গল্প — নতুনপাতা
নববর্ষে উপহার
সৌরীশ মিশ্র
"ঠাম্মি কোথায় গো মা? ঘরে?" বাড়িতে ঢুকেই সামনে মা-কে পেয়ে তাঁকে প্রশ্নটা করল তিন্নি।
"হ্যাঁ, ওনার ঘরেই আছেন। তবে এখন ঠাম্মিকে ডিস্টার্ব কোরোনা তুমি। রেস্ট নিচ্ছেন উনি। স্কুল থেকে এলে। ফ্রেশ হয়ে নাও। টিফিন করো। ততক্ষণে উনি উঠে পড়বেন। তখন যেও, কেমন?"
"ঠিক আছে মা।" খোলা জুতোগুলো দরজার পাশে রাখা শু-র্যাকটায় রাখতে রাখতে বলল বছর বারোর তিন্নি।
টিফিনে আজ নুডলস করেছিলেন তিন্নির মা। আর, নুডলস তো তিন্নির ফেভারিট খুব। তাই একটু একটু করে তারিয়ে তারিয়ে খেল নুডলসটা সে। তাতে বেশ কিছুটা সময় কেটে গেল। তাই টিফিন করে যখন ও ঠাম্মির ঘরে ঢুকল সে দেখল, ওর ঠাম্মি ঘুম থেকে উঠে পড়েছেন আর বিছানায় আধশোয়া হয়ে কি যেন একটা বই পড়ছেন।
তিন্নির ঠাম্মি অনুরাধা দেবী গত তিন মাস ধরে বেশ অসুস্থ। দু'-দু'টো অপারেশন হয়েছে তাঁর এই সময়ের মধ্যে। বড় দুর্বল শরীর এখন। তাই ডাক্তারের নির্দেশ মতোন বাড়ির বাইরে বেরোনো তাঁর সম্পূর্ণ নিষেধ।
অনুরাধা দেবী দেখলেন নাতনি তাঁর ঘরে ঢুকছে। আর তারই সাথে ওনার এও চোখে পড়ল নাতনির বাঁ হাতে গিফ্ট র্যাপারে মোড়া চৌকো মতোন কি যেন একটা।
"আসো দিদিভাই। এখানে, আমার পাশটায় বসো। স্কুল থেকে কখন এলে? টিফিন খেয়েছো তো?"
"অনেকক্ষণ স্কুল থেকে এসছি ঠাম্মি। মা বলল, তুমি রেস্ট নিচ্ছ। তাই তখন আসিনি। টিফিন করে এলাম।" ঠাম্মির বিছানায় অনুরাধা দেবীর একেবারে কাছ ঘেঁষে বসতে বসতে বলে তিন্নি।
"এটা কি দিদিভাই?" নাতনির হাতে ধরা র্যাপ করা জিনিসটা দেখিয়ে বলেন অনুরাধা দেবী।
"এটা তোমার জন্য ঠাম্মি। আমি এনেছি।" হাতে ধরা বস্তুটি তার ঠাম্মির দিকে এগিয়ে দেয় তিন্নি।
অনুরাধা দেবী স্বাভাবিক ভাবেই অবাক হন বেশ। "আমার জন্য এনেছো! কি?" জিনিসটা হাতে নেন উনি।
"খুলেই দেখো না, কি।"
র্যাপারটা খোলেন অনুরাধা দেবী। আর, মোড়ক খুলতেই দেখেন নতুন বাংলা বছরের একটা পঞ্জিকা। আরো অবাক হন তিনি এই দেখে যে, যে বিশেষ পঞ্জিকাটি তিনি ব্যবহার করে থাকেন সবসময়, সেই পঞ্জিকাটিই এনেছে তার জন্য নাতনি।
অন্যান্য বছর কাছের একটা ম্যাগাজিন স্টল থেকে উনি নিজে গিয়েই নতুন পঞ্জিকা কিনে আনেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে এবছর তা সম্ভব হয় নি। ভেবেছিলেন, দু'-এক দিনের মধ্যেই ছেলেকে বলবেন একটা পঞ্জিকা এনে দিতে। তার আগেই তো এই কাণ্ড!
"তুমি কোথা থেকে আনলে এটা?"
"যে দোকানটা থেকে তুমি কেনো, আমি তো চিনি সেটা, আমাকে কয়েকবার নিয়ে গিয়েছিলে না তুমি, ওখান থেকেই আজ স্কুল থেকে ফেরার পথে কিনেছি ঠাম্মি।"
"বা-বা! কিন্তু ঐ দোকানটা তো তোমার স্কুলে যাওয়া-আসার পথে পরে না। বাবা, মাকে বলে গিয়েছিলে তো?"
"না ঠাম্মি, বাবা-মা কিছু জানে না। বলিনি তো কিছু।"
"তবে টাকা পেলে কোথা থেকে?"
"আমার কাছে পকেট মানি থেকে বাঁচানো কিছু টাকা ছিল। তাই দিয়েই..."
নাতনির ঐ কথা শোনামাত্র নিজেকে যেন ধরে রাখতে পারেন না অনুরাধা দেবী। নাতনিকে টেনে নেন তিনি তাঁর বুকের মাঝে। সস্নেহে হাত বোলাতে থাকেন তিনি তাঁর নাতনির গায়ে-মাথায়। আর তিন্নিও ওর ঠাম্মিকে দু'হাতে জড়িয়ে ধরে আদর খেতেই থাকে।
Comments :0