Unbelievably overpriced onions

পেঁয়াজের দামেই চোখে জল, সবজি অগ্নিমূল্য

জাতীয়

পেঁয়াজ কাটা তো দূরের কথা, দাম শুনলেই এখন মানুষের চোখে জল এসে যাচ্ছে। পেঁয়াজের কেজি একশো টাকা ছুঁই ছুঁই! রসুনের কেজি পুজোর আগেই ৩০০ টাকা ছাড়িয়েছিল। এখন ৪০০-র কাছাকাছি। একই সঙ্গে বেড়ে চলেছে নিত্যদিনের কাঁচা সবজির দাম। হেলদোল নেই রাজ্য সরকারের। 
বাজারে আলু থেকে সবজির দাম বাড়ার বহরে সাধারণ মানুষ রোজকার হেঁশেল কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। এই দাম বাড়ার কারণ জানতে নবান্ন থেকে ঠিক হয়েছিল টাস্ক ফোর্স বাজারে বাজারে ঘুরবে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলবে। মঙ্গলবার টাস্ক ফোর্স’র কয়েকজন সদস্য কলকাতার তিনটি বাজারে গিয়েছিলেন। তাঁরা জেনেছেন, পেঁয়াজ ৮০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। আলু ৪০ টাকার বেশি। অন্যান্য সবজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এই তিনটি বাজার ঘুরে টাস্ক ফোর্স’র সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলের দাবি, ‘‘দাম একটু বেড়েছে। আমদানি কম হওয়ায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। তবে কলকাতার পাইকারি বাজারগুলিতে কয়েকদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ ঢুকবে। দাম কমে যাবে।’’ 
তবে কোলে মার্কেটের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা ঠিক উলটো কথা বলছেন। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমদানি এবছর কম এটা ঠিকই। কিন্তু পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি দরে রাখা যায়। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এর ফল ভোগ করছেন সাধারণ খুচরো ক্রেতারা। সাধারণভাবে এরাজ্যে পেঁয়াজ উৎপাদনের ওপর এখনও সেরকম গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যে পেঁয়াজ এরাজ্যে উৎপাদন হয় তার সংরক্ষণেরও কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে পেঁয়াজের জন্য ভরসা করে থাকতে হয় মহারাষ্ট্রের নাসিকের ওপর। এবছর আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি হওয়ার কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। তার সঙ্গে এই দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই।’’
কোলে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা যুক্তি দিয়েছেন, আমাদের রাজ্যে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি আলু উৎপাদন হয়। তাহলে গ্রামাঞ্চলে চন্দ্রমুখী আলু ৩৫ টাকায় মানুষকে কিনতে হচ্ছে কেন? সেই আলুই কলকাতার বাজারে ৪০ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ এবং আলু ব্যবসায়ীরা বেশ কিছুদিন আলু ধরে (গুদামে) রাখতে পারেন। এই ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করছেন পেঁয়াজ এবং আলুর দাম। সরকার যদি এই ব্যবসায়ীদের দিকে একটু নজর দেয় তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কিন্তু সরকার উদাসীন। টাস্ক ফোর্স’র সদস্যরা কোলে মার্কেটেও গিয়েছিলেন। তাঁরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারপর এই সদস্যরা জানিয়েছেন, নাসিক যে পেঁয়াজ রাজ্যে আসে তার পরিমাণ এবছর কমেছে, ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে কয়েকদিনের মধ্যে আমদানি স্বাভাবিক হবে দাম কমবে।
দেশের অধিকাংশ রাজ্যে পেঁয়াজের চাহিদা আছে। সবজির চাহিদা আছে। এরাজ্যে তৃণমূল পরিচালিত সরকার যে নীতি নিয়ে চলছে অন্যান্য রাজ্যগুলিতে বিজেপি পরিচালিত সরকার সেই একই নীতি নিয়ে চলছে। বাজারের ওপর সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না, ফড়েরা তাদের মতো ব্যবসা করবে। ফলে দেশজুড়েই পেঁয়াজ এবং সবজির দাম বাড়ছে। গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর তাদের হিসাবে বলেছে, গত এক বছরে শুধু তরিতরকারির দাম ৪২.১৮ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজ, আলু, রসুন এবং আদা।
অক্টোবর মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নবান্নে এই দাম বৃদ্ধির কারণ বিশ্লেষণে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকের সময় চন্দ্রমুখী আলুর দাম ছিল ২৫ টাকা। পেঁয়াজ ছিল ৩৫ টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরই আলুর দাম এখন হয়েছে ৪০ টাকা, পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা। শীতের সবজি বাজারে আসছে। বিশেষ করে ফুলকপি এবং দেশি টমেটো। ছোট ফুলকপি এখন বাজারে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। অন্যন্য সমস্ত সবজির দাম ৬০ টাকার ওপরে। এর ফলেই মানুষ সবজি কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। একইভাবে ভোজ্য তেলের দাম লিটার প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা করে বেড়ে গিয়েছে। মে মাসে সরষের তেলের দাম ছিল ১২৫ টাকা। এখন সেই তেলের দাম হয়েছে ১৬৫ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের ইচ্ছামতো লিটার প্রতি তেলের দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। সোয়াবিন তেলের পাউচও ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে বেড়ে গিয়েছে। ভোজ্য তেল এখন অগ্নিমূল্য। কয়েকমাস আগে লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে এই তেল কোম্পানিগুলি নির্বাচনী বন্ড মারফত রাজনৈতিক দলগুলিকে টাকা দিয়েছে। রাজনৈতিক দলকে দেওয়া টাকা মানুষের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে তেল কোম্পানিগুলি।

Comments :0

Login to leave a comment