Durgapur

সপরিবারে দম্পতির মৃত্যুকে ঘিরে চাঞ্চল্য, সন্দেহ খুনেরও

রাজ্য

দেবদাস ভট্টাচার্য: দুর্গাপুর 

 

রবিবার ভোরে এক দম্পতির সপরিবারে মৃত্যুর ঘটনায় রবিবার দুর্গাপুরে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের সঙ্গে এই চার জনের মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে বলে অভিযোগ। 
এদিন ভোরে দুর্গাপুর নগর নিগমের ১১ নম্বর ওয়ার্ড, কুড়ুরিয়াডাঙার মিলনপল্লির এম/৭৭ নম্বর বাড়ি থেকে দুই সন্তান সহ এক দম্পতির মৃতদেহ  উদ্ধার হয়। মৃতদের নাম অমিত কুমার মণ্ডল ওরফে বুবাই (৩৫), অমিতের স্ত্রী রূপা মণ্ডল (৩১), তাঁদের সাড়ে ৭ বছরের পুত্র, ডিএভি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র নিমিত কুমার মণ্ডল (বাবু) ও দেড় বছরের মেয়ে নিকিতা মণ্ডল (বুনু)। অমিতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। বাকিদের মৃতদেহ উদ্ধার হয় খাটে এবং নিচে বিছানায় শোয়া অবস্থায়। 
অমিতের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে পাওয়া দীর্ঘ দুটি মেসেজ ভাইরাল হয়েছে।  মেসেজ দুটির সত্যতা গণশক্তির পক্ষ থেকে যাচাই করা হয়নি। বাংলা ও ইংরেজিতে দীর্ঘ মেসেজ। বাংলায় দেড় হাজারেরও বেশি শব্দে লেখা। ইংরেজি মেসেজও দীর্ঘ। মেসেজ বার্তায় নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে স্পষ্ট যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। 
ইংরেজিতে লেখা মেসেজে সিবিআই, ইডি, রাজ্য পুলিশ, আয়কর বিভাগ এবং বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। একই পাড়ায় অমিতের মামার বাড়ি। মামাতো ভাইদের নাম করে টেট পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউ না দিয়ে টাকার বিনিময়ে ২০১২ সালে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন যাঁরা তাঁদের বিষয় উল্লেখ করে অমিতের লেখা থেকে জানা গিয়েছে, সুশান্ত নায়েক ওরফে নান্টু (অমিতের মামাতো ভাই) অণ্ডাল সার্কেলে সিদুলি স্কুলে চাকরি পেয়েছে। ওই পরিবারের মিলি নায়েক ঘোষ পাণ্ডবেশ্বর সার্কেলের বৈদ্যনাথপুর স্কুলে চাকরি পেয়েছে। শীলা মণ্ডল নায়েক দুর্গাপুর ২ সার্কেলের আমরাই স্কুলে চাকরি পেয়েছে। অমিতের মামাতো ভাইয়েরা দু’জন অন্যায়ভাবে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সুবিধা নিয়েছে। সুশান্ত নায়েক টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় অনেককে চাকরি পাইয়ে দিয়েছে। এদের বেনামী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। কালো টাকা সাদা করেছে। এরা প্রভাবশালী। মামাতো ভাই সুশান্তকে ‘জমি মাফিয়া’ বলেছে অমিত। স্ত্রীর নামে সে জমির কারবার চালাচ্ছে এমন অভিযোগ করা হয়েছে মেসেজে।  
মামাতো ভাইদের এবং মামার বাড়ির লোকেদের টেট দুর্নীতি সহ নানা কালো কারবারের বিষয়ে অমিত অনেকটা জেনে গিয়েছিলেন। অমিত এসব ফাঁস করে দিতে পারেন তাই তাঁর পরিবার সমেত বিপদ নেমে এল এমনটাও মনে করা হচ্ছে। এলাকার মানুষের অভিযোগ, এতবড় ঘটনা ঘটে গেল, অথচ অমিতের মামার বাড়ির কেউ এখানে আসেনি। অমিতের মা তাঁর ভাইপোদের সঙ্গে এবং মেয়ের সঙ্গে সংযোগ রাখতেন বলে অমিত অভিযোগ করেছে চিঠিতে। এলাকার মানুষও তাতে সায় দিলেন।  
বাংলায় লেখা মেসেজে অমিত সবাইকে নিয়ে আত্মহত্যা করছি বলে স্বীকার করেছেন। কাদের কাদের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন তাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন। এদের মধ্যে মামাতো ভাইদের নাম রয়েছে। মৃতা রূপার বাড়ির লোকজন এবং এলাকার অনেকে এটা খুনের ঘটনা বলে অভিযোগ করেছেন। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধারে এলে স্থানীয় মানুষ বাধা দেন। দাবি ওঠে, খুনিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। দুর্নীতির বিষয়ে অমিতের অনেক কিছু জেনে যাওয়া এবং সম্পত্তির ভাগীদার সরিয়ে দেওয়ার জন্যই এই ঘটনাকে আত্মহত্যা নয়, খুন বলছেন এলাকার মানুষজন। কারণ সন্দেহজনকভাবে অমিতের মৃতদেহ ঝুলতে দেখা গিয়েছে। দুই হাত ঝোলানো অবস্থায় বাঁধা ছিল। গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাঁর দুই পা খাটের সঙ্গে স্পর্শ করে ছিল। বাড়ির ভিতরে লাগানো সিসিটিভি’র লেন্স ঢেকে দেওয়া হয়ছিল। বাইরে লাগানো সিসিটিভি’র মুখ ঘোরানো ছিল। কে এসব করলো প্রশ্ন উঠেছে। 
অমিতদের পরিবার অবস্থাপন্ন পরিবার। প্রায় দুই বিঘা জায়গা নিয়ে বিশাল দোতলা বাড়ি। জমি কেনাবেচার পারিবারিক কারবার অমিতদের। ঠাকুরদা ছিলেন তহসিলদার। বাবা প্রয়াত নরেশ মণ্ডল ডিপিএল’র কর্মী ছিলেন। অমিত ডিপিএল-এ অস্থায়ী কর্মীর কাজও করতেন। অমিতের স্ত্রী রূপা ৫/৬ বছর আগে প্রাথমিক শিক্ষিকার চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। একই বাড়িতে অমিতের মা বুলারানী মণ্ডল থাকতেন। 
ঘটনাস্থলে ডিসি (পূর্ব) কুমার গৌতম গিয়েছিলেন। কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করা হয়। একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ফরেনসিক দল গিয়েছিল। সিপিআই(এম) নেতা মুজফ্‌ফর হোসেন সহ এরিয়া কমিটির নেতৃবৃন্দ এলাকায় ছিলেন। এই ঘটনার প্রকৃত তদন্ত দাবি করেছে পার্টি। একই সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ও মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন নিয়ে মৃত অমিতের হোয়াটসঅ্যাপে করা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হোক বলে দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এলাকার মানুষেরও দাবি, ঘটনা আড়াল না করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করা হোক। খুন বা আত্মহত্যা যাই হোক না কেন, দায়ীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে হবে।  পুলিশ বেলা ১১টা নাগাদ মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। অমিতের স্ত্রীর পরিবারের সদস্যকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অভিযোগ লিপিবদ্ধ করার জন্য। 
 

Comments :0

Login to leave a comment