আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছাড়ছেন জহর সরকার। আগামী সপ্তাহে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে তাঁর ইস্তফাপত্র দেবেন রবিবার চিঠি লিখে তাঁর সিদ্ধান্তের কথা জানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য জহর সরকার। চিঠিতে, তিনি তার নিজের দল তৃণমূলের অনুগ্রহপ্রাপ্ত এবং দুর্নীতিকারীদের অপ্রত্যাশিত উচ্ছৃঙ্খল মনোভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন ‘‘আমি কিছু জিনিস মেনে নিতে পারি না, যেমন দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিকদের। আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন স্নাতকোত্তর শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে নৃশংস ধর্ষণ ও খুনের কারণে রাজ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে তার মধ্যেই এবার রাজ্যসভার সাংসদের পদত্যাগ পত্রে সরকার লিখেছেন যে জনগণ ক্ষোভ দেখে বোঝা যায় তৃণমূল সরকারের প্রতি তাঁরা আস্থা হারিযেছেন। সরকার তথ্যমূলক কোনও বক্তব্য পেশ করলেও মানুষের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। আমার বয়সে আমি সরকারের বিরুদ্ধে এমন ক্ষোভ এবং অনাস্থা আগে দেখিনি। আরজি করের ঘটনায় সরকারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আরজি কর হাসপাতালে ভয়াবহ ঘটনার পর থেকে আমি এক মাস ধরে ধৈর্য সহ্য করেছি। মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে আপনার সরাসরি হস্তক্ষেপের আশা করছিলাম। জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে সরাসরি কেন কথা বলছেন না মুখ্যমন্ত্রী।
’’ চিঠিতে, তিনি বেশ কয়েক মাস ধরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা বলতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন আপনি আমাকে তিন বছর ধরে সংসদে বাংলার সমস্যাগুলি উত্থাপন করার যে সুযোগ দিয়েছেন তার জন্য আমি আবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, তবে আমি সাংসদ হিসাবে থাকতে চাই না। কেন্দ্র ও রাজ্যে দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমার প্রতিশ্রুতি সহজভাবে অ-আলোচনাযোগ্য। দুর্নীতি, আরজি কর-সহ একাধিক ইস্যুতে মমতা ব্যানার্জির অবস্থান নিয়ে সরবও হয়েছেন তিনি।
রাজনীতি থেকে পিছিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করে, তিনি লেখেন আমি শীঘ্রই দিল্লিতে যাব এবং রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে আমার পদত্যাগের প্রস্তাব দেব এবং নিজেকে রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে সরিয়ে নেব।"
রাজ্যসভার সাংসদ মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে, ৩১ বছর বয়সীকে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তার যন্ত্রণা ঢেলে দিয়েছেন। তিনি লিখেছএন যদি আমরা নিরপেক্ষভাবে আন্দোলনটি বিশ্লেষণ করি, আমরা দেখতে পাব যে আন্দোলনটি যতটা নির্যাতিতদের পক্ষে, সেইসাথে রাজ্য সরকার এবং শাসক দলের বিরুদ্ধেও পরিচালিত হয়েছে। "অতএব, কৌশল পরিবর্তন করতে হবে নতুবা সাম্প্রদায়িক শক্তি রাজ্য দখল করবে।"
২০২১ সালে প্রাক্তন আমলাকে দলের সাংসদ পদে নির্বাচিত করে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীর শূন্য আসনে জহর সরকার সাংসদ হয়েছিলেন। কিন্তু পার্থ চ্যাটার্জি সহ তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের কোটি কোটি টাকার কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর এদিনই তিনি সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রথম মুখ খুলেছেন। যেদিন মমতা ব্যানার্জি দলের ছাত্র সংগঠনের সভা থেকে ২০২৪ সালে বিজেপি-কে তাড়ানোর লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন, সেদিনই জহর সরকারের বিস্ফোরক মন্তব্য, ‘‘এদেরকে যদি এখনই বর্জন না করে, এক সাইড পচা শরীর নিয়ে ২০২৪-র লড়াই করা খুবই মুশকিল হবে।’’
রাজনৈতিক মহলের সেই সময় বক্তব্য, তৃণমূল যে আগাগোড়া দুর্নীতিতে যুক্ত দল, তা জহর সরকারের অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা ও তৃণমূলের নেতাদের বান্ধবী-যোগের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই তিনি কার্যত মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন। আসলে দুর্নীতির ঘটনা এখন প্রকাশ্যে আসায় প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও বিপন্ন বোধ করছেন। তাঁর সামাজিক অবস্থান নিন্দার মুখে পড়ার ফলেই তিনি রাজ্যসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
Comments :0