দিঘার সমুদ্র সৈকতে বাড়ছে জলোচ্ছ্বাস। নিম্নচাপ থেকে, শনিবার বিকেলে, তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি উপকূলের দিকে আরো এগিয়ে আসছে। নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর আরও উত্তাল হয়ে ওঠছে। নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের দিকে।
বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে রবিবার গভীর রাতে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা। বেশ তীব্র আঘাত হানতে পারে এই ঝড়। ক্যানিং থেকে ৪৮০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই গভীর নিম্নচাপ। সাগর দ্বীপ থেকে এই মুহূর্তে নিম্নচাপের দূরত্ব ৩৮০ কিলোমিটার। নিম্নচাপের জেরে দিঘায় বাড়ছে ঢেউ। কলকাতার আকাশে মেঘের আনাগোনা নেই, তবে যে কোনও সময়ই রূপ বদলাতে পারে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা মেঘলা।
গভীর নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে উত্তর দিকে সরবে বলেই খবর। শনিবার সন্ধ্যায় তৈরি হবে ঘূর্ণিঝড়। এই গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেওয়ার পর এর নাম হবে ‘রেমাল’। রেমাল একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ– বালি। এটি ওমানের দেওয়া নাম। জানা গেছে রেমাল নামে আফগানিস্তানে একটি শহর আছে। সেই শহরের নামানুসারেই এটির নামকরণ করা হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস, রবিবার মধ্যরাতে সাগর দ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝখান দিয়ে ঢুকবে 'রেমাল'। সেই সময় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার। রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। ঝড়ের গতি-প্রকৃতির উপর কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই উপকূলের বেশ কিছু এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে প্রশাসন।
প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস পাওয়ার পর থেকে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। ফিরিয়ে আনা হয়েছে মৎস্যজীবীদের। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে হলদিয়া, কাঁথিতে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় তৈরি বাংলাদেশ প্রশাসনও। সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী জেলাগুলিতে দুর্জোগ মোকাবিলায় ও ঝড়ের গতি-প্রকৃতির উপর কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে।
চুঁচুড়া লঞ্চঘাটে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে টলার।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, “প্রবল ঘূর্ণিঝড়” হতে পারে ‘রেমাল’। এই ঘূর্ণিঝড়টি সর্বপ্রথম যেখানে আঘাত হানবে, সেখানের বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০-১৩০ কিলোমিটার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে উপগ্রহ চিত্রে যে অবস্থান দেখা যাচ্ছে তাতে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের ওপর দিয়েই অতিক্রম করার সম্ভাবনা বেশি।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বভাস রেমালের জেরে রবিবার মূলত উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রচুর বৃষ্টি হবে। সেইসঙ্গে ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী, নদীয়া, কলকাতায়। এই জেলাগুলিতে জারি লাল সতর্কতা। ওইদিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুরে। এই দুই জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি।
ভারী বৃষ্টি হতে পারে দুই মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান, বীরভূম, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুরে। বাকি জেলাগুলিতে হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর।
দুর্যোগ মোকাবিলায় সতর্ক কলকাতা বিমানবন্দর। প্রশাসন সূত্রে খবর, বিপর্যয় মোকাবিলা দল, বিদ্যুৎ দপ্তর, পূর্ত দপ্তর প্রস্তুত রয়েছে। উপকূলে বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে মাইকে সচেতনতা প্রচার। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালগুলিকেও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় হুগলী জেলা প্রশাসন বন্ধ করেছে ফেরি সার্ভিস, গঙ্গা তীরবর্তী এলাকায় চলছে মাইকিং প্রচার। শনিবার হুগলী চুঁচুড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে গঙ্গা তীরবর্তী এলাকায় চলছে মাইকিং প্রচার। বাঁধের পাড়ের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়া জন্য আবেদন করা হচ্ছে পৌরসভার পক্ষ থেকে। সেই মতো যে মৎস্যজীবীরা নৌকা নিয়ে গঙ্গায় মাছ ধরতে যান তাঁদেরকেও গঙ্গায় মাছ ধরতে নিষেধ করা হচ্ছে। ২৫ মে থেকে ২৭ মে অবধি তিন দিন জেলার সমস্ত ঘাটে বন্ধ থাকবে ফেরি চলাচল। সেই মতো নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে নবান্ন থেকে।
শনিবার সকালে দেখা যায় চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া, গুপ্তিপাড়া সহ বিভিন্ন ফেরিঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে ফেরিঘাটের কাউন্টারে। তবে বহু যাত্রীর কাছে পরিষেবা বন্ধের খবর না থাকায় ঘাটে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে তাঁদের। সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, ঘুরপথে যেতে হচ্ছে গন্তব্যে।
Comments :0