Migrant Birds

গোয়ালপোখরে ভিড় জমাচ্ছে পরিযায়ী পাখির দল, খুশি পাখি প্রেমীরা

রাজ্য

Migrant Birds

তপন বিশ্বাস

বিশ্বের বৃহত্তম শামুকখোলের বিচরণভূমি রায়গঞ্জের কুলিক পাখিরালয় হলেও গোয়ালপোখরেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আরো অনেক বেশি ওই প্রজাতির পাখি আস্থানা গেড়েছে। এর আগে পাখি গণনা করা সম্ভব না হলেও স্থানীয়দের দাবি, কয়েক হাজার পাখি এসেছিল বিগত বছরগুলোতে। কুলিকের পাশাপাশি গোয়ালপোখর থানা চত্বরে ফি বছর ভিড় জমায় কয়েক হাজার ভিনদেশী পরিযায়ী পাখির দল। এবার গোয়ালপোখরে একমাস আগেই সদলবলে হাজির ভিন্‌দেশী পরিযায়ী পাখির দল। কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার এবং দক্ষিণ ভারত থেকে আসা পাখিদের ভিড়ে গমগম করছে কুলিক অভয়ারণ্য। তার সাথে পাল্লা দিয়ে গোয়ালপোখর থানা চত্বরে বড়ো বট গাছগুলিতে দেখা মিলছে ওপেন বিল স্টক , নাইট হেরন, ইগ্রেট ও করমোরেন্ট প্রজাতির পাখিদের। হাজার হাজার মাইল দূর থেকে জুন –জুলাই মাসে এখানে এসে বাসা বাঁধে পরিযায়ী পাখিরা। এখানেই ডিম ফুটে জন্ম নেয় শাবকরা। বর্ষা পেরিয়ে শরৎ যখন আসে, এরা উড়তে শিখে যায়। এরপর একটু বড়ো হলে ডিসেম্বর মাসে প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই আবার উড়ে যায় যে যার নিজের জায়গায়। কয়েক বছর থেকে গোয়ালপোখর থানায় পরিযায়ী পাখিদের দেখতে স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি বহিরাগতরাও ভিড় জমান। এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি। 


রাজ্য বন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত জুলাই মাসে প্রথম সপ্তাহ থেকে সাধারণত কুলিকের পাশাপাশি গোয়ালপোখর পাখিদের আগমন শুরু হয়। কিন্তু এবছর জুনের শুরু থেকেই গোয়ালপোখরে পরিযায়ীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। বন দপ্তর জানিয়েছে, ‘সার্কভুক্ত বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে ফি বছর এখানে ডিম পা়ড়তে আসে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানে থাকে তারা। আবার নিজেদের জায়গায় ফিরে যায়। কিন্তু এ বার একমাস আগেই চলে এসেছে। এটা আমাদের কাছে খুবই আশার খবর। মূলত কুলিককে কেন্দ্র করেই ওই পাখির দল আসে। পাখিরা খাবারের সন্ধানে ভিন্ন এলাকায় ছুটতে গিয়ে গোয়ালপোখরে আস্থানা গেড়েছে কয়েক বছর থেকে। আগে এলাকায় অনেকেই পাখি মারতো কিন্ত এখন মানুষ অনেক সচেতন। তারা ওই পাখিগুলিকে আপন করে নিয়েছে।’


জানা যায়, একাধিক কারণে কুলিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পরিযায়ীরা। তার মধ্যে সবথেকে বড়ো কারণটি ছিল কুলিক বনটি জাতীয় সড়কের পাশে হওয়া্র পাশাপাশি তৎসংলগ্ন এলাকায় অনেক কারখানা গড়ে উঠায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে ও খাদ্যের অভাব রয়েছে ওই এলাকায়। তাই পাখিগুলি বিকল্প আস্তানা খুঁজে গোয়ালপোখর থানা এলাকাকেই বেঁছে নিয়েছে। গোয়ালপোখর থানা চত্বরে গাছগুলি থাকায় ব্যাধ বা পাখি শিকারিরা হানা দিতে সাহস পায় না। এছাড়া এলাকায় একটি কথা প্রচলিত হয়ে গিয়েছে ‘পাখিগুলি থানার পাখি’। মাঠ ও খালবিলে পাখিগুলি যখন খাবার খেতে যায় ‘তাদের’ মেরে মাংস খাওয়ার কথা একবারও ভাবতে সাহস পায় শিকারিরা বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা । থানার কর্মীরা জানান, ‘পরিবেশের উন্নতির জন্যই পাখিরা এ বার আগেভাগে চলে এসেছে।’ সেই সঙ্গে তাদের ব্যাখ্যা, ‘পরিযায়ী পাখিদের একটা ঝাঁক আগে জায়গা দেখতে আসে। স্থানটা তাদের থাকার উপযুক্ত কি না, খাবার পাওয়া যাচ্ছে কি না, সে সব দেখার পরে তাদের সঙ্কেত পেলে বাকিরা পৌঁছয়।’
গোয়ালপোখর থানার অফিসারর জানান, ‘পাখিগুলি আমাদের থানার অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে পাখি দেখতে আসেন আমাদের থানাতে। পাখিদের যাতে কেউ অত্যাচার করতে না পারে সেই বিষয়ে থানার প্রতিটি কর্মীর নজর থাকে।’

Comments :0

Login to leave a comment