সোমবার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল স্নেহা মণ্ডল(৬)। মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত।
তিনি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে যেই সমস্ত দেহ আনা হয়েছিল তাঁদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়ে গেছে। একজনের শরীরে অংশ এসেছিল, তা ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ট্রমাকেয়ারে এখনও ভর্তি রয়েছেন তিন জন। আপাতত তাঁরা স্থিতিশীল। অনেকের শরীর ভিতর থেকেও আঘাত থাকায় তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বোর্ড গঠন হয়েছে।’’
সোমবার রাঙাপানিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেন ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল সেই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত মালদহের চাঁচল-২ ব্লকের ক্ষেমপুর অঞ্চলের গ্রামের ছয় বছরের শিশুকন্যা স্নেহা মন্ডল মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেল। এই মর্মান্তিক ঘটনায় গোটা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দুর্ঘটনার পর গুরুতর অবস্থায় জেনারেল কামরা থেকে স্নেহাকে উদ্ধার করে বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীরা। দ্রুত তাকে ভর্তি করা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।
স্নেহা তার বাবা মনিলাল মন্ডল ও মা ছবি মন্ডলের সাথে শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল। মা এলাকার তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যা। গতকাল তাঁরা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। মা ও মেয়ে গুরুতর আহত হয়। জানা গেছে স্নেহার বুকে একটা ফুটো হয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এজন্য তাকে বেশ কয়েক বোতল রক্ত দিতে হয়। এছাড়া তার পা দুমড়ে মুচড়ে গেছিল। শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফাঁসিদেওয়া ব্লকের নিজবাড়ি এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনায় স্নেহার মা ছবি মন্ডলের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। তাঁর কোমড়ের হাড় টুকরো হয়ে গেছে।
সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘শিশুটির রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। রাতে অপারেশনও করা হয়। কিন্তু তাঁকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। ট্রেন দুর্ঘটনায় সোমবার রাত প্রর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছিল। মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে মালদহের ছোট্ট স্নেহার।
অপরদিকে রেল জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৩ জন রেলকর্মী। তাঁরা ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। মৃতরা হলেন, জলপাইগুড়ির বেলাকোবার বাসিন্দা, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গার্ড আশিস দে(৪৫), মালগাড়ির চালক অনিল কুমার(৪০)। এছাড়াও প্রাণ হারিয়েছেন মালদহে কর্মরত আবগারি দপ্তরের সাব ইনস্পেক্টর শুভজিৎ মালি, কালিম্পঙের মালবস্তির বাসিন্দা কেলক সুব্বা(৩৫), জলপাইগুড়ির ফালাকাটার আমবাড়ির বাসিন্দা মানব বিশ্বাস(৩০), দার্জিলিঙের জয়ন্তী চা বাগানের বাসিন্দা অক্ষয় পান্না(২১), বিহারের বৈশালীর বাসিন্দা বিজয় রায়(৩৫), পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার বাসিন্দা বিউটি বেগম(৪৫) এবং রেলওয়ে মেসেঞ্জার সার্ভিসের শঙ্করমোহন দাস(৫৫)। রাত পর্যন্ত দু’জনকে শনাক্ত করা যায়নি।
এই দুর্ঘটনায় মালগাড়ির চালকের মৃত্যু হয়েছে। আর এই মৃত্যুর পরেই মৃত মালগাড়ির চালককেই কাঠগড়ায় তুলেছে রেল প্রশাসন। মালগাড়ির চালক অনিল কুমার এবং সহকারী চালক মন্নু কুমারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দুর্ঘটনায় চালক অনিল কুমারের মৃত্যু হলেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন সহকারী চালক মন্নু কুমার। রেলের দাবি এক যাত্রীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার অভিযোগের ভিত্তিতে মালগাড়ির চালক সহকারীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তিনি দাবি করেছেন এই বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। রেল কর্মীদের অভিযোগ নিজেদের দোষ ঢাকতে মৃত মালগাড়ির চালককেই কাঠগড়ায় তুলেছে রেল প্রশাসন।
জানা গেছে দুর্ঘটনায় জখম হয়ে সহকারী চালক এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি সুস্থ হলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে রেল সূত্রের খবর।
রেল কর্মচারীদের দাবি, টানা চার রাত ডিউটি করার পর রবিবার রাতে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের রানিং রুমে বিশ্রামে ছিলেন মালগাড়ির চালক অনিল কুমার। রাত প্রায় আড়াইটা থেকে তাঁর ওপর রেল প্রশাসন ফের ডিউটিতে যাবার জন্য চাপ তৈরি করতে থাকে। বিশ্রামে থাকা চালক রাজি হননি। কিন্তু সকাল ৬টা ৪০ মিনিট নাগাদ তাঁকে ডিউটি করার জন্য একপ্রকার বাধ্য করানো হয়েছিল। ভয়ানক দুর্ঘটনার পরে রেলের তরফে এখন রেলকর্মীদের এখন কাঠগোড়ায় তোলা হচ্ছে।
Comments :0