গাজায় যুদ্ধবন্ধের দাবিতে ফের পথে নামতে শুরু করেছে আমেরিকার জনতা। শুক্রবার সেদেশের রাজধানী শহর ওয়াশিংটন ডিসি’তে যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিশাল মিছিল হয়েছে। তারপরেই প্রকাশ্যে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের কথা বলতে বাধ্য হলেন আমেরিকার উপ রাষ্ট্রপতি কমলা হ্যারিস।
প্রসঙ্গত, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থীর দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন কমলা হ্যারিস। যদিও সরকারি ভাবে তাঁর নাম এখনও ঘোষণা হয়নি।
হ্যারিস এদিন বলেছেন, ‘‘আমি গাজার যন্ত্রণা দেখে নীরব থাকব না। আমি আজ ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে বলেছি, গাজায় যুদ্ধবিরতি চালু করার এটাই সঠিক সময়। গাজার মানুষের যন্ত্রণা আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।’’
৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নিরন্তর হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েলী সেনা। কামানের গোলা এবং ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে সমগ্র গাজা ভূখন্ড। গাজার ২০ লক্ষ জনসংখ্যার প্রায় পুরোটাই গৃহহীন। মৃতের সংখ্যা সরকারি ভাবে ৩৯ হাজারের কোঠা ছাড়িয়েছে।
হ্যারিস বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘ মৃত এবং ক্ষুধার্ত শিশুদের ছবি দেখে নিজেকে ঠিক রাখা কঠিন হচ্ছে। কাতারে কাতারে মানুষ দ্বিতীয়, তৃতীয় কিংবা চতুর্থ বারের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন। এই সঙ্কট থেকে আমরা মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারিনা। আমি চুপ থাকব না।’’
ওয়াকিবহাল মহল যদিও বলছে, গাজায় ইজরায়েলী আগ্রাসন চালানোর ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে আমেরিকার। ৭ অক্টোবরের পরে একাধিক দফায় ইজরায়েলে অস্ত্র পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন। এবং আমেরিকার বাইডেন প্রশাসনের উপ রাষ্ট্রপতি হলেন স্বয়ং কমলা হ্যারিস। তাই তিনি মুখে যাই বলুন, গাজায় ধ্বংসলীলা চলার দায় থেকে তিনি মুক্ত হতে পারেন না।
এই অংশের বক্তব্য, আমেরিকার রাজনৈতিক সমীকরণ অনুযায়ী, অভিবাসীরা ডেমোক্র্যাটদের বড় ভরসা। কিন্তু গাজা সংঘর্ষে বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা তাঁদের নিরাশ করেছে। অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে আমেরিকার প্রতিটি বড় শহরে মিছিল হয়েছে। কলম্বিয়া, হার্ভার্ড সহ আমেরিকার প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পড়ুয়া এবং শিক্ষকরা সামিল হয়েছেন ধারাবাহিক বিক্ষোভে। সব মিলিয়ে জনমতের চাপে ডেমোক্র্যাটরা বাধ্য হচ্ছেন গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিকে তুলে ধরতে।
যদিও হ্যারিসের মন্তব্যকে ভালো ভাবে নেয়নি ইজরায়েল। সেদেশের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘‘গাজায় কোনও যুদ্ধবিরতি সমঝোতা হল গাজাকে ফের একবার হামাসের নেতা ইয়াইয়া সিনওয়ারের হাতে তুলে দেওয়ার সামিল। সমঝোতার সুযোগ নিয়ে হামাস ফের গাজায় শক্তি বৃদ্ধি করবে। এই ফাঁদে পা দেবেন না।’’
ইজরায়েলের জাতীয় সুরক্ষা মন্ত্রী ইটামার বেন গ’ভীর এক্সে লিখেছেন, ‘‘ম্যাডাম ক্যান্ডিডেট, কোনও অবস্থাতেই যুদ্ধ থামবে না! ধন্যবাদ।’’
এই অবস্থায় আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানাচ্ছে, আগামী সপ্তাহে মিশরের রাজধানী কায়রো শহরে আরেকপ্রস্থ আলোচনায় বসবেন ইজরায়েল, মিশর, হামাস, কাতার এবং আমেরিকার প্রতিনিধিরা। সেই বৈঠকে থাকার কথা রয়েছে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র প্রধান বিল বার্নসের। এখন দেখার এই বৈঠকে নতুন কোনও রফাসূত্র বের হয় কিনা।
Comments :0