MUKTADHARA : PROBANDHYA : GARNTHAGAR MUKHI : TUSHAR BOSE : 28 AUGHST 2024, WEDNESDAY

মুক্তধারা : প্রবন্ধ : পাঠককে গ্রন্থাগার মুখী করা‌ যায় কিভাবে! –একটি “দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ ও‌ পত্র-পত্রিকা প্রদর্শনী”-র ইতিকথা।। : তুষার বসু : ২৮ আগস্ট ২০২৪, বুধবার

সাহিত্যের পাতা

MUKTADHARA  PROBANDHYA  GARNTHAGAR MUKHI  TUSHAR BOSE  28 AUGHST 2024 WEDNESDAY

মুক্তধারা : প্রবন্ধ

পাঠককে গ্রন্থাগার মুখী করা‌ যায় কিভাবে! –একটি “দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ ও‌ পত্র-পত্রিকা প্রদর্শনী”-র ইতিকথা।।

তুষার বসু

প্রাচীন ইতিহাসের সাথে বর্তমানের সংযোগ সূত্র হিসেবে কাজ করে গ্রন্থাগার। যদিও উত্তরাধুনিকতাক্রান্ত A.I এর যুগে পিডিএফ এর দৌলতে গ্রন্থাগার গুলিতে পাঠকের সংখ্যা কমেছে। বাঙালির শিক্ষা-সংস্কৃতির উজ্জ্বল উদ্ধার হতে পারে পাঠক ও গ্রন্থাগারিকের অভাবে ক্রমশ ধুঁকতে থাকা গ্রন্থাগারগুলি।১২৫ বছরের দোড়গোড়ায় মাজুর পাবলিক লাইব্রেরী।একদা হাওড়া জেলার বিভিন্ন গ্রন্থাগার গুলির মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিল এই লাইব্রেরী। যেখানে বসেছিল বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের আসর।তারপর পেরিয়ে গিয়েছে অনেক বছর।সরকারি উদাসীনতা ও প্রযুক্তির যুগে ডিজিটাল লাইব্রেরীর চল প্রচলিত হওয়ায়।পাঠক অভাবে বন্ধ হয়ে যেতে‌ বসেছে বহু গ্রামীণ গ্রন্থাগার। যার মধ্যে বেশিরভাগ লাইব্রেরীতেই‌ নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে দুষ্প্রাপ্য বইয়ের বিপুল সম্ভার।স্মার্টফোনের যুগে লাইব্রেরীগুলিতে কমতে থাকা পাঠকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে মাজু‌ পাবলিক লাইব্রেরী সম্প্রতি আয়োজন করেছিল– “দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ ও পত্র-পত্রিকার” প্রদর্শনী।যাতে আগামীদিনে ইতিচর্চার কৌতূহল থেকে গ্রাম বাংলার ছেলেমেয়েরা বেশি করে লাইব্রেরী মুখী হয়। সেজন্যই এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা‌ হয়েছিল।মাজু একসময় হাওড়া জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামের উর্বর ক্ষেত্র ছিল। এখনো লাইব্রেরীতে শোভিত রয়েছে বিপ্লবী সতীসাধন গায়েনের একমাত্র ছবিটি। পনেরো হাজার বই এর উপর বই ও ১৫৮টি পুঁথি রয়েছে এই গ্রন্থাগারে। পুঁথি গুলির মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য —প্রায়শ্চিত্ত তত্ত্ব,
বৃসৎসর্গ, লিঙ্গচর্চা, তন্ত্রসার প্রভৃতি অন্যতম
উপযুক্ত সংরক্ষণ না হওয়ায় পূর্বেই ধ্বংস হয়ে যেতে বসেছে বহু মূল্যবান বই।  কিভাবে পাঠক ফিরবে গ্রন্থাগারে ?এই সুচিন্তিত‌‌ ভাবনা থেকেই ভারতের ৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পাঠক , সদস্য ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিহাস চর্চা বোধ জাগ্রত করতে “দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ ও পত্র-পত্রিকার” একটি অভিনব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল মাজু পাবলিক লাইব্রেরী। প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে (১৫-২২ আগস্ট,২০২৪)এক সপ্তাহ ব্যাপী।প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছিল প্রায় শত খানেক দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য–‘ALBERUNI’S INDIA’,‘BENGAL DISTRICT GAZETTERS HOWRAH’,
‘PARTITIONED AND MINORITIES IN PAKISTAN ’,‘A HISTORY OF ENGLISH LITERATURE ’,‘THE MAKERS OF BRITISH INDIA’‘THE DISCOVERY OF INDIA’,‘Out Line off History of Bengal’,‘নবযুগের সাধনা’,
‘মুদ্রণযন্ত্রের স্বাধীনতা প্রদাতা[লর্ড মেটাকাফের সংক্ষিপ্ত জীবনী]’,‘শ্রীশ্রী চৈতন্য ভাগবত’,‘কাব্য-দর্পণ বাঙ্গালা অলঙ্কার’,‘ভিক্টোরিয়া চরিত’ ,‘ফরাসী বিপ্লবে রুশো’,
‘কমলাকান্তচরিত(ডায়েরি),‘সূর্যসেনের স্বপ্ন ও সাধনা’,‘শহিদ’,‘গান্ধীজীর আত্মকথা’,‘মুর্শিদাবাদের ইতিহাস ’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ‌দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ। গ্রন্থাগারের প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া বইয়ের স্তূপ থেকে সদ্য উদ্ধার হওয়া ১৮১৬ শকাব্দে রচিত রায় বাহাদুর বরদা প্রসাদ বসু ও হরিচরণ বসু সম্পাদিত অষ্টাদশ পুরাণের মধ্যে অন্যতম ‘শ্রীমহাদেবীভাগবতম্।মহাপুরাণম’ বইটির দুটি স্কন্দ এই প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছিল। এছাড়া পুরনো পত্র-পত্রিকা বিভাগে প্রদর্শিত‌‌ হয়েছিল–
‘অমৃতবাজার’,‘বামাবোধিনী’,‘ব্রহ্মবাদী’,‘গৌড়প্রভা’,‘কায়স্থ’,‘তাম্বুলি’,‘বঙ্গবাণী’‘ভারতবর্ষ’,‘বীরভূমি’,‘সৌরভ’ প্রভৃতি দুষ্প্রাপ্য পত্রিকার সংখ্যা। প্রদর্শনীর গ্যালারিতে প্রদর্শন‌ করা হয়েছিল ভারত ইতিহাসের বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্যক্তি ও ঘটনার ছবি ও প্রাচীন বইপত্রের ডিজিটাল ছবি। যার মধ্যে –এজলাশে ক্ষুদিরাম, গান্ধী হত্যা, জালালাবাদ পাহাড় ও চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের ম্যাপ রাখা হয়েছিল প্রদর্শনকারীদের জন্য।৭৬ টি দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ ও ২০টি দুষ্প্রাপ্য পত্রিকা প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছিল এই‌ গ্রামীণ গ্রন্থাগারে।সদ্য শেষ হওয়া প্রদর্শনীটি প্রত্যন্ত এলাকার পাঠক ও স্কুল‌ পড়ুয়াদের মধ্যে বেশ আকর্ষণ জাগিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment