চাকরি পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল প্রয়াগরাজ। তাঁরা পরীক্ষার দিনক্ষণ এবং ধরন বদলের দাবিতে উত্তর প্রদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (ইউপিপিএসসি) সদর দপ্তরের সামনে ধরনায় বসেছেন। লাঠিচার্জ করে পুলিশ তাঁদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিবাদীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ক্রমে হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। তবে পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙেই মিছিল করে গিয়ে ধরনায় বসেন প্রতিবাদীরা। মূলত দু’দিন পরীক্ষা নেওয়া হলে বেনিয়মের আশঙ্কা করছেন পরীক্ষার্থীরা।
গত ৫ নভেম্বর ইউপিপিএসসি এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায় যে, ‘রিভিউ অফিসার অ্যান্ড অ্যাসিস্টেন্ট রিভিউ অফিসার’ পদে নিয়োগের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ডিসেম্বরের ২২ ও ২৩ তারিখ নেওয়া হবে তিন পর্যায় বা সিফটে। এরই পাশাপাশি ‘প্রভিশনাল সিভিল সার্ভিস’-এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হবে দুই পর্যায় ডিসেম্বরের ৭ এবং ৮ তারিখে। ইউপিপিএসসি’র ওই দুই পরীক্ষার সূচি ঘোষণার পরেই ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, আগে এক পর্যায়ে পরীক্ষা নেওয়া হতো। এমনকি দু’দিন পরীক্ষা নেওয়া হবে সেকথাও বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। একারণেই তাঁরা প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। তাঁদের আপত্তির মূল কারণ একই পরীক্ষা কেন ভিন্ন ভিন্ন দিনে নেওয়া হচ্ছে!
প্রতিবাদী পরীক্ষার্থীদের এদিন ইউপিপিএসসি’র সদর দপ্তরের দু’নম্বর গেটের সামনে প্রথমে ধরনায় বসেন। ওখানে আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল বিক্ষোভ প্রতিরোধে। পুলিশ সদর দপ্তরের দিকে এগতে বাধা দিলেও প্রতিবাদীরা মানেননি। তাঁরা উলটে কমিশনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে চলেন। পুলিশ লাঠি চালিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করা চেষ্টা করে। রেয়াত করেনি মহিলা বিক্ষোভকারীদেরও। চাকরি পরীক্ষার্থীদের ওপর এ হেন পুলিশি নির্যাতনে ক্ষুব্ধ সব মহলই। পরে অবশ্য বিষয়টিকে প্রলেপ দিতে পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অভিষেক ভারতীর দাবি করেন, ‘‘প্রতিবাদে বাধা দেওয়া উদ্দেশ্য নয়। প্রতিবাদীদের ধরনায় বসার নির্দিষ্ট স্থান গির্জা এলাকায় চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও ওঁরা মানেননি। বলা হয়, শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানাতে হবে। প্রতিবাদীদের বক্তব্য সংশ্লিষ্ট উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়।’’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘‘পুলিশের কথা মেনে বেশ কয়েকজন প্রতিবাদী ওখানে চলে গেলেও কয়েকজন না গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।’’ তবে ভারতীর এই বক্তব্যেই প্রচ্ছন্ন হুমকির সুর ছিল। অবশ্য পুলিশের চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
অঙ্কিত প্যাটেল নামের এক প্রতিবাদী অভিযোগ করেন, ‘‘আগের মতো এক পর্যায়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিই জানাচ্ছিলেন পরীক্ষার্থীরা।’’ আরেক পরীক্ষার্থী মনোরমা সিংয়ের অভিযোগ, ‘‘বিধি লঙ্ঘন করেই দু’দিন পরীক্ষা ঘোষণা করেছে কমিশন। বিজ্ঞপ্তিতে দু’দিন পরীক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়নি। পরীক্ষার্থীরা চায়, পরীক্ষা একদিনেই নেওয়া হোক আগের মতো।’’
এদিকে, উত্তর প্রদেশ পুলিশের অত্যাচারের কড়া সমালোচনা করে সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ সিং যাদব স্পষ্টই বলেছেন, রাজ্যের বিজেপি সরকার ‘যুব বিরোধী’ এবং ‘ছাত্র বিরোধী’।’’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পুলিশ যে নির্যাতন চালিয়েছে তার ফল ভালো হবে না। একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে তাদের ভবিষ্যতে। এদিন এক বিবৃতিতে যাদব বলেছেন, ‘‘ইউপিপিএসসি পরীক্ষায় ‘রিগিং’ বন্ধের দাবি তুলে প্রয়াগরাজে সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন পরীক্ষার্থীরা। পুলিশ উলটে তাঁদের বিক্ষোভ প্রতিরোধে হিংসার আশ্রয় নেয়। আসলে বিজেপি সরকারের রাজ্যের যুব সম্প্রদায়কে চাকরি দিতে ইচ্ছুক নয়। চাকরি কিংবা কর্মসংস্থান বিজেপি সরকারের কর্মসূচিতে পড়ে না। যুব বিরোধী নীতি নিয়ে চলে রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। কিন্তু সমাজবাদী পার্টি যুব সম্প্রদায়ের পক্ষেই আছে। পরীক্ষার্থী এবং যুবদের দাবিকে তাঁরা পুরোপুরি সমর্থন করে। পরীক্ষার্থীরা সঠিকভাবেই শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন এক পর্যায়ে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য।’’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘ছাত্র এবং যুব সম্প্রদায়ের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে যোগী সরকারের একনায়কতন্ত্রের আমলে।’’ পরে এক্স হ্যান্ডেলে যাদব আরও বলেছেন, ‘‘এখন প্রত্যেকের হাতে হাতে তেরঙ্গা পতাকা। বিজেপি’র স্বেচ্ছাচার বরদাস্ত করা হবে না। রাজ্যের পুলিশ মহিলা পরীক্ষার্থীদের ওপরেও লাঠি চালিয়েছে, জা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’’
Prayagraj Atrocity
চাকরি পরীক্ষার্থীদের ওপর হিংসাত্মক আক্রমণ পুলিশের
×
Comments :0