মণ্ডা মিঠাই
পৌষ মেলার গান
সৌরভ দত্ত
নতুনপাতা
শীতের উত্তুরে হাওয়া, রাঙামাটির গন্ধ, মাদলের দোদুল ছন্দ বীরভূমের শান্তিনিকেতন লোকসংস্কৃতির এক উজ্জ্বল অধ্যায়। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের হাতে গড়া এ মেলার এখন বিশ্বজনীন খ্যাতি।বাউল সংগীতের আখর ছড়িয়ে পড়ে কোপাইয়ের বুক চিরে।খ্যাপা খুঁজে ফেরে পরশপাথর।পৌষ উৎসব মিলিয়ে দেয় সব ধর্মের সব দেশের মানুষকে। মাত্র কুড়ি জন অনুরাগী নিয়ে ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।১৮৪৩ সালের ২১শে ডিসেম্বর (১২৯৮ বঙ্গাব্দের ৭ই পৌষ) স্থাপিত হয়েছিল ব্রাহ্ম মন্দির।১৮৯৪ সালে প্রথমবার ব্রাহ্ম মন্দিরের উল্টোদিকের ছোট মাঠে পৌষ মেলার শুভ সূচনা হয়। পৌষমেলা চালু হওয়ার অনুপুঙ্খ বর্ণনা পাওয়া অক্ষয় কুমার দত্ত সম্পাদিত তৎকালীন ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায়। প্রথমবারের পৌষ মেলার জন্য খরচ হয়েছিল সাকুল্যে ১৭৩২ টাকা ১২ আনা।বৈতালিক দলের গান গাইতে গাইতে আশ্রম পরিক্রমা এই মেলার উল্লেখযোগ্য দিক। পৌষ মেলার জন্য ব্রাহ্ম বন্ধুদের গান লিখে দিয়েছিলেন শিবনাথ শাস্ত্রী।রবীন্দ্রনাথকে সামনে রেখে মাঙ্গলিক গীত সহ মন্দির পরিক্রমায় অংশ নিয়েছিল ব্রাহ্মবন্ধুরা। আশ্রমের প্রথম যুগের ছাত্র সুধীর রঞ্জন সেনের বর্ণনায় পাই– “সাতই পৌষের দিন সাতেক আগে থাকতেই লোক সমাগম শুরু হল। কতদূর গ্রাম থেকে গোরুর গাড়িতে পসরা বোঝাই করে কত দোকানী পসারী আসতে লাগল কত রকমের হাঁড়ী,কলসী–কোনটা লাল,কোনটা কালো।” পৌষমেলা প্রসঙ্গে প্রমথনাথ বিশী লিখেছেন–“দুদিন খুব ধুমধাম হত। সবচেয়ে যা মনোহরণ করত তা হচ্ছে একটা কাগজের জাহাজ ও একটা কাগজের কেল্লার লড়াই—মন্দিরের উত্তরের মাঠ এক রাত্রেই দোকানে তাঁবুতে গাড়িতে নাগর দোলায় শামিয়ানায় ভরে যেত।—সন্দেশ, লোহার বাসন,কাটা কাপড়, তেলেভাজা খেলনা ,শিউড়ির মোরব্বার দোকান আসত।” দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, বিয়াল্লিশের ভারত ছাড়ো আন্দোলন, দুর্ভিক্ষ, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা,করোনা মহামারী এ মেলায় বিরূপ প্রভাব ফেললেও স্তিমিত করতে পারেনি। পুঁজির সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমানে মেলার বাজেট বেড়েছে।বিশৃঙ্খলা ও চটুল নৃত্য দর্শকদের ব্যথিত করে। তবুও পৌষ মেলার অপেক্ষায় থাকেন আসমুদ্রহিমাচল মানুষ। বিভিন্ন দেশের পর্যটক গবেষক ও ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ স্থান শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা। আকাশে-বাতাসে ভেসে ওঠে–
“আজি যত তারা তব আকাশে
সবে মোর প্রাণ ভরি প্রকাশে।।”
Comments :0