MD SALIM TAMLUK

সরকারকে কাঠগড়ায় না দাঁড় করালে, অপরাধীরা কাঠগড়ায় যাবে না: সেলিম

রাজ্য

রামশংকর চক্রবর্তী: তমলুক

পশ্চিমবঙ্গ এখন দুর্নীতির মোড়কে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি। পরিকাঠামো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। যারা তদন্ত করবে সেই পুলিশে নিয়োগেও বেনিয়ম। এরাজ্যকে তার পুরনো ঐতিহ্যে ফিরিয়ে আনতে বিকল্প ভাবনা দরকার। বামপন্থীদের দায়িত্ব বেশি। সিপিআই(এম)-কে শক্তিশালী করতে হবে। 
সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরে একথা বলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এই দুর্নীতির প্রসঙ্গেই তিনি বলেন "আমরা কোন দেশে, কোন রাজ্যে বসবাস করছি? যেখানেই খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি, তোলাবাজি সেখানে অপরাধীদের আড়াল করছে সরকার। এখন যা পরিস্থিতি সাধারণ মানুষকে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। কারণ সরকারকে কাঠগড়ায় না দাঁড় করালে, অপরাধীরা আদালতের কাঠগড়ায় যাবে না। হাসপাতাল সহ কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা দিতে পারছে না।  সরকার তাই বলছে রাতে মেয়েদের কাজ করা যাবে না। এটাই দক্ষিণপন্থী ভাবনা। এই ভাবনার বদল ঘটাতে হবে। তার জন্য বামপন্থী মতাদর্শে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। বিকল্প কেবল বৃহত্তর বাম ঐক্য। সেই লক্ষ্যেই এগোতে হবে। যেমন ভাবনা ভেবেছিলেন কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
এদিন সিপিআই(এম) পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির আয়োজনে প্রয়াত দুই নেতার স্মরণ সভা হয় চন্ডিপুর বিনয় স্মৃতি ফুটবল ময়দানে। এই সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনাদি সাহুও। সভাপতিত্ব করেন পার্টির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি। 
সেলিম বলেন, যে দুই নেতার জীবনদর্শন, সংগ্রামের থেকে আকর সংগ্রহ করতে হবে। বামপন্থীরা ব্যক্তিপূজায় বিশ্বাস করে না। কিন্তু নেতৃত্বের রাজনৈতিক সংগ্রামের পরম্পরা অনুসরণ করে, আলোচনা করে তাঁদের জীবনদর্শন। মতাদর্শগত চেতনার উন্মেষ ঘটাতে হবে। বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে সীতারাম ইয়েচুরি ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আদর্শ, লক্ষ্য, দর্শন প্রত্যেকে আত্মস্থ করতে হবে।
সীতারাম ইয়েচুরি প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম বলেন ধর্মনিরপেক্ষ, বিভেদহীন সমাজের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি। তাঁর প্রয়াণ শুধুমাত্র একটি পার্টির কাছে বেদনাদায়ক নয়। সারা দেশের কাছে ক্ষতি। 
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, তিনি কেবল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই ছিলেন না। রবীন্দ্র ভাবনা থেকে মার্কসবাদী চেতনায় এরাজ্যের যুব সমাজের গঠনে অগ্রণী ছিলেন তিনি। সর্বদা গণতন্ত্রকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আজকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, কর্মসংস্থান নেই। মানুষ বিকল্প চাইছে। আবারও বাংলার পুনর্জাগরন ঘটাতে হবে। 
সেলিম বলেন, এই পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা এখন বিজেপি’র বড় নেতা। পুরো পরিবার রাজ্যের মানুষকে ভাঁওতা দিচ্ছে। সংসদে একদলের পরিচয় ছিল আর বাড়িতে আরেক দলের।
মহম্মদ সেলিম বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে আন্দোলনকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। প্রতিনিয়ত সিপিআই(এম)'র নামে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। আমাদেরও সতর্ক থাকতে হবে।
সুজন চক্রবর্তী বলেন, সীতারাম ইয়েচুরির প্রয়াণে সিপিআই(এম) কর্মীরা স্বজনকে হারিয়েছেন। কিন্তু সারা দেশ একজন বিকল্প কন্ঠকে হারিয়েছে। অত্যন্ত মেধাবী জেএনইউ'র ছাত্র নেতা থেকে সিপিআই(এম)'র সাধারণ সম্পাদক, এই দীর্ঘ রাস্তা সহজ ছিল না। জরুরি অবস্থার সময় ছাত্র নেতা হিসাবে তাঁর ভুমিকা আজও মনে রেখেছে দেশ। বর্তমান সময়ে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলিকে একত্রিত করে বিজেপি-আরএসএস’র একনায়কতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলার চক্রান্তকে ধাক্কা দিতে পেরেছেন তিনি। সাংসদ হিসাবেও ভারতের সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতার লড়াই করে গিয়েছেন। 
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রসঙ্গে সুজন চক্রবর্তী বলেন, অস্থির সময়ে এরাজ্যে যুব আন্দোলন গড়ে তোলার নেতা ছিলেন। গণতন্ত্রের ব্যাখ্যায় ভিন্নমতকে প্রাধান্য দেওয়া বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছ থেকে শিক্ষনীয়।

Comments :0

Login to leave a comment