CPIM

লড়াইয়ের ফসল ভোটে নেই কেন, আত্মসমীক্ষা করবে সিপিআই(এম), বললেন ইয়েচুরি

জাতীয়

 

গত বারের তুলনায় এবার লোকসভায় সিপিআই(এম)’র আসন সংখ্যা সামান্য বাড়লেও ফলাফলে নেতৃত্ব খুশি নয় বলে খোলাখুলি জানিয়ে দিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এক সাক্ষাৎকারে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেছেন, বামপন্থী সংগঠনগুলি বেশ কিছু গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেও নির্বাচনী ফলাফলে তার প্রভাব প্রতিফলিত হয়নি। এতে পার্টির মধ্যে কিছুটা হতাশাও তৈরি হয়েছে। মাঠে-ময়দানে আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে পার্টির সক্ষমতা এবং ভোটে আসন জেতার ক্ষেত্রে পার্টির শক্তির মধ্যে এই ফারাককে কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে গভীর পর্যালোচনা করবে পার্টি। উল্লেখ্য, ইয়েচুরির এই সাক্ষাৎকার নিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। মঙ্গলবার পিটিআই’র তরফে এর প্রথম অংশ প্রকাশ করা হয়েছিল, বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে দ্বিতীয় অংশ। সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশে ইয়েচুরি মূলত এবারের লোকসভা নির্বাচনের সামগ্রিক ফলাফল ও ভোটে বিজেপি’র গরিষ্ঠতা হারানোর বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এবং ভারতের রাজনীতিতে তার তাৎপর্যকে ব্যাখ্যা করেছেন। দ্বিতীয় অংশে তাঁকে প্রধানত প্রশ্ন করা হয়েছে ভোটে সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীদের ফলাফল নিয়ে। 
এবারের নির্বাচনে লোকসভায় ৮টি আসন পেয়েছে বামপন্থীরা, গতবারের থেকে ৩টি বেশি। সিপিআই(এম) ৪টি, সিপিআই ২টি এবং সিপিআই(এমএল) ২টি আসনে জয়ী হয়েছে। এই ফলাফল নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘লোকসভায় বামপন্থীদের উপস্থিতি সামান্য বাড়লেও আমরা খুশি নই। বরং আমরা কিছুটা হতাশ। কারণ, বামপন্থীদের নেতৃত্বে সংগঠিত সমস্ত লড়াই-আন্দোলন সত্ত্বেও আমরা সত্যিই তা থেকে নির্বাচনী সাফল্যের ফসল তুলতে পারিনি। গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনা করার দরকার আছে। আমরা সেই কাজ করব এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করব আমাদের ভূমিকা, যাতে আগামী দিনে জনগণের সংগ্রাম সংগঠিত করা ও তাকে জারি রাখার ক্ষেত্রে বামপন্থীদের সক্ষমতা ও সংকল্প এবং তাদের নির্বাচনী সাফল্যের মধ্যে অসঙ্গতিকে কমিয়ে আনা যায়।’’ ইয়েচুরি এই প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো পার্টির নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে গভীর আত্মসমীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সঙ্গেই পলিট ব্যুরো জনগণের জীবন-জীবিকার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলনকে তীব্র করা হবে বলেও ঠিক করেছে। যেমন, কৃষকদের সংগ্রাম, কর্মসংস্থানের জন্য যুবদের সংগ্রাম, দে‍‌‍‌শের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আন্দোলন, নিটে কারচুপির অভিযোগ নিয়ে আন্দোলন। সংসদের ভিতরে যেমন, সংসদের বাইরেও তেমন এই সব লড়াই-আন্দোলন চলবে।
সাক্ষাৎকারে কেরালার ত্রিচূড় আসনে বিজেপি প্রার্থী সুরেশ গোপীর জয়ের কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল ইয়েচুরির কাছে। তিনি বলেছেন, ওই আসনে ইউডিএফ’র ভোট, মূলত কংগ্রেস প্রার্থীর ভোট কমেছে। তা গিয়েছে বিজেপি’র পক্ষে। ইউডিএফ’র ভোটে ভাগ বসিয়েছে বিজেপি। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। কংগ্রেসের সমর্থনের ভিত্তি যদি বিজেপি’র দিকে চলে যায়, তাহলে তা শুধু কেরালার পক্ষে নয়, সারা দেশের পক্ষেই গভীর উদ্বেগজনক। তিনি আশা করছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে দেশের স্বার্থে উপযুক্ত উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৯’র নির্বাচনে কেরালায় কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৭.৪৫ শতাংশ ভোট, যা ২০২৪’র নির্বাচনে কমে হ‌য়েছে ৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে, বিজেপি’র প্রাপ্ত ভোটের হার‍ ২০১৯’র ১২.৯ শতাংশ থেকে ২০২৪-এ বেড়ে হয়েছে ১৬.৬৮ শতাংশ। পাশাপাশি সিপিআই(এম)’র প্রাপ্ত ভোটের হার এই দুই নির্বাচনে প্রায় একই আছে, যথাক্রমে ২৫.৯ এবং ২৫.৮২ শতাংশ। সাক্ষাৎকারে ইয়েচুরিকে বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক প্রচার নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, এবারের নির্বাচনে দেশে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের প্রবল চেষ্টা চালিয়েছে বিজেপি। এই মেরুকরণের চেষ্টা সমাজ, মানুষ ও দেশের বড় ক্ষতি করেছে। তবে তা ব্যর্থ হয়েছে। এমনকী, ফৈজাবাদ আসনেও তারা হেরেছে, যার মধ্যে অযোধ্যা রয়েছে, যেখানে রামমন্দির বানানো হয়েছে। এর অর্থ স্পষ্ট, রামমন্দির বানিয়ে তারা বিরাট সফল হবে ভাবলেও তা কাজ করেনি। আসলে মানুষের ভাবনা আর ভোটের কাছে হেরে গিয়েছে বিজেপি।  

 

Comments :0

Login to leave a comment