এক বুক অভিমান নিয়ে নিঃশব্দে চলে গেলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, অ্যাপস্-এর দীর্ঘদিনের সদস্য তাপস রায়। রবিবার সকালে কলকাতার বি আর সিং হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৭২। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে বাংলা সঙ্গীত জগতে শোকের আবহ তৈরি হয়। গত ১৩ ডিসেম্বর বারাসত শ্রীরামকৃষ্ণ মঠে এক অনুষ্ঠানে গীতি আলেখ্য পরিবেশন করেন। তারপর বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল। অবস্থা জটিল হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত শুক্রবার রাত থেকে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। অবশেষে রবিবার তিনি প্রয়াত হন। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে অ্যাপস্-এর সম্পাদক সৈকত মিত্র পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। প্রয়াত রায়ের ছেলে কলকাতায় না থাকায় সোমবার হাসপাতাল থেকে মরদেহ আড়িয়াদহের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর স্থানীয় শ্মশানে শেষ কৃত্য হয়।
প্রায় দু’হাজার গানের স্রষ্টা তাপস রায় রেলে চাকরি করতেন। পোশাকী নাম রাধেশ্যাম রায়। তবে বাংলা সংস্কৃতি মহলে তাপস রায় নামেই সর্বধিক পরিচিত ছিলেন। বসিরহাটে জন্ম। লেখাপড়া সেখানেই। শিক্ষাজীবন শেষ করে চলে আসেন কলকাতায়। সুখেন্দু গোস্বামী, ইন্দুভূষণ রায়, জগদীশ বসু, কমল বসু, রবীন ব্যানার্জির কাছে গান শিখেছেন। কণ্ঠসঙ্গীত শিল্পী হলেও প্রচুর গান লিখেছেন, সুর করেছেন। তাঁর লেখা-সুরে গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আরতি মুখোপাধ্যায়, অনুরাধা পাড়োয়াল, অনুপ জালোটা, ইন্দ্রাণী সেন, শ্রীকান্ত আচার্য, দীপশ্রী সিনহা, অমৃক সিং অরোরা, সনজিৎ মণ্ডল, সৈকত মিত্র, পরীক্ষিৎ বালা, জোজো সহ প্রায় সত্তরজন শিল্পী। ১৯৭৯ সালে তাঁর কণ্ঠে প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়। আকাশবাণীর নিয়িমত শিল্পী এবং গীতিকার ছিলেন।
অপমান, যদিও নাগরিক, জয় পরাজয়, আর্তনাদ, হিরের শিকল, অনুরাধা, জবাব, ব্রোকেন ড্রিম সহ ১১টি বাংলা ছবির সহকারী সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। তাঁর নিজের কণ্ঠে ১২৫টি গানের রেকর্ড রয়েছে। ভক্তিগীতি, আধুনিক, লোকগীতি, হাসি, দেশাত্মবোধক ও বাংলা ছায়াছবির জন্য গান লিখেছেন। দীর্ঘদিন মুম্বাইতে রবীন ব্যানার্জি, ভবেশ গুপ্ত’র সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ‘শিল্পীর খোঁজে’-এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। প্রয়াত শিল্পীর স্ত্রী, এক পুত্র, পুত্রবধূ বর্তমান।
Comments :0