতে হবে।’’
দুই নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে রাস্তাযয় দেওয়া বোর্ডে জানানো হয়েছে, বারাণসী পাঁচশো কিলোমিটার। শ্রমিকদের অভিযোগ, এখানকারই চিত্তরঞ্জনের রেল কারখানার কাজও চলে যাচ্ছে বারাণসীতে বেসরকারি হাতে। এই রাস্তাতেই দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট, ডিভিসি। আশেপাশে বেসরকারি কারখানা একাধিক। বামফ্রন্টের সময়ে এসেছিল, তার বেশ কয়েকটা আবার বন্ধ।
আসানসোলে থেকে ২০১৯’ র নির্বাচনে জিতেছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। তখনও প্রতীক পদ্ম। ২০২১’র বিধানসভায় তিনি ফের প্রার্থী টালিগঞ্জে। এবার প্রতীক ঘাসফুল।
এখন সাংসদ তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা। প্রার্থী এবারও। সিনেমায় তাঁর ভারী গলায় ‘খামোশ’ অতি আলোচিত। ঘটনা হলো লোকসভাতেও বড় সময় প্রায় চুপ থেকেছেন তিনি।
তৃণমূল সরকারে আসীন হওয়ার পর থেকে বিজেপি লাফিয়ে বেড়েছে এলাকায়। তৃণমূল প্রার্থী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া পাশের কেন্দ্র বর্ধমান-দুর্গাপুর ছেড়ে চলে এসেছেন এখানে।
সিপিআই(এম) সাংগঠনিক স্তরে জোর দিয়েছে বিজেপি এবং তৃণমূলের চরিত্র চেনানোর প্রচারে। বলা হয়েছে, দুই শক্তিই একই নৌকার যাত্রী। সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক বলছেন, বিজেপি-কে জব্দ করতে তৃণমূল বা তৃণমূলকে জব্দ করতে বিজেপি, দু’টি চিন্তার কোনওটিই কাজের নয়। সব স্তরে এই বোঝাপড়া তৈরি করা হয়েছে। রাজনৈতিক স্তরে প্রতিরোধের ভিত্তি এই বোঝাপড়া।
চ্যাটার্জি বলছেন, ‘‘বুথরক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়া হয়েছে। লুটের কোনও চেষ্টা হলে প্রতিরোধে নামতে তৈরি রয়েছে বাহিনী। এগারো বছরের কিছু বেশি সময় সমানে অত্যাচার, ঘর ভাঙা, বাড়িছাড়া হয়ে থাকতে থাকতে এখন অভ্যস্ত সিপিআই(এম)। খোলা মাঠ ছাড়ার প্রশ্নই নেই।’’
জাহানারাও প্রচারে বলছেন সে কথাই। তিনি বললেন, ‘‘মানুষের সমস্যা নিয়ে সংসদে সরব হতে হবে। বিজেপি-কে দেখেছে। রঙ বদলে তৃণমূলে গেছে। আর তৃণমূলের প্রার্থী তো আগে বিজেপি’র সাংসদ ছিলেন। এক ফুল বেচছে দেশ, আরেক ফুল বেচছে রাজ্যকে। মানুষ বামপন্থীদের দেখেছেন। বামপন্থী সাংসদদের দেখেছেন। আমরা আশাবাদী।’’
ছবির ক্যাপশন-আসানসোলের বাঁশড়ায় প্রচারে জাহানারা খান। রয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক রুনু দত্ত সহ বামপন্থী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। ছবি: প্রিতম ঘোষ।
Comments :0