Panchayat vote 2023

একলপ্তে ৩৩৭ কোম্পানি, বাহিনী সঙ্কটে ভোটে জট

রাজ্য

 বাহিনী সঙ্কটে নয়া জট তৈরির আশঙ্কায় এক দফায় পঞ্চায়েত ভোটে। 
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটকেই শেষ পর্যন্ত মান্যতা দিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার রায় দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চ। সেই রায়কে মানতে বাধ্য হয়ে হয়ে গত বৃহস্পতিবার ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠিও পাঠায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু একলপ্তে এই বিপুল বাহিনী রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটে পাঠাতে কেন্দ্র অসমর্থ হওয়ার পরই এক দফার পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রের কাছ থেকে ৮০০ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে এখনও পর্যন্ত ৩১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে আসার ছাড়পত্র মিলেছে। তারসঙ্গে আরও ২২ কোম্পানি যোগ করে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৩৩৭ কোম্পানি বাহিনী আসছে। ফলে বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনীর কী হবে ? যে বাহিনী এখনও পর্যন্ত আসার অনুমতি পাওয়া গেছে তাই দিয়েই কি রাজ্যের এক দফার পঞ্চায়েত ভোট হবে? 
এই প্রশ্নে এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চ থেকে স্পষ্ট কোনও নির্দেশিকা আসেনি। আগামী বুধবার এই প্রশ্নের মীমাংসা সম্ভবত হতে চলেছে। তার আগে এদিন কলকাতা হাইকোর্টেই কমিশনের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বকেয়া ৪৮৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে ফের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কমিশন সূত্রের খবর, বাহিনী চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে রাত পর্যন্ত সেই চিঠির কোনও উত্তর আসেনি। 
একলপ্তে ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়ার মতো বাস্তব অবস্থাও কেন্দ্রের নেই। এদিন কলকাতা হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলার শুনানি পর্বে কেন্দ্রের তরফে উপস্থিত অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল অশোক চক্রবর্তী তাঁর সওয়ালে এই মুহূর্তে বাহিনী সঙ্কটের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। একইসঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশন যদি ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের মডেল অনুসরণ করে সেক্ষেত্রে বাহিনীর সঙ্কট এড়ানো যাবে বলে হাইকোর্টকে অবহিত করেন কেন্দ্রের আইনজীবী।
২০১৩ সালে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ছিলেন মীরা পান্ডে। ওই সময় পঞ্চায়েত ভোট তিন দফায় করতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু বাহিনীর প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে সরকারের এই সিদ্ধান্ত মানতে চাননি তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। রাজ্য সরকার চেয়েছিল প্রথম দফায় ৯টি জেলা তারপরে ৪টি করে জেলায় মোট তিন দফায় ১৭টি জেলায় পঞ্চায়েত ভোট রাজ্যের পুলিশকে দিয়েই করিয়ে নিতে। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর পক্ষ নেয়। কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষে রায় দেন। রাজ্য সরকার ওই সময় ডিভিসন বেঞ্চে যায়। তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন অরুণ মিশ্র। প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিসন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায় খারিজ করে দেয়। এরপর সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে পাঁচ দফায় রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট করার রায় আদায় করে আনেন মীরা পান্ডে।
তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, বুধবার বর্তমান রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছিল। কমিশনের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীন দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করিয়ে প্রধান বিচারপতি কমিশনার দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে পদ ছেড়ে দিতে পর্যন্ত বলেছিলেন। একইসঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ২২টি জেলায় ২২কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার সিদ্ধান্তকে খারিজ করে ২০১৩ সালে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে যত সংখ্যায় কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছিল তার থেকে যাতে কোনোভাবে কম বাহিনী আনা যাবে না বলে রায় দেন।
এখন বাহিনী সঙ্কটে পড়ে এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চ বাহিনীর সংখ্যা নিয়ে কোনও রায় দেয়নি। কিন্তু যেভাবে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে অশান্তির আবহ তৈরি হয়েছে এদিন সেই প্রসঙ্গ বারেবারে উঠে এসেছে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণে। রাজ্যে ২০ হাজারের ওপর প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের সংখ্যা সংক্রান্ত অভিযোগ শুনে এদিন প্রধান বিচারপতি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এমনকি ক্যানিংয়ের মতো ব্লকে একসঙ্গে ২০০-র ওপর প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে ভোট করার জন্য ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের তুলনা বারেবারে উঠে এসেছে বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণে। 
শেষ পর্যন্ত বাহিনী সঙ্কটে পড়ে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট একদফা থেকে বাড়বে কি না তারজন্য আগামী বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারমধ্যে বাকি ৪৮৫ কোম্পানি  কেন্দ্রীয় বাহিনীর রাজ্যে আসার নিশ্চয়তা তৈরি হলে সমস্যা থাকবে না। কিন্তু তা না হলে, কী হবে তার জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে আদালতেই দিকেই। তবে আইনজীবী মহলের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোট ক’দফায় হবে তা ঠিক করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনেরই। ২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশনই আদালতে গিয়ে পাঁচ দফায় ভোট করার রায় আদায় করেছিল। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।
 

Comments :0

Login to leave a comment