Mahapanchayat

ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে কুস্তিগিরদের সমর্থনে মহাপঞ্চায়েত থেকে হুঁশিয়ারি

জাতীয়

Mahapanchayat


‘‘কুস্তিগিররা ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে’’, উত্তর প্রদেশে মুজফ্ফরনগরের মহাপঞ্চায়েত থেকে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই হুঁশিয়ারিই দিলেন কৃষক নেতারা। খাপ পঞ্চায়েত এবং কৃষক আন্দোলনের নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করবেন বলে এদিনের খাপ পঞ্চায়েত থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
‘ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন’ (বিকেইউ) নেতা এবং বালিয়ান খাপের প্রধান নরেশ টিকায়েতের ডাকে এই মহাপঞ্চায়েতে যোগ দেন পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, দিল্লির অনেকে। সংযুক্ত কিষান মোর্চার (এসকেএম) ডাকে এদিন দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা সহ দেশের নানা প্রান্তে অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদের গ্রেপ্তারির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। পুড়েছে ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের কুশপুতুল। পকসো সহ দু’টি আইনে এফআইআর দায়ের হওয়ার পরও ব্রিজভূষণ দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। পকসোতে অভিযোগ দায়ের হলে সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার হওয়ার কথা। কিন্তু ব্রিজভূষণ জনসভা করছেন, নিজের স্বপক্ষে বক্তৃতা দিচ্ছেন, কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে পালটা অভিযোগ তুলছেন, তাঁদের ব্যঙ্গ করতেও পিছপা হচ্ছেন না। দেশজুড়ে তুমুল প্রতিবাদ হলেও মোদী নীরবই। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে তাঁর মন্ত্রীসভার সদস্য বিদ্বেষভাষণে সুপরিচিত অনুরাগ ঠাকুরকে মাঠে নামিয়েছেন। ব্রিজভূষণকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারির দাবিতে এদিন যন্তর মন্তরে ছাত্র-যুব-মহিলা-শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুররা একযোগে স্লোগান তুলেছেন।

মহাপঞ্চায়েতে এদিন কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত জানান, শুক্রবার হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে বৈঠক হবে। সেই আলোচনা সভা থেকে পরবর্তী বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রের পদাধিকারীদের সঙ্গেও দেখা করা হবে। তারপরও যদি ব্রিজভূষণ গ্রেপ্তার না হয়, তাহলে আরও বড় আন্দোলন হবে।’’ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কবে তাঁরা দেখা করবেন, তা এদিন ঠিক হয়নি। মোদী সরকারকে কটাক্ষ করে টিকায়েত বলেন, ‘‘পকসোতে যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাঁকে প্রকাশ্যে কথা বলার অনুমতি দিয়ে রেখেছে সরকার। উনি বলে যাচ্ছেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী চুপ।’’ 
ব্রিজভূষণের গ্রেপ্তারির দাবি জানিয়ে রাস্তায় নেমে মার খেয়েছেন পদকজয়ী কুস্তিগিররা। তা-ও মোদী নীরবই থেকেছেন। রাগে-অপমানে সাক্ষী মালিক, বীনেশ ফোগট, সঙ্গীতা ফোগট, বজরঙ পুনিয়া হরিদ্বারে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে গিয়েছিলেন পদক। তখনও মোদীর মুখে কুলুপ। দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও দেশের সম্পদ বাঁচানোর চেষ্টা করেননি। কৃষক নেতাদের অনুরোধে সাক্ষীরা পদক ভাসাননি। অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ তাই তামাশা করে বলেছেন, ‘‘পদক দেওয়ার কথা ছিল গঙ্গাজি’কে। দিলেন কৃষক নেতাদের।’’ বীনেশরা পাঁচ দিন সময় দিয়েছেন মোদীকে। রবিবার না হলে ফের চরম কোনও সিদ্ধান্তের পথেই হাঁটবেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, নরেশ টিকায়েতই সাক্ষীদের পদক জলে ভাসানো থেকে আটকান মঙ্গলবার।
পাঞ্জাব, হরিয়ানা সহ বিভিন্ন জায়গায় এদিন এসকেএমের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কৃষকরা। ব্রিজভূষণের গ্রেপ্তারির দাবিতে ডেপুটি কমিশনার এবং সাব ডিভিসনাল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়েছে। এসকেএম এই স্মারকলিপিতে বলেছে, যন্তর মন্তরে কুস্তিগিরদের ধরনায় কেন্দ্রকে অবিলম্বে অনুমতি দিতে হবে। ব্রিজভূষণকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে পুলিশি হেপাজতে নিয়ে জেরা শুরু করতে হবে, যাতে চার্জশিট জমা দেওয়া যায় তাড়াতাড়ি। সুষ্ঠু বিচারপ্রক্রিয়ার দাবি জানানো হয়েছে। ক্ষুব্ধ কৃষক নেতারা বলেছেন, ‘‘এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কুস্তিগিররা বিক্ষোভ দেখাচ্ছন। অথচ ব্রিজভূষণকে এখনও সরকার গ্রেপ্তার করলো না।’’ এদিন অমৃতসরের ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের বাইরে কৃষকরা ব্রিজভূষণের কুশপুতুল পোড়ান কৃষকরা। একইভাবে হরিয়ানার হিসার, আম্বালা, ঝাজ্জর, ভিওয়ানিতেও বিক্ষোভ হয়েছে।

হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচন পরের বছর। আছে লোকসভা ভোটও। সাক্ষী মালিক, বীনেশ ফোগট, বজরঙ পুনিয়াদের ‘হোমটাউন’ এই রাজ্যই। দুই নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বিজেপি সেখানে কোমর বাঁধলেও দলের অন্দরের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। হিসার থেকে বিজেপি’র টিকিটে লোকসভা সাংসদ ব্রিজেন্দ্র সিং টুইট করে বলেন, ‘‘কুস্তিগিরদের যন্ত্রণা আমি অনুভব করতে পারছি। কতটা অসহায় অবস্থা না হলে তাঁরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে অর্জিত পদক গঙ্গায় ভাসয়ে দিতে চান। ভীষণ হৃদয়বিদারক ঘটনা।’’ এর আগে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজও কুস্তিগিরদের আন্দোলনে সমর্থন করেছেন। 
শিল্পী-কলাকুশলীরা কেউই বিশেষ এগিয়ে আসেননি কুস্তিগিরদের সমর্থনে। অভিনেতা আদিল হুসেন কুস্তিগিরদের সঙ্গে নির্মম আচরণে শিউরে উঠেছেন। তিনি টুইট করেছেন, ‘‘কুস্তিগিরদের প্রতিবাদের বেশ কিছু ছবি দেখলাম। যে ছবি খুব হতাশার, দুঃখের। আন্তর্জাতিক মঞ্চে পুরষ্কার জিতে তাঁরা সমস্ত ভারতীয়দের যে আনন্দ দিয়েছেন, যেভাবে গর্বিত করেছেন, তা কল্পনা করুন। এখন তাঁদের সঙ্গে এই ব্যবহার খুব দুঃখজনক! আমি আন্তরিকভাবে আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন। একটি গোটা প্রজন্ম, যাঁরা এই কুস্তিগিরদের একাধিক জয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছে, তাঁরা প্রশাসনের এমন উদাসীনতায় হতাশ হবে। বিশেষ করে, যখন বিষয়টি ভারতের যোগ্যতম কন্যাদের নিয়ে।’’

Comments :0

Login to leave a comment