দুর্গাপুর প্রোজেক্ট লিমিটেড বা ডিপিএল’কে বন্ধ করতে রাজ্যের তৃণমূল সরকার শ্রমিক-কর্মচারীদের গণবদলির নির্দেশ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে ডিপিএল’এর প্রশাসনিক ভবনের গেটে সকাল থেকে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সিআইটিইউ অনুমোদিত ডিপিএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের ডাকে এই বিক্ষোভে অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের শ্রমিকরাও প্রচুর সংখ্যায় শামিল হয়েছিলেন। সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হাজির হয়ে বলেছেন, জমি হাঙরদের জমি দখলের জন্য কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত করেছে তৃণমূল সরকার। তার জন্যই নিয়োগের শর্ত ভেঙে গণবদলি করাতে চাইছে শ্রমিকদের। এর বিরুদ্ধে আদালতে লড়াই হবে, রাস্তাতেও লড়াই হবে। শ্রমিকরা কারখানা ধ্বংসের চেষ্টা মানবেন না।
দুর্গাপুরের গর্ব ডিপিএল তৃণমূলের শাসনে বিপন্ন। এক সময় বহুমুখী উৎপাদনের সংস্থা ছিল ডিপিএল। বর্তমানে মুখ্যত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা। শিল্পের জন্য শিল্প বলে পরিচিত ডিপিএল’কে ধাপে ধাপে তুলে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বুধবার ৩৩২ জন শ্রমিক কর্মচারীকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বদলির নোটিস ধরানো হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থার শ্রমিক-কর্মচারীদের বদলি করা হচ্ছে পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, আসানসোলের সেচ দপ্তর, ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন অনুৎপাদক দপ্তরে। নোটিসে বলা হয়েছে, রিলিজ অর্ডার নিয়ে ২ জনুয়ারির মধ্যে নতুন কাজের জায়গায় গিয়ে চাকরিতে জয়েন করতে হবে। এই নির্দেশে তীব্র শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়েছে শ্রমিক মহলে।
এদিন ডিপিএল প্রশাসনিক ভবনের গেটে সকাল থেকে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়, ডিপিএল’এর সিআইটিইউ ইউনিয়নের সম্পাদক রমাপ্রসাদ মুখার্জি, পঙ্কজ রায় সরকার, ললিত মোহন মিশ্র প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন নরেন শিকদার। মহম্মদ সেলিম এদিন বাঁকুড়ায় খেতমজুর সমাবেশে যাওয়ার পথে ডিপিএল শ্রমিকদের লড়াইয়ের খবর পেয়ে বিক্ষোভস্থলে চলে আসেন। শ্রমিকদের সঙ্গে কথাও বলেন।
সরকারে তৃণমূল আসার পর থেকেই ডিপিএল’এ অন্ধকার ক্রমশ ঘনিয়েছে। ডবলিউবিএসইডিসিএল এবং ডবলিউবিএসইটিসিএল’এর অধীনস্ত হয়েছে ডিপিএল। বহু শিল্পের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল যে সংস্থা, সেই সংস্থাই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। আকাশে ড্রোন উড়িয়ে জমি খুঁজে দেখা হয়েছে জমি হাঙরদের স্বার্থে। ৩০টা বস্তি উচ্ছেদ করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্টেশনের কাছে ৫৫১ একর জমি কুনজরে রয়েছে বলে জানা গেছে। আবাসিক এলাকা খালি করার নোটিস জারি হয়েছে। সমীক্ষক দিয়ে ডিপিএল-এর জমি সমীক্ষা করা হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৬টি ইউনিট ছিল, এখন মাত্র দুটি। একটিতে উৎপাদন হয়, আর একটি মাঝে মাঝে চালানো হয়। পুনর্গঠনের নামে শ্রমিক সংকোচন হয়েছে। চাপানো হয়েছে বাধ্যতামূলক স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প।
এদিকে কারখানার বৃত্ত ছাড়িয়ে জেলা জুড়ে ডিপিএল বাঁচাও দাবিতে পথে নেমেছেন মানুষ। ৪৯৮ জন আধিকারিক নিয়ে ডিপিএল-এ কাজ করছিলেন ১৬৬৪ জন। এদিন আরও ২৮০ জনের স্থানান্তরের নোটিস জারি করার কথা ছিল। কিন্তু তুমুল বিক্ষোভের কারণে কর্তৃপক্ষ এদিন আর নোটিস জারি করার সাহস দেখায়নি। কর্মীদের সার্ভিস বুকের শর্ত অনুযায়ী নিয়োগ কর্তা ডিপিএল। নিয়োগ কর্তার প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোথাও বদলি করা যায় না। এই কারণে শ্রমিকরা বলেছেন, বেআইনি বদলির নির্দেশ মানি না। কারখানার গেটে প্রায় চার ঘণ্টা বিক্ষোভ অবস্থান চলেছে। শুক্রবার ডিপিএল কলোনিতে শ্রমিক কনভেশনের ডাক দিয়েছে সিআইটিইউ। সবগুলি শ্রমিক সংগঠনকে আহ্বান জানানো হয়েছে ওই কনভেনশনে যোগ দেওয়ার জন্য। আগামী লড়াইয়ের কর্মসূচি নেওয়া হবে কনভেনশনে। রমাপ্রসাদ মুখার্জির নেতৃত্বে ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল এদিন ডিপিএল কর্তৃপক্ষের কাছে ডেপুটেশন দিয়েছে।
এদিন মহম্মদ সেলিম বলেছেন, বিজেপি সরকার দুর্গাপুরে এএসপি বিক্রি করে দিতে চায়। তৃণমূল সরকার ডিপিএল, ডিসিএল বন্ধ করে জমি হাঙরদের হাতে তুলে দিতে চায়। দুই সরকারই গড়তে জানে না, ভাঙতে জানে। দুর্নীতির কারণে কারখানা ধ্বংস করা হচ্ছে, যারা ল্যান্ড মাফিয়া, তারাই কোল মাফিয়া, স্যান্ড মাফিয়া, কো-অপারেটিভ মাফিয়া, নানা জায়গায় নানা রকমের ছলচাতুরি করছে। দুবার দুর্গাপুরে এসে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ডিপিএল’এর আধুনিকীকরণ করব। আসলে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জমির মতো এখানেও ডিপিএল বন্ধ করে জমি দখল করতে চাইছে পিসি ভাইপোর লোকেরা। এর বিরুদ্ধে সব শ্রমিকরা এককাট্টা হয়েছেন দেখে ভালো লাগছে। শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়েই এই আক্রমণ রুখতে হবে।
Comments :0