আবহাওয়া দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুর দুটো নাগাদ দানা’র অবস্থান ছিল পারাদ্বীপ থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরে। ধামারা থেকে 'দানা'র দূরত্ব ২১০ কিলোমিটার। সাগরদ্বীপ থেকে ২৭০ কিলোমিটার দূরে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে এগারোটা নাগাদ প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানা আছড়ে প়ড়তে বলে অনুমান আবহাওয়া দপ্তরের। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় দানা ভদ্রক জেলার ধামারা ও কেন্দ্রাপাড়া জেলার ভিতরকণিকার মধ্যে ল্যান্ডফলের সম্ভাবনা। ল্যান্ডফলের সময়-এর গতিবেগ হতে পারে সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে চলেছে পশ্চিমবঙ্গেও। পূর্ব মেদিনীপুরে একই গতিতে অর্থাৎ ১০০ থেকে ১২০কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে বইতে পারে ঝড়। ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
হুগলি জেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। ছবি- অভীক ঘোষ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আবহাওয়া দপ্তরের আধিকারিক সোমনাথ দত্ত সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইবে। পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল বরাবর ২৫ অক্টোবরের সকাল পর্যন্ত এমনই বেগে বইবে ঝোড়ো হাওয়া। এর পর ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হবে।’’
ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় চলছে সচেতনতামূলক মাইকিং। ইতিমধ্যেই আবহাওয়া দপ্তর থেকে হুগলি জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করেছে। ঘূর্ণিঝড় দানা’র ঝাপটে ওলট পালট হতে পারে সব কিছু। তার আগে থেকেই তাই সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে। শুনশান গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাট চত্বর যেন ধর্মঘট চলছে। টিকিট কাউন্টার খোলেনি ঘাটে ঢোকার গেট তালা দিয়ে বন্ধ করা। ঘূর্নিঝড়ে বিপদ হতে পারে সেই আশঙ্কায় যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নবান্নের নির্দেশে জেলা প্রশাসন সব ফেরিঘাট বন্ধ রাখতে বলেছে। বুধবার বিকাল পাঁচটা থেকে উত্তরপাড়া থেকে গুপ্তিপাড়া সব ফেরি সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। এদিন সকাল থেজেই যাত্রীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন ফেরি ঘাট থেকে। দানার প্রভাবে এদিন প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে সকাল থেকে। আকাশ কালো করে আছে চলছে ঝোড়ো হাওয়া। রাস্তা ঘাটে লোকজনের দেখা নেই বললেই চলে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। দোকান পাট খোলেনি অনেক জায়গায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও সন্ধা আটটা থেকে আগামী বন্ধ থাকবে ট্রেন চলাচল এমনটাই জানা গেছে রেল সূত্রে। যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে হাওড়া ডিভিশনে ৬৮টি ট্রেন বাতিল থাকবে বলে জানিয়েছে পূর্ব রেল। হাওড়া বর্ধমান মেন ও কর্ড শাখা, হাওড়া কাটোয়া শাখা এবং হাওড়া ব্যান্ডেল শাখা ও হাওড়া আরামবাগ শাখার আপ ও ডাউন মিলিয়ে ৬৮ টি লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
চুঁচুড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে ফেরিঘাট গুলোর জন্য নির্দেশ জারি করা হয়েছে। ২৩ অক্টবর বিকেল ৫ টা থেকে ২৫ অক্টবর দুপুর ১২টা পর্যন্ত ফেরি ঘাট বন্ধ থাকবে। ভেসেল বা লঞ্চ চলবে না এই সময়ে। পৌরসভার তরফ থেকে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে জনসাধারণকে সচেতন করে প্রচার করা হচ্ছে। বাড়িতে পানীয় জল মজুদ করে রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও মোবাইল সুরক্ষিত স্থানে এবং চার্জ দিয়ে রাখার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। পৌরসভা গুলির পক্ষ থেকে প্রচারে আরো জানানো হচ্ছে যে সমস্ত এলাকায় দূর্গা পূজার প্যান্ডেল এখনো পর্যন্ত খোলা হয়নি সেই প্যান্ডেল গুলি অবিলম্বে খুলে ফেলতে। গঙ্গার তীরবর্তী এলাকায় যাদের মাটির বাড়ি রয়েছে তাদেরকে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
ঝড়ের হাত থেকে বাঁচাতে নৌকাকে নিরাপদ স্থানে নোঙর করে রাখছেন চুঁচুড়ায় মৎস্যজীবীরা। ছবি- অভীক ঘোষ।
স্থানীয় মৎস্যজীবী সঞ্জয় সাহা ও রামপ্রসাদ বিশ্বাসরা জানান আপাতত কিছুদিন নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া বন্ধ রেখেছি। শুনেছি, ডানা নামক ঝড় আছে করতে পারে আমাদের জেলায়। ইতিমধ্যেই আমরা যারা মৎস্যজীবী রয়েছি তারা নিজেদের নৌকা পারে তুলে রেখেছি। বিকেলের দিকে জোয়ার বাড়লে নৌকা গুলোকে আরো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখবো। চুঁচুড়া এলাকাতেই প্রায় তিনশোর বেশি ছোট ডিঙ্গি নৌকা রয়েছে। প্রশাসন আমাদেরকে সতর্ক করেছে আমরা সেই মোতাবেক সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
ঘূর্নিঝড় মোকাবিলায় হুগলি জেলায় একাধিক কন্ট্রোল রুম থেকে চলছে নজরদারী। আঠেরো হাজার বাসিন্দাকে চিহ্নিত করা হয়েছে যাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শিবিরে। শতাধিক শিবির করা হয়েছে খবর জেলা প্রশাসন সূত্রে।
জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের আধিকারীক মাসুদুর রহমান জানান, ‘‘ঝড়ের গতিপ্রকৃতি জানতে দুর্যোগে প্রভাব কতটা জানতে চুঁচুড়ায় জেলা শাসক দপ্তরে সেন্ট্রেল কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পাশাপাশি চারটে মহকুমা হেড কোয়ার্টারে , তেরোটি পৌরসভা এবং আঠারোটি ব্লকেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। শুকনো খাবার, শিশুদের খাদ্য, কমিউনিটি কিচেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হুগলিতে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় নীচু এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে।
হুগলি জেলার কন্ট্রোল রুম ফোন নম্বর ৭০০৩১৯০৫০৭ / ০৩৩-২৬৮১২৬৫২
Comments :0