Unemployment India

দেড় দশকে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেড়েছে এই বছরে

জাতীয়

লোকসভা নির্বাচনের মুখেই দেশে বেকারত্বের হার গত এক দশকে রেকর্ড হারে বেড়ে শীর্ষ স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। শিক্ষিত বেকারত্বের হার বেড়েছে চড়া হারে। স্নাতক বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। এদিকে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে বেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সাড়ম্বরে দাবি করে চলছেন, তাঁর আমলে দেশের অর্থনীতির প্রসার ঘটছে এবং বেকারত্বের হার কমছে বিপুল হারে। মোদীর দাবি, তাঁর সরকার প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করায় অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে, এতে বেকারত্বের হার কমছে।
কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্য, মোদীর কথায় শিক্ষিত প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের কাজে মিলেছে, অথচ শিক্ষিত স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্ব বেড়ে চলেছে বিপুল হারে— এই হিসাব মেলানো যাচ্ছে না। মোদীর দাবি, গত ছয় বছরে সর্বাধিক হারে দেশে বেকারত্বের হার কমেছে। তবে সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই) বলছে, ২০০৮ থেকে ২০১৩, এই ১৫ বছরের মধ্যে দেশে সবথেকে বেশি বেকারত্বের হার বেড়েছে ২০২৩ সালে। আগে কখনও এই হারে বাড়েনি। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সাল শেষ হলেই ২০২৪ সাল হলো নির্বাচনের বছর। নির্বাচন আসার মুহূর্তে মেয়াদ শেষের বছরে তাই মোদীর দেশের বেকারত্বের হার কমিয়ে দেখানোর প্রয়োজন পড়েছে বলে মনে করছে বিরোধী দলগুলি।
এদিকে বেকারত্বের হার নিয়ে সিএমআইই তার সমীক্ষা রিপোর্টে জানাচ্ছে, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল, এই ১৫ বছরে বেকারত্বের হার সর্বাধিক বেড়েছে ২০২৩ সালে। এই বছরগুলিতে বেকারত্বের হার ছিল যথাক্রমে শতাংশে ৫.১১, ৫.৫৪, ৫.৫৫, ৫.৪৩, ৫.৪১, ৫.৪২, ৫.৪৪, ৫.৪২, ৫.৩৬, ৫.৫৩৩, ৫.৩৭, ৮.০০ (২০২০), ৫.৯৮, ৭.৩৮ এবং ৮.৪(২০২৩)। লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে, করোনা মহামারীর পর থেকে শিল্প-বাণিজ্যে যে বিপর্যয় এসেছে, তাতে কাজের সংস্থান কমে গিয়ে বিপুল হারে বেড়েছে বেকারত্ব। গত দেড় দশকের মধ্যে চলতি বছরে সর্বাধিক হারে পৌঁছে গিয়েছে বেকারত্বের হার। চলতি বছরে বেকারত্বের হার এতোটাই বেশি যে, মহামারীর সময়ে লকডাউনে সমস্ত কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় বেকারত্বের হার বেড়ে যেখানে ৮ শতাংশে পৌঁছে যায়, তার থেকেও বেশি বেড়েছে এবছর বেকারত্বের হার। চলতি বছরে সব স্বাভাবিক হলেও অর্থনীতির হাল যে ফেরেনি, তা বেকারত্বের হারে পরিষ্কার। কারণ, চলতি বছরে বেকারত্বের হার মহামারীর সময়ের হার অতিক্রম করে তা ৮.৭ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেই বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তা আজ আর শোনা যায় না। তবে বিশ্বকর্মা পুজোয় মহা সমারোহে নতুন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নতুন পিএম বিশ্বকর্মা প্রকল্প ঘোষণা হলেও মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে এরকম কর্মসংস্থানের রকমারি প্রকল্পের ফানুস উড়েছে। মোদী পিরিওডিক লেবার সমীক্ষা রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেছেন, গত ছয় মাসে বেকারত্বের হার কমেছে। তাঁর আরও দাবি, ৫ হাজার নতুন আইটিআই তৈরি করায় শিল্প প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ায় কর্মসংস্থান বেড়ে বেকারত্ব কমে গিয়েছে। এদিকে বিশেষজ্ঞের মতে, এই সব প্রকল্প প্রচারের আলোয় কিছুকাল ভেসে থেকেছে। তারপরে আবার যে কে সেই। কোনও নতুন কাজের সন্ধান দিতে পারেনি সেই সব প্রকল্প। যেমন, মোদীর বিপুল ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা। তাতে ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পদ্যোগীদের সহজ ও স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এতে নতুন কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা কাজে দেয়নি। উলটে ব্যাঙ্কের ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পে ঋণ দেওয়ার হার মোদী জমানায় বড় শিল্পের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে। পিএম বিশ্বকর্মায় যে প্রশিক্ষণের কথা বলা হচ্ছে, ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা প্রকল্পে একইভাবে দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে জানানো হয়েছিল। সেই প্রকল্পে কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণ কোনও কাজ বড় একটা এগোয়নি। উলটে বেসরকারি সংস্থাকে এই প্রশিক্ষণের কাজে যুক্ত করায় সরকারি প্রকল্পের অর্থ নয়ছয় হয়েছে। এই জাতীয় প্রকল্পে অর্থ নয়ছয়ের জন্য এখন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু গ্রেপ্তার হয়ে জেলে বন্দি রয়েছেন। মহামারীর সময়ে আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজনা প্রকল্পের নামে নিয়োগকারীকে বিশেষ অনুদান দিয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির প্রকল্প  ঘোষণা করা হয়। এতে অনুদান মিলেছে নিয়োগকর্তার। কিন্তু নিয়োগ বাড়েনি। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেই মোদী ঘোষণা করেছিলেন মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প। দেশি শিল্পকে আত্মনির্ভর করে তার পণ্যের রপ্তানি বাড়িয়ে বিশ্ব বাণিজ্যে ভারতকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে জানানো হয়েছিল। এতে দেশে শিল্পে বিপুল কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে বলেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটেনি। বিদেশে ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি কমেছে। পরিণামে কর্মসংস্থান বাড়েনি, উলটে তা কমে গিয়েছে। প্রচার মেক ইন ইন্ডিয়া-র কম হয়নি। সবটাই মাঠে মারা গিয়েছে।
এদিকে মোদী গত ছয় মাসে বেকারত্বের হার কমছে বলে দাবি করলেও দেখা যাচ্ছে, মহামারীর সময়ের থেকে বেশি হারে বেকারত্বের বেড়েছে স্নাতকদের। স্টেট ওয়ার্কিং ইন্ডিয়া, ২০২৩-এর রিপোর্ট জানাচ্ছে, মহামারীর আগে বেকারত্বের যে হার ছিল, তা মহামারীর পরে কিছুটা কমলেও স্নাতকদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার মহামারী-পূর্ব সময়ের থেকে মহামারী-পরবর্তী সময়ে আরও ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ২৫ বছর বয়সের নিচে স্নাতকদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশ।

Comments :0

Login to leave a comment