Price Of Green Chilli

কাঁচালঙ্কার ঝাঁজ বাজারেও

রাজ্য

Price Of Green Chilli


   
সবজি বাজারেও লঙ্কার ঝাঁঝ! টমেটোর দাম বাড়ছিল হু হু করে। এবার কাঁচালঙ্কার দাম পৌঁছে গেল কেজি প্রতি ৩০০ টাকায়। এরই সঙ্গে বিনস ২০০ টাকা, করলা ১২৫ টাকায়! বন্যা নেই, খরা নেই, সবজি বাজারে যেন আগুন লেগেছে।
এবছরে ভারী বর্ষা উত্তরবঙ্গে কিছুটা হলেও দক্ষিণবঙ্গে এখনও তেমন বর্ষার পূর্বাভাষ আবহাওয়া দপ্তর দেয়নি। কিন্তু কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ— কাঁচা আনাজের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই আদা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি হয়ে গিয়েছে। রাজ্যে খোলা বাজারে যে দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে, তার ন্যায্য দাম কি আদৌ কৃষকের হাত পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে? এই প্রশ্নও এখন সামনে চলে আসছে। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, সবজির এই আকাশছোঁয়া দাম স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে। 
গোটা রাজ্যে সবজির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় শনিবার তড়িঘড়ি নবান্নে প্রায় তামাদি হয়ে যাওয়া তথাকথিত টাস্ক ফোর্সের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। বৈঠক থেকে ঠিক হয়েছে টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা রবিবার থেকে বাজারে বাজারে ঘুরবেন।



শুধুমাত্র কলকাতা এবং কলকাতা লাগোয়া শহরতলির বাজারগুলিতে পটল, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়শ, বেগুনের দাম বেড়ে গিয়েছে এমন নয়, রাজ্যের সর্বত্র সবজির দাম বেড়েছে। যেমন গড়িয়াহাট বা মানিকতলা বাজারে টম্যােটো ১২৫ টাকা, পটল ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০ টাকা, করলা ১২৫ টাকা, কাঁচালঙ্কা ৩০০ টাকা, আদা ৩২৫ টাকা কেজি। ঝিঙে ৭০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, বিনস ২০০ টাকা, ক্যাপসিকাম ২৫০ টাকা, চন্দ্রমুখী আলু ২৫ টাকা এবং পিঁয়াজ ৩০ টাকা কিলো দরে বিক্রি হচ্ছে। এই একই দাম কোচবিহারের ভবানীগঞ্জ কিংবা হলদিবাড়ির বাজারেও। 
এরই পাশাপাশি বর্ধমানের তেঁতুলতলা, শিয়ালডাঙা বা নীলপুর বাজারেও কাঁচালঙ্কা থেকে শুরু করে কাঁচা আনাজের দামের কোনও হেরফের নেই। রাজ্যজুড়ে গত সাতদিনে কাঁচা সবজির দাম এত চড়ে গেল কেন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে খুচরো আনাজ বিক্রেতাদের কাছে। শনিবার নবান্নে টাস্ক ফোর্সের বৈঠক থেকে বলা হয়েছে, গ্রীষ্মের দাবদাহের কারণে দেশে সবজির ফলন কম হয়েছে। ফলে বেশ কিছু সবজির দাম বেড়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় বাজারগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হবে। রাজ্য এখন ৪৮০টি সুফল বাংলার স্টল থেকে সবজি বিক্রি হয়। এই স্টল থেকে বাজার দামের থেকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বা কেজিতে ৫ টাকা কম করে সবজি বিক্রি করা হবে। উল্লেখ্য, রাজ্যের সিংহভাগ মানুষ এই সুফল বাংলার স্টল কোথায় আছে তা জানেন না।

২০২০ সালে করোনার সময় জুলাই মাসেই কোচবিহারের ভবানীগঞ্জ বাজারে কাঁচা লঙ্কা বিক্রি হয়েছিল ৪০০ টাকা কেজি দরে। টম্যা টো ছিল ১২০ টাকা। গত বছর এপ্রিল মে মাসে জেলার কৃষকরা কাঁচা লঙ্কা এবং টম্যাকটো মাঠেই পচিয়ে দিয়েছিলেন। তখন দিনহাটায় কাঁচা লঙ্কা বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা এবং টম্যাংটো বিক্রি হয়েছে ৫ টাকা কিলো দরে। হঠাৎ করে রাজ্যজুড়ে কাঁচা আনাজের দাম অগ্নিমূল্য হয়ে গেল কেন? এর জবাব রাজ্য সরকারের কাছে নেই। এবছর জুলাই মাসে জেলা প্রশাসনও বলতে পারছে না কাঁচা আনাজে আগুন লাগলো কেন? এবছরও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কৃষকরা একটা দেড় কেজি ওজনের লাউ মাঠ থেকে বিক্রি করেছেন ১০ টাকায়। এখন সেই লাউ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে।
যাঁরা গত সপ্তাহের বুধবার বাজার কাঁচা আনাজ কিনেছিলেন, তাঁরা শনিবার বাজারে গিয়ে হতচকিত হয়ে গিয়েছেন। গত বুধবার টম্যা টো ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, অন্যান্য আনাজ ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। কাঁচা লঙ্কা ছিল ১০০ টাকা কিলো। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে রাজ্যের সর্বত্র কাঁচা লঙ্কার দাম বেড়ে ৩০০ টাকা হয়ে গেল কী করে? খুচরো বিক্রেতারা বাজারে ক্রেতাদের বলছেন, কাঁচালঙ্কা ১০০ গ্রাম ৩০ টাকা। তাঁরাও কেজি দরে দাম বলতে ভয় পাচ্ছেন।

কোলে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি বা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কাঁচা আনাজের ব্যবসায়ীরাও স্বীকার করছেন রাজ্যের বাজারগুলি নিয়ন্ত্রণ করেছে ফড়েরা। গত সপ্তাহে কোলে মার্কেটে কাঁচা লঙ্কার (পাল্লা ৫ কেজি) ছিল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। সেই লঙ্কা কলকাতার বাজারগুলিতে ৩০০ কেজি টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজার থেকে খুচরো বাজারে যাওয়ার পথেই সবজির দাম কোথাও দ্বিগুণ কোথাও তিনগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, উত্তর দিনাজপুর জেলা এবং কোচবিহারের বেশকিছু ব্লকে কাঁচালঙ্কার চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে এবছর কয়েকদিন ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেখানে সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টির কারণে সবজি চাষের ক্ষতি হয়েছে। তবে এই ক্ষতিতেও রাজ্যে যেভাবে আনাজের দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে তা যাওয়ার কথা নয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা এবার কাঁচা আনাজের দখল নিয়েছে। 
ভিনরাজ্য থেকে এখনও যে ফুলকপি এই গরমে কলকাতায় আসছে, সেই কপির দাম ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই ফুলকপি কিনতে খরচ পড়ছে ১৫ টাকা। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার আমতলা বাজার থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সবজি সরবরাহ হচ্ছে। এখানেই ফড়েরা সবজির দখল নিয়ে নিচ্ছে। তারাই সবজির দাম নির্ধারণ করে জেলা এবং রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে পাঠাচ্ছে। এনিয়ে প্রশাসনের বা তথাকথিত টাস্ক ফোর্সের কোনও মাথাব্যথা নেই।

হাওড়া, হুগলী এবং বর্ধমানের বিভিন্ন বাজারে কাঁচা আনাজের দাম কলকাতার বাজারগুলির থেকে তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম থাকতো। এখন আর সেই পার্থক্য নেই। এব্যাপরে হাওড়ার কালীবাবুর বাজার এবং কদমতলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির বক্তব্য, ‘গত সাতদিন বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সবজি ঢুকছে না। খুচরো ব্যবসায়ীরা খুব অসুবিধায় পড়েছেন। অতিরিক্ত দাম দিয়ে ফড়েদের কাছ থেকে সবজি নিয়ে তার সঙ্গে লাভের অঙ্ক যোগ করে বিক্রি করতে হচ্ছে।’  
গত একসপ্তাহে যেভাবে কাঁচা আনাজের দাম বেড়েছে, তাতে শুধু ক্রেতারাই নন, ছোট এবং মাঝারি খুচরো ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিক্রি ব্যাপক হারে কমে গিয়েছে। ফলে তাঁরা আনাজ বাজারে নিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছেন। অন্যদিকে, যে কৃষকরা সরাসরি মাঠ থেকে ফসল এনে বাজারে বিক্রি করতে পারছেন, তাঁরা বর্তমান বাজার দর পাচ্ছেন। তবে মাঠ থেকে সরাসরি বাজারে ফসল এনে বিক্রি করা কৃষকের সংখ্যা খুবই নগন্য।

Comments :0

Login to leave a comment