ঘূর্ণিঝড়ের ফলে কলকাতা, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়ার পাশাপাশি হুগলিতেও লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রবিবার এবং সোমবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়ার দপ্তর।
বৃষ্টির সঙ্গে ঘন্টায় ৯০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে।তাই জেলায় এখন রিমাল মোকাবিলায় চূড়ান্ত প্রস্তুতি।ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে,নদীর জল ফুলছে।রেমাল থেকে বাঁচতে ফেরী পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে আগেই।এবার ভেসেল গুলোকে চেন দরি দিয়ে বেঁধে রাখা হল।
হুগলির গুপ্তিপাড়া থেকে উত্তরপাড়া গঙ্গায় যতগুলো ফেরিঘাট আছে ফেরি ঘাটে পরিবহন দপ্তরের নির্দেশে লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে গতকাল থেকে। রবিবার উত্তরপাড়া কোন্নগর ফেরিঘাট গুলোতে দেখা গেল জেটির সঙ্গে ভেসেলগুলোকে চেন দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে।ফেরি ঘাটের কর্মীরা জানাচ্ছেন,জোয়ারে গঙ্গার জল অনেকটাই ফুলেছে। সকাল থেকেই ঝোড়ো হাওয়া বইছে। রেমাল ল্যান্ড ফল করবে রাতে।ঝড়ের বেগ থাকবে ভালোই।সে সময় যাতে ভেসেল জলে ভেসে না যায় সেই কারনে চেন মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে জেটির সঙ্গে।জেটি বাঁচাতে সব ভেসেলকে জেটিতে বাঁধা যাবে না তাই বিকল্প জায়গায় বেঁধে রাখতে হচ্ছে। হুগলি জেলা শাসক দপ্তরে ২৪ ঘন্টার কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।যেখান থেকে জেলার পরিস্থিতির উপর নজর রাখবেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।পুরোসভা গুলোতেও খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
কৃষি প্রধান জেলা হুগলী তে ইতিমধ্যেই রেমাল এর কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রবিবার সকাল থেকেই জেলা জুড়ে বইতে শুরু করেছে ঝোড়ো হাওয়া। ঝড়ের হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করতে সিঙ্গুর সহ জেলার সমস্ত কৃষি প্রধান এলাকায় জেলা কৃষি দফতর থেকে মাইকাং প্রচার চলছে। অন্যদিকে রেমাল এর কারনে চিন্তার ভাঁজ চাষীদের কপালে।
রবিবার মধ্যরাতে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়তে চলেছে ঘূর্নিঝড় রেমাল। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী রাজ্য সরকার একাধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। উদ্যান পালন দফতর ও কৃষি দফতর থেকে একাধিক সতর্কীকরণ বার্তা দেয়া হয়েছে কৃষকদের উদ্দেশ্যে। প্রতিকুল আবহাওয়া থেকে সবজি মাচা ও পানের বরজকে রক্ষা করতে শক্ত করে বেঁধে রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে মাইকিং প্রচারের মাধ্যমে। বৃষ্টির জল যাতে জমিতে না জমে তার জন্য আল পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সবজিও অন্যান্য ফল বিশেষত পেপে, কলা জাতীয় ফসল যেগুলো ঝরে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে সেই ফসল গুলি যাতে ঝড়ে সহজে ভেঙে না পড়ে তার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পরিপক্ক ফসল দুর্যোগ আসার আগে মাঠ থেকে দ্রুত তুলে ফেলার কথা বলা হয়েছে।
হুগলি জেলা শাসক মুক্তা আর্য জানিয়েছেন,ঝড়ের সতর্কতায় সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নদী পারে যারা কাঁচা বাড়িতে থাকেন তাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফ্লাড শেল্টার গুলোতে।পানীয় জল,শুকনো খাবার মজুত রাখা হয়েছে। ঝড়ের আগে জেলার ফেরি ঘাট গুলোকে বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।ঝড়ে গাছ বিদ্যুৎ এর খুঁটি ভাঙলে তা সরাতে।বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মিরা তাদের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন।দমকল বিদ্যুৎ দপ্তর থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মিদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা কৃষি দপ্তর ও উদ্যান পালন দপ্তর থেকে মাইক প্রচার করা হচ্ছে কৃষকদের উদ্দেশ্যে।ঝড়ের সময় বাইরে যাতে কেউ না থাকে।সে ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে।কলা,সব্জির পাশাপাশি আম লিচু ঝড়ে পরতে পারে তাই যতটা সম্ভব ফসল ঘরে তুলে ফেলতে বলা হচ্ছে।এসময় জেলায় তিল বাদাম চাষ হয়।সেই জমিতে জল জমলে জল বের করার ব্যবস্থা করতে হবে বলেও প্রচার চলছে।
ওসি বিপর্যয় মোকাবেলা দপ্তর মাসুদুর রহমান বলেন,জেলার পাশাপাশি মহকুমা পুরসভা এবং ব্লকগুলোতেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।সেখান থেকে সব সময় আপডেট খবর আসবে।সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমস্ত দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করা হবে।যেহেতু ঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে এবং কোথায় সেই ঝড় কত কিলোমিটার বেগে আসবে আগে থেকেই জানতে পারায় আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।
জেলা কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে জেলাবাসীর জন্য।
ফোন নাম্বার গুলি হলো
০৩৩২৬৮১২৬৫২
৮১০০১০৬০৪১
Comments :0