আরজি কর কাণ্ডে বিচারের দাবিতে রাজ্য ও দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে পথে নামছেন মানুষ। স্বাভাবিক ভাবেই মমতা ব্যানার্জি এতে আতঙ্কিত। ভয় পেয়েই তিনি ভয় দেখাচ্ছেন। আন্দোলনরত মেডিক্যাল পড়ুয়াদের মনোবল ভাঙতে তিনি ফোঁস করার কথা বলছেন। কিন্তু এরপরেও সাধারণ মানুষ, যাঁরা অন্যায়ের বিচার চাইছেন, অপরাধীদের শাস্তি চাইছেন, তাঁরা নামছেন। আমরা তাঁদের কুর্ণিশ জানাই। আজকেও চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মী ও রোগীদের পরিজনরা একসঙ্গে মিছিল করছেন। মমতা ব্যানার্জি যত মঞ্চ সাজিয়ে হুমকি দেবেন, ততই মানুষের জেদ বাড়বে।
শুক্রবার মুজফ্ফর আহ্মদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন একথা বললেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ৩ সেপ্টেম্বর বামপন্থী দলগুলির ডাকে মহামিছিলে সব অংশকে যোগ দেওয়ার আবেদন জানান তিনি। সেলিম জানান যে সুপ্রিম কোর্টে লক্ষাধিক মানুষের সই নিয়ে আবেদন জমা করা হবে। যাতে অতীতের বিভিন্ন মামলার মতো আর জি কর হাসপাতলের ধর্ষণ-খুন মামলা দীর্ঘসূত্রিতার জালে জড়িয়ে না পড়ে।
সেলিম এদিন বলেছেন যে রাজ্যের যাঁরা ভেবেছিলেন সরকার পরিবর্তন ইতিবাচক হবে তাঁরাও এখন প্রতিবাদে মুখ খুলছেন। সমস্বরে বলছেন যে যথেষ্ট হয়েছে! তিনি বলেন, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদে নামছেন। আমরা তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। এখনও যাঁরা মুখ খোলেননি, তাঁদের আহ্বান জানাবো এগিয়ে আসার জন্য।’’
বামপন্থী কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে সেলিম বলেছেন যে অতীতে বিরোধিতা করেছেন এমন শিল্পী, অভিনেতারা যখন প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের স্বাগত জানানো উচিত। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল-বিজেপির মেরুকরণ বজায় রাখার জন্য এই অংশকে অহেতুক আক্রমণ করা হচ্ছে। এটা অন্যায়। পাশাপাশি, আমি বামপন্থী কর্মী সমর্থকদের অনুরোধ করব যে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অপর্ণা সেন, অঞ্জন দত্ত, অরিজিৎ সিং, সৃজিত মুখার্জির মতো ব্যক্তিত্ব যখন প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তখন অহেতুক তাঁদের সমালোচনা করবেন না।’’
সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক বলেছেন, ‘‘রাজ্যের সমাজে এমন একটা মোড় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে মানুষ বলছেন, ‘এনাফ ইজ এনাফ।’ তৃণমূল ভেবেছিল ধর্ষণ খুনের মত ঘটনাকে গা-সওয়া করে দেবে। কিন্তু মানুষ রুখে দাঁড়াচ্ছেন। বিভিন্ন সংগঠন, গণসংগঠন, এনজিও এগিয়ে এসে প্রতিবাদ গড়ে তুলছে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে মমতাকে যারা দুর্গা বলেছিল, সেই শক্তি যেন ঢুকে না পড়ে। কারণ এই শক্তির মদতেই মমতা ব্যানার্জি রয়েছেন। নিজেকে বাঁচাতে সপ্তাহে দু’বার মোদীকে চিঠি লিখছেন তিনি।’’
সেলিম বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিকভাবে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অরাজনৈতিক ভাবেও এগোচ্ছেন মানুষ। বৃহত্তর সমাজ যেভাবে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইবে, আমরা তাকে শ্রদ্ধা করব। কিন্তু এরই মধ্যে যারা মোদী-মমতা মেরুকরণকে আরও জোরালো করতে চাইবে, তাদের সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকতে হবে।’’
সেলিম বলেছেন, ‘‘৩ সেপ্টেম্বরের মিছিলে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বামপন্থী দলগুলি। সকলকে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এর পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন অংশ নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ জারি রেখেছে। প্রায় প্রতিদিন কোনও না কোনও মিছিল, আন্দোলন চলছে। এরইমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রয়েছে ৫ সেপ্টেম্বর। কোথাও গিয়ে মনে হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট জোর করে আরজি কর মামলাকে নিজেদের কোলে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা চাই নির্যাতিতার পরিবার সুবিচার পাক। তাই আমরা লক্ষ লক্ষ মানুষের সই নিয়ে আদালতে পিটিশন জমা দেব, যাতে নারদ, সারদা, কামদুনি মামলার মত এই মামলাও দীর্ঘসূত্রিতার জালে না জড়িয়ে পড়ে।’’
আরজি কর কাণ্ডে বিজেপি তৃণমূল বোঝাপড়ার অভিযোগ তুলে সেলিম বলেছেন, ২০১৯ সাল থেকে আরজি কর হাসপাতালে সিএজি রিপোর্ট নেই। অডিটর জেনারেল কী করছেন? নিয়ম হলো, সিএজি হাসপাতালে রিপোর্ট প্যারাগ্রাফ পাঠায়, সেই প্যারাগ্রাফের জবাব দিলে তবেই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি হয়। সন্দীপ ঘোষ বছরের পর বছর সেই জবাব দিলেন না। তারপরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? রাজ্যের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির কোনও ভূমিকা নেই, কারণ সেখানে সাজানো বিরোধীদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। এই কারণেই মমতা বিরোধীশূন্য রাজ্য চান, যেখানে অনাচার, স্বৈরাচার চালিয়ে যাওয়া সহজ।
সেলিম এদিন অভিযোগ করেন পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ বর্তমানে তৃণমূলের প্রচার ছড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে, আইপ্যাকের মতো। কর্তব্যে গাফিলতির জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছি আমরা। পুলিশ হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় আসল দোষীদের পাশাপাশি বামপন্থী কর্মীদের একই ধারা দিয়েছে। বহু দুষ্কৃতী এখনও ধরা পড়েনি। একই ধারায় একজন জামিন পেয়ে গেলে বাকিদেরও জামিনের ক্ষেত্র তৈরি হয়। পুলিশ সেটাকে ব্যবহার করছে। আমরা এর বিরোধিতা করছি।’’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা পুলিশকে নয়, নিহত চিকিৎসকের মা-কে বিশ্বাস করি। পুলিশকে জবাব দিতে হবে, কেন ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আনা হলো না? কার দেওয়া টেন্ডারে হাসপাতাল ভাঙা হলো? প্রমাণ লোপাট করা হলো? সাক্ষী লোপাটের মামলায় তাদের যুক্ত করা হচ্ছে না কেন? পুলিশের যেই অংশ সেদিন দাঁড়িয়ে থেকে প্রমাণ লোপাটের কাজে সাহায্য করল, তাদেরও শাস্তি চাইছি আমরা।’’
SALIM SUPREME COURT
লক্ষাধিক সই যাবে সুপ্রিম কোর্টে, জানালেন সেলিম
×
Comments :0