গল্প
স্বপ্ন ভাঙার শব্দ
কৃশানু ভট্টাচার্য্য
মুক্তধারা
শিবশঙ্করের বাবার কাছে সৌদামিনীর আবদার ছিল পুকুরের সামনে উত্তর দিকে যেন একটা বড় জানলা থাকে। শিব শংকরের বাবা কিংবা তার ছেলেরা যখন স্কুলে বা অফিসে সৌদামিনী সেসময় ওই জানলার ধারে বসে কোনদিন উল, কোনদিন কুরুস কাটা নিয়ে বুনে যেতেন তার অজস্র স্বপ্ন। দিন গড়ালো। মাস পেরিয়ে বছর। বছর গড়িয়ে যুগ। শিব শংকরের বাবা গেলেন ২০১৯ এ। শিবশঙ্কররা দুই ভাই। ছোটটা তো সেই যে শিকাগো গেল আর ফিরে এলো না। তিন চার বছর অন্তর আসে। মাঝেমধ্যে দু একটা ভিডিও কল। শিবশঙ্করের ও বয়স হচ্ছে। এত বড় বাড়ি। সামলানোর ঝক্কিও তো কম নয়। ওর একটা মেয়ে। সেও ঐ বিদেশে পাড়ি দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। তাই অবশেষে পারিবারিক সিদ্ধান্ত ঠাকুমার নামে রাখা বাড়িটা প্রমোটিং হবে।
স্বপ্ন দেখার জানলা ছেড়ে সৌদামিনী এখন পুকুরের ওধারের একটা ফ্ল্যাট বাড়ির তিনতলায়। জানলা আছে তবে এটা দক্ষিণ মুখো। লক্ষ্মী পূজার পরের দিন দুপুরে সেই জানলার ধারে আলসে সময় কাটাতে বসেছিলেন সৌদামিনী। চারপাশ কাঁপিয়ে তখন চলছে, তার শাশুড়ির নামে তৈরি করা সেই বাড়িটি ভাঙার কাজ। সেকালে বাজার সেরা জিনিসপত্র দিয়ে বাড়িটা বানিয়ে ছিলেন শিবশঙ্কর। তার মাশুল গুনছে ওই শ্রমিকের দল। চারপাশে প্রচন্ড শব্দ। বাড়ি ভাঙার শব্দ। আর সৌদামিনীর কানে বাজছে তার স্বপ্ন ভাঙার শব্দ। নির্মম সেই শব্দ সৌদামিনীর কান দিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছে একটা চরম আর্তনাদে পরিণত হলো।
মাতৃহারা শিবশংকর ঠিক করেছেন প্রোমোটার কে বলে বাড়িটার নাম রাখবেন সৌদামিনী অ্যাপার্টমেন্ট।
Comments :0