গল্প
বই দুটো
সৌরীশ মিশ্র
নতুনপাতা
"প্রত্যুষ স্যার আজ ক্লাসে যে বই দুটোর কথা বললেন পড়েছিস তুই বইগুলো?" শুভকে জিজ্ঞেস করল নীল।
নীল আর শুভ দুই বন্ধু হাঁটছে পাশাপাশি স্টেশন রোডের ফুটপাথ ধরে। ওরা থাকে একই পাড়ায়। পড়েও একই স্কুলে। ওদের এখন ক্লাস এইট। দু'জনই খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একই সাথে স্কুলে যায়-আসে। এখন যেমন স্কুল থেকে ফিরছে ওরা বাড়ি। আর কিছুক্ষণ এই ফুটপাথ ধরে গেলেই প্রথম যে গলিটা ঢুকে যাচ্ছে বাঁদিকে, সেই গলিতেই ওদের দু'জনেরই বাড়ি।
"হ্যাঁ পড়েছি তো।" নীলের করা প্রশ্নের উত্তরে বলে শুভ।
"খুব ভালো বই, না?"
"খুবই ভালো।"
দুই বন্ধুর মধ্যে আলোচনা হচ্ছে যে বই দুটো নিয়ে সেগুলো হোলো- "দ্য ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া" আর "লেটার্স ফ্রম এ ফাদার টু হিজ় ডটার"। ওদের ক্লাস টিচার প্রত্যুষ সেন। ইংরেজি পড়ান। আজ ক্লাসে চিলড্রেন্স ডে-র কথা তুললেন। ক'দিন আগে গেছে চিলড্রেন্স ডে। আর, সেই বিষয়ে বলতে বলতে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর কথায় এসেছিল ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর কথা। এবং, সেই সময়ই প্রত্যুষ সেন উল্লেখ করেন নেহরুর ঐ দুই বিখ্যাত বই দুটোর।
"বই দুটোর কথা আগে কতো শুনেছি। কিন্তু, পড়া হয় নি। দেখি, কাল স্কুলে গিয়ে বই দুটো পাই কিনা লাইব্রেরিতে।" বলে নীল।
"লাইব্রেরিতে খোঁজ করতে হবে কেন তোকে! আমার কাছেই তো দুটো বই-ই আছে। ঠাকুরদা গিফ্ট করেছিল আমায়। আজই আমি তোকে দিয়ে দেবো। তুই ধীরে সুস্থে পড়িস।" বলে একটুক্ষণ থামে শুভ। কি যেন ভাবে একটু। তারপর বলে, "তুই আজ খেলতে যাবি তো মাঠে?"
"হ্যাঁ, যাবো তো।"
"তাহলে তো হয়েই গেল। আমি বাড়ি গিয়েই বই দুটো বের করে রাখবো। তোকে যখন খেলতে যাওয়ার জন্য ডাকতে যাব তোর বাড়ি, তখনই তোকে দিয়ে দেবো বই দুটো।"
"থ্যাংক্স রে।"
"থ্যাংক্স ট্যাংক্স আবার কি রে! আমরা বন্ধু না!" বলেই নীলের পিঠে মজা করে একটা চাপড় মারে শুভ।
নীল-ও উল্টে শুভর পিঠে চাপড় মারতে যায়। তবে পারে না, শুভ তড়িৎ গতিতে একটু দূরে সড়ে যাওয়ায়।
"পারলি না তো?" বলেই শুভ হেসে ওঠে।
নীলের ঠোঁটেও তখন হাসি।
দুই বন্ধু একে অপরের কাঁধে হাত রাখে। তারপর, বড়রাস্তা ছেড়ে গল্প করতে করতে ঢুকে পড়ে ওরা ওদের পাড়ার গলিতে।
Comments :0