জানা অজানা
শতবর্ষে সকলের প্রিয় সলিল চৌধুরী
তপন কুমার বৈরাগ্য
নতুনপাতা
সংগীত পরিচালক, গীতিকার, সুরকার, গল্পকার,কবি সলিল
চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ শুরু হয়েছে। স্বর্ণ যুগের এমন
কোনো শিল্পী নেই যারা সলিল চৌধুরীর সুরারোপিত
গান গান নি।এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মুকেশ, মান্না দে,
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়,লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়,
সবিতা চৌধুরী, মহম্মদ রফি,মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় শ্যামল মিত্র।
বিস্ময়কর,বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন
সলিল চৌধুরী।
তিনি দক্ষিণ চব্বিশপরগণা জেলার রাজারপুর সোনারপুরে
১৯শে নভেম্বর ১৯২৫খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।
পিতা জ্ঞানেন্দ্রময় চৌধুরীর কাছে তাঁর হাতে খড়ি।তারপর
কাকা নিখিল চৌধুরীর কাছে সংগীতে তালিম দেন।
রবীন্দ্র ও নজরুল পরবর্তী বাংলা সংগীত জগতে কেউ তাঁর
মতন অবদান রেখে যেতে পারেন নি।
সুদীর্ঘ সংগীত জীবনে তিনি ৭৫টি হিন্দি ছবিতে,৪০টি
বাংলা ছবিতে,২৬টি মালয়ালম ছবিতে সংগীত পরিচালনা
করেন।এছাড়া তামিল, তেলেগু, গুজরাটি, ওড়িয়া,কন্নড়
ছবিরও সংগীত পরিচালক ছিলেন।তিনি ফিলম ফেয়ার,
সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান। তাঁর সংগীত
পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য বাংলা ছবিগুলো হলো-- বাঁশের কেল্লা,
বাড়ি থেকে পালিয়ে, গঙ্গা,আকালের সন্ধানে,কিনুগোয়ালার
গলি, লাল পাথর,হারানের নাতজামাই ইত্যাদি।
তাঁর সুরারোপিত উল্লেখযোগ্য গানগুলো--দূরন্ত ঘূর্ণির এই লেগেছে
তাক,পথ হারাবো বলেই এবার পথে নেমেছি,আমি ঝড়ের কাছে
রেখে গেলাম আমার ঠিকানা,যা যারে যা পাখি,যদি নাম ধরে
তারে ডাকি,শোনো কোনো একদিন,যায় যায় দিন বসে বসে দিন,
মরি হায় গো হায়,ওই সে সবুজ বনবীথিকা,পা মা গা রে সা,
এমনও সঘন বরষায়,পথে এবার নামো সাথী,না যেও না, মন
ময়ূরী ছড়ালো পেখম,রানার চলেছে,অবাক পৃথিবী।
তিনি অসম্ভব ভালো বাঁশি,পিয়ানো ,এসরাজ বাজাতে
পারতেন। তিনি সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখতে পারতেন।
তাঁর কবিতা ছিল সবার কাছে নন্দিত ও প্রশংসিত।
১৯৩৮খ্রিস্টাব্দে তিনি গণনাট্য আন্দোলনের সূচনা করেন।
১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে পরিবর্তন ছবির সংগীত পরিচালক হিসাবে
তাঁর আত্মপ্রকাশ।
ছোটদের জন্য তিনি অনেক কিছু দিয়েছেন। তাঁর কন্যা
অন্তরা চৌধুরী তাঁর লেখা ও সুরারোপিত ছোটদের অনেক
গান গেয়েছেন। যে গানগুলো শিশুদের মনকে অনায়াসে
জয় করে নিতে পারে। এই গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য---না না
পুতুল সোনা কেঁদোনা,তোমাকে ফেলে যাবো না;হাটটিমা টিম
হাটিম হাটিম;এক্কা দোক্কা টেক্কা,ধরো দেখি দড়ি পারবে কি
আমায়,বুলবুল পাখি ময়না টিয়ে, আয় না যা না গান শুনিয়ে;
নাচোতো দেখি আমার পুতুল সোনা।আয়রে ছুটে আয় পুজোর গন্ধ এসেছে ।এই গানগুলো একনিমেষে শিশুদের মন জয় করে নেয়।
তিনি ৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৯৫খ্রিস্টাব্দে পরলোকগমন করেন।
আজ তিনি শতবর্ষে পদার্পণ করেছেন। ছোট থেকে বড় সকলের
প্রিয় ছিলেন তিনি।তাঁর অমায়িক ব্যবহার ভুলবার নয়।
ভারতীয় সংগীতে সলিল চৌধুরীর মতন প্রতিভা সত্যিই বিরল।
বলতে দ্বিধা নেই রবীন্দ্র -নজরুলের পর এমন অসামান্য
সংগীতকার ভারতে আর জন্মগ্রহণ করেন নি।
Comments :0