ONE NATION ONE ELECTION

এক ভোটের কমিটিতে অধীর থাকবেন না

জাতীয়

CPIM BJP RSS TMC WEST BENGAL POLITICS BENGALI NEWS INDIAN ELECTION CONGRESS ADHIR CHOWDHURY ONE NATION ONE ELECTION

সন্দেহই সত্যি হলো। ‘এক-দেশ, এক-ভোট’ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে ‘‘যত দ্রুত সম্ভব’’ সুপারিশ জানাতে নয়া কমিটি গঠনের আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি শনিবারই প্রকাশ করে দিলো মোদী সরকার। এদিনের গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি সদস্যদের নামের তালিকার পাশাপাশি কমিটির কাজের এক্তিয়ার ও শর্ত হিসেবে যা যা উল্লেখিত হয়েছে তাতেই সরকারের আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট, কোনমতে একটি ‘লোক-দেখানো’ কমিটি গড়ে তড়িঘড়ি এবং একতরফাভাবে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা আমূল বদলে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আরএসএস-বিজেপি সরকার।

এদিনের বিজ্ঞপ্তির কথা জানা মাত্রই সরকারি কমিটির সদস্যপদ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন কমিটিতে বিরোধী পক্ষের একমাত্র সদস্য অধীর চৌধুরী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ঝটিতি চিঠি লিখে লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘এই কমিটির চূড়ান্ত সুপারিশ কি হবে তা আগে থেকেই ঠিক করা রয়েছে। আপনাদের ঘোষিত প্রক্রিয়া পুরোপুরি ‘আই-ওয়াশ’। তাই এই  কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করতে আমি অপারগ।’’

এর আগেই এদিন সরকারি গেজেটে ‘‘যত দ্রুত সম্ভব’’ সুপারিশ জানানোর শর্তে ৮ সদস্যের কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা কেন্দ্রীয় সরকার। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন এই কমিটির সদস্য হিসেবে থাকছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী, রাজ্যসভায় প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ, অর্থ কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এনকে সিং, লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল সুভাষ কাশ্যপ, আইনজীবী হরিশ সালভে এবং প্রাক্তন মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার সঞ্জয় কোঠারি।

বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি সদস্যদের নাম ঘোষণার সঙ্গেই বলা হয়েছে, ‘‘কিভাবে লোকসভা সহ দেশের সব রাজ্য বিধানসভা, পৌরসভা এবং পঞ্চায়েতের নির্বাচন একসঙ্গে করা যায় তা নিয়ে সুপারিশ জানাবে এই কমিটি।’’ এব্যাপারে মোদী সরকারের অতি-তৎপরতা স্পষ্ট করে বিজ্ঞপ্তিতে লক্ষ্যণীয়ভাবে জানানো হয়েছে, এই কমিটি ‘‘এখন থেকেই’’ কাজ শুরু করবে। সুপারিশও জানাতে হবে ‘‘যত দ্রুত সম্ভব’’।

একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল ‘বিশেষ আমন্ত্রিত’ হিসেবে কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবেন। আইন বিষয়ক সচিব নীতেন চন্দ্র এই কমিটির সচিব হিসেবে কাজ করবেন।

কমিটির কাজ হিসেবে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘‘দেশে একযোগে নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে এই কমিটি সম্ভাব্য আইনী পরিবর্তনগুলি খতিয়ে দেখবে এবং সুপারিশ করবে। এজন্য সংবিধান ছাড়াও জনপ্রতিনিধিত্ব আইন সহ যেসব আইন ও বিধিতে সংশোধনী আনতে হবে, সেসম্পর্কে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ জানাবে এই কমিটি।’’ শুধু তাই নয়, তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘‘এব্যাপারে রাজ্যগুলির অনুমোদনের প্রশ্নে সংবিধানে কোন সংশোধনী প্রয়োজন কিনা তা-ও জানাবে নবগঠিত কমিটি।’’ পাশাপাশি ‘‘প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় ত্রিশঙ্কু আইনসভা, অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ অথবা দলত্যাগ অথবা এধরনের যে কোন সমস্যায় কি করণীয়, তা বিশ্লেষণ এবং সুপারিশ’’ করতেও বলা হয়েছে কমিটিকে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘‘সমস্ত ব্যক্তি, প্রতিনিধি বা অন্য সকলের মতামত শুনে কমিটির সুপারিশ চূড়ান্ত করতে হবে।’’ তবে দেশে চলতি নির্বাচনী ব্যবস্থা আপাদমস্তক বদলে দেওয়ার মতো এত বড়ো একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহল যেভাবে অস্বাভাবিক তাড়াহুড়ো শুরু করেছে, তাতে ‘‘সকলের মতামত’’ দেওয়া বা নেওয়ার কোন সুযোগই থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে। 


মোদী সরকারের গোপন উদ্দেশ্য প্রকাশ্যে এনে এদিন অমিত শাহের উদ্দেশে অধীর চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম এবং গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে জানলাম, ‘এক-দেশ, এক-ভোট’ সংক্রান্ত কমিটিতে আমাকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। এই কমিটির শর্তাবলী দেখেই বোঝা যাচ্ছে সবকিছুই পূর্বনির্ধারিত। এই কমিটি পুরোটাই লোক-দেখানো। তাই দ্বিধাহীনভাবে জানাচ্ছি, এই ধরনের একটি কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে আমি অপারগ। সাধারণ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে যেভাবে সাংবিধানিক বৈধতা সম্পর্কে সন্দিহান, অবাস্তব এবং পরিকাঠামোর দিক থেকে রূপায়ণের অযোগ্য একটি ভাবনা আচমকা দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কেই গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে। তাছাড়া রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতাকে যেভাবে কমিটিতে রাখা হয়নি, তা সংসদীয় গণতন্ত্রকে ইচ্ছাকৃত অপমান বলেই আমি মনে করি।’’

বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, আসন্ন লোকসভা ভোটের মুখে বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশেই এই তৎপরতা শুরু করেছে মোদী সরকার। দেশজুড়ে অসহনীয় দারিদ্র্য, পেট্রোল-ডিজেল-গ্যাস-খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বেনজির বেকারত্ব, সরকারি মদতে কর্পোরেট আদানি-আম্বানির দুর্নীতি, মণিপুরে বল্গাহীন হিংসা নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার প্রশ্নগুলি এখন মোদী সরকারকে তাড়া করে ফিরছে। তাই ভোটের মুখে মানুষের নজর ঘোরাতেই এই পুরোনো প্রস্তাব আবারো হাজির করেছে আরএসএস-বিজেপি’র সরকার। প্রতিবারই ভোটের আগে কোন না কোন ‘চমক’ হাজির করা আরএসএস-বিজেপি’র পুরোনো কৌশল। 


পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, ভারতের শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত নড়বড়ে করে দিতে সঙ্ঘ পরিবারের বহুদিনের পরিকল্পনাও কাজ করছে এই পদক্ষেপের পেছনে। তাই বেনজিরভাবে একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে ‘লোক-দেখানো’ কমিটি গড়া হয়েছে। কমিটির ‘‘পূর্বনির্ধারিত’’ সুপারিশ দ্রুত প্রকাশের পরেই তড়িঘড়ি সংসদের বিশেষ অধিবেশনে ‘এক-দেশ, এক-ভোট’ সংক্রান্ত নয়া বিল পেশ এবং পাশ করিয়ে নেওয়া হতে পারে। 

সম্ভবত সেই কারণেই সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার কথাও গত শুক্রবার ঘোষণা করে দিয়েছে সরকারপক্ষ। আগামী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসবে বলে জানানো হয়েছে। সংসদীয় রীতিনীতি নস্যাৎ করে বিরোধীদের বক্তব্য রাখার সুযোগ না দিয়েই সেখানে ‘একসঙ্গে ভোট’ বিল এবং বিতর্কিত অভিন্ন দেওয়ানি বিধি পাশ করিয়ে নেওয়া হতে পারে। কারুর কারুর সন্দেহ, সঙ্ঘ পরিবারের কর্মসূচিগুলি পাশ করিয়ে নেওয়ার পরে এবারের বিশেষ অধিবেশনের শেষলগ্নে বর্তমান লোকসভা ভেঙে দিয়ে সাধারণ নির্বাচন এগিয়ে আনার মতো চমকপ্রদ ঘোষণাও হয়ে যেতে পারে। 
 
 

Comments :0

Login to leave a comment