israel-hamas war

গাজায় মুষলধারে বৃষ্টি বাড়ালো শরণার্থীদের দুর্দশা

আন্তর্জাতিক

দক্ষিণ গাজায় ইজরায়েলের হামলার সঙ্গেই বৃষ্টিতে জেরবার প্যালেস্তিনীয়রা। মঙ্গলবার রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়। তাতে বহু শরার্থীর কোনোমতে মাথা গোঁজার পলিথিনের আস্তরণটুকুও ছিঁড়ে যায়। 
লাগাতার বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে মুওয়াশি এলাকা। দক্ষিণে উপকূলবর্তী একফালি জমিতেই হানাদাররা শরণার্থীদের থাকতে বাধ্য করেছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে খান ইউনিস শহরের দুটি বহুতলে ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) রকেট হামলা চালায়। মাসের শুরুতেই গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে আইডিএফ আক্রমণ শুরু করে। 
পাশাপাশি খান ইউনিস এবং রাফা সীমান্তের কাছে একটি বাড়িতে সেনার আক্রমণে ২-৮ বছরের দুই বালক প্রাণ হারায়। মারা যান ৮০ বছরের বৃদ্ধা ও বছর তিরিশের এক যুবতী। 
নিহতদের আত্মীয় মহম্মদ আল-বেইয়ুক অভিযোগ করেন, রাতে নাসের হাসপাতালে হামলায় আহত একটি শিশু এবং তার দাদামশায় মারা যান। ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর তরফে অবশ্য এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। 
অন্যদিকে প্যালেস্তাইন ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর সশস্ত্র শাখা আল-কুদস ব্রিগেডের সঙ্গে সংঘর্ষে এক কর্নেল সহ ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর অন্তত ১০ সেনার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার উত্তরের গাজা সিটিতে আইডিএফ’র গোলানি ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডের সঙ্গে প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর লড়াই হয়। বুধবার আইডিএফ’র তরফে এই কথা জানানো হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় লাগাতার ইজরায়েলী হামলায় ১৮,৬০৮ জন প্যালেস্তিনীয় নিহত হয়েছেন। মৃতদের ৭০ শতাংশের বেশি মহিলা ও শিশু। আহত ৫০,৫৯৪ জন। বুধবার আইডিএফ’র থেকে অবশ্য গাজায় নিহতের সংখ্যা ১,১৪৭ জন বলেই এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
ইজরায়েলের নিদারুণ আক্রমণে উত্তর গাজার অধিকাংশ অঞ্চল ছেড়ে প্যালেস্তিনীয়রা চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। একটি কর্পোরেট সংবাদ সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে, বর্তমানে গাজার থেকে ৮৫ শতাংশের বেশি বাসিন্দাই সরে গেছেন। তাঁদের একটি বড় অংশ ভিড় করেছেন গাজার দক্ষিণে মিশর সীমান্তের লাগোয়া রাফায়।
বর্তমানে উত্তর গাজা ও তার আশপাশের অঞ্চলে আইডিএফ’র সঙ্গে হামাস এবং প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির এলাকা দখলের লড়াই সংঘর্ষ চলছে। দীর্ঘ ছয় সপ্তাহ অবিরত আক্রমণ করেও শহরটির দখল নিতে ব্যর্থ আইডিএফ। শিজিয়াহতে ভয়াবহ সংঘর্ষের বিষয়ে জানান জনৈক স্থানীয়। ‘‘আতঙ্কের মাঝে সময় কেটে চলেছে,’’ সাংবাদিকদের বলেন মুস্তাফা আবু ত্বহা।
ওই প্যালেস্তিনীয় খেতমজুর আরও জানান,‘‘পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। বাড়ি থেকে বেরনোর উপায় নেই। কোথায় যাব ভাবতে পারছি না।’’
গাজার পরিস্থিতি এবং ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর কুকীর্তি নিয়ে সোশাল মিডিয়াতে একাধিক ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার এমনই এক ভিডিওতে দেখা গেছে জায়নবাদী ঘাতকদের উদ্দাম নৃত্য। তার আগে আইডিএফ’র ওই সেনাদের গাজার স্থানীয়দের বাড়ি, বাজার ও দোকানে ঢুকে ভাঙচুর লুটপাট করতে দেখা গেছে। হামাদারদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি শিশুদের খেলনার দোকানও। এর পর লুট করা সামগ্রী একটি ট্রাকে তুলে সেনারা বিদ্বেষমূলক স্লোগান দিতে দিতে চলে যায়।
বাস্তবে এমন ভিডিও সামনে আসা কোনও নতুন ঘটনা নয়। আগেও গাজা এবং অন্যান্য সংঘর্ষকবলিত অঞ্চলে ইজরায়েল ও মার্কিন সেনাদের এমন অমানবিক চরিত্র সামনে এসেছে।
বুধবারেও রাষ্ট্রসঙ্ঘ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গাজায় অবিলম্বে ইজরায়েলের হামলা বন্ধের দাবি করেছেন। মঙ্গলবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদ গাজায় সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব ১৫৩ ভোটে গৃহীত হয়। প্রস্তাবের সমর্থনে ভোট দেয় ভারতও। যদিও তেল আভিভে অতি দক্ষিণপন্থী শাসকরা তা কার্যত নস্যা ৎ করে দিয়েছে। ইজরায়েলের যুক্তি, চলতি পরিস্থিতিতে গাজায় সংঘর্ষবিরতি হলে হামাসের হাতেই অঞ্চলের ক্ষমতা থেকে যাবে। আসলে যা হবে হামাসের জয়।
২০০৭ সাল থেকে গাজার সরকারের রয়েছে হামাস। সমগ্র ভূখণ্ডে গোষ্ঠী অত্যন্ত প্রভাবশালী ও জনপ্রিয়। গাজা এবং হামাসের ভবিষ্যৎ ঘিরে ওয়াশিংটন এবং তেল আভিভের মধ্যেও মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। একটা সময়ে পশ্চিমী কূটনৈতিকদের নজরে ছিল গাজার শাসন ভার হামাসের পরিবর্তে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের প্রশাসক প্যালেস্তিনীয়ান ন্যাশনাল অথরিটি (পিএনএ)’র হাতে তুলে দিতে। কিন্তু গাজার সিংভাগ জনতাই হামাসের একবগ্গা সমর্থক। এছাড়া সম্প্রতি ইজরায়েলের হামলা নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটায় পিএনএ’র রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের জনপ্রিয়তা গাজার বিপন্নদের মাঝে তলানিতে ঠেকেছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment