মণ্ডা মিঠাই — নতুনপাতা
পয়লা বৈশাখ — বাংলা নববর্ষ
পল্লব মুখোপাধ্যায়
পয়লা বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম দিন। ১৪৩০ বঙ্গাব্দকে পিছনে ফেলে ১৪৩১ বঙ্গাব্দে প্রবেশ করা। চৈত্রের সংক্রান্তি শেষে পুরোনো বাংলা বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে আবাহনের সময়। পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর এ এক সুন্দর ব্যবস্থা। দেশে দেশে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ক্যালেন্ডারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সেইসব মানুষের সংস্কৃতি। বাংলা ক্যালেন্ডারের হিসেবেই তাই বাঙালির উৎসবের আনাগোনা। পয়লা বৈশাখ মানেই হালখাতা, দোকানে দোকানে খদ্দেরদের ভিড়, নতুন খাতা চালু, সরবত, মিষ্টিমুখ, হাতে হাতে মিষ্টির বাক্স এবং অবশ্যই বাংলা ক্যালেন্ডার। শাহরিক জীবনের থেকে যদি চোখ রাখা যায় গ্রামীণ জীবনে দেখা যাবে পুরোনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর জন্য চৈত্র সংক্রান্তিতে পালিত হয় গাজন উৎসব। কোথাও কোথাও এ উৎসবের নাম চড়ক। গাজনের সঙ্গে জড়িয়ে গ্রামীণ মানুষের জীবন। গাজন মূলত কৃষিনির্ভর বাঙালির নিজস্ব উৎসব। চৈত্র ও বৈশাখ বিশ্রামের মাস। শীতে ধান কাটা ও ঝাড়া শেষ হলে রবিফসলের কাজ এমনকি ফসল তোলার কাজও শেষ হয়ে যায় চৈত্রের আগে। আর বৈশাখের শেষ থেকেই আগামী মরসুমের চাষের কাজ শুরু হয়। প্রকৃতির দিকে তাকালে দেখা যায় গাছের পুরোনো পাতা ঝরে গেছে। নতুন পাতা এসেছে। এই সময় নতুনকে আবাহন এবং পুরোনোকে বিদায় দেওয়ার। গাজনের সঙ্গে মিশে থাকে সং। কোথাও বা সং বের হয় বছরের প্রথম দিনটিতে। কোথাও কোথাও চলে আবার সং-এর
প্রতিযোগিতা। আবার নতুন বই প্রকাশের তালিকায় সব থেকে আয়োজনমুখর পয়লা বৈশাখ। নতুন হালখাতার মতোই থরে থরে নতুন বাংলা বইয়ের দেখা মিলতো বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনটিতে। বিভিন্ন প্রকাশকের দপ্তরে, বইয়ের দোকানে দোকানে কবি, লেখক, সাহিত্যিকদের ভিড়. তাঁদের ঘিরে আড্ডা. এখনও তা প্রচলিত। হয়ত তার জৌলুস কমেছে। আবার কোথাও কোথাও প্রভাত ফেরির মাধ্যমে বর্ষবরণের উদযাপন। বেশ কয়েক বছর আগে পয়লা বৈশাখে শুরু হত বাংলা সঙ্গীত মেলা। আসলে বাংলা নববর্ষ মানেই বাংলার সুমহান সংস্কৃতিকে স্মরণ করা। গানে-কথায়-গল্পে-আড্ডায়-মিষ্টিমুখে। প্রভাতফেরি থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা নানাভাবে পালিত হয় বাংলা নববর্ষ। 'গণশক্তি'-র 'নতুন পাতা'-র ইতিহাসে এবারের পয়লা বোশেখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 'নতুন পাতা'-র নব কলেবরে আত্মপ্রকাশের প্রথম বর্ষপূতি হল। কবি বলেছিলেন, ‘নব বৎসরে করিলাম পণ লব স্বদেশের দীক্ষা। নববর্ষ উদযাপনের সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে মানুষে মানুষে বিভাজনের যে কোনও চেষ্টা রোখা যায়। বাংলার সংস্কৃতি আদতে মেলবন্ধনের সংস্কৃতি। বাংলা নববর্ষ এই শপথই গ্রহণের দিন।
Comments :0