আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার রুম ভাঙচুরের চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল। এই সেমিনার কক্ষেই মিলেছিল চিকিৎসক-ছাত্রীর দেহ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই খবর মিলতেই হাসপাতাল চত্বর থেকে বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীরা যাচ্ছেন বাধা দিতে।
মঙ্গলবারই আরজি কর কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ছাত্রছাত্রীরা বলছেন, প্রমাণ লোপাট করতেই সিবিআই আসার আগে সেমিনার হলে ভাঙচুরের চেষ্টা হচ্ছে।
এদিনও ছাত্রছাত্রী, চিকিৎসকদের সঙ্গে বিক্ষোভে শামিল রয়েছে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই এবং সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। এই সংগঠনের কর্মীরাও আরজি কর চত্বরে বিক্ষোভস্থল থেকে যাচ্ছেন বাধা দিতে।
সিবিআই তদন্ত শুরু করার ঠিক আগেই সেমিনার রুম বা সংলগ্ন কক্ষে সংস্কার প্রমাণ লোপাট করতেই। ৯ তারিখ চিকিৎসক-ছাত্রীর দেহ মেলার দিন থেকেই প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ তীব্র রাজ্য সরকার এবং পুলিশের বিরুদ্ধে। কক্ষ সংস্কারের সিদ্ধান্ত জানাজানি হতেই এদিন আরজি কর চত্বরে বিক্ষোভরত সব অংশ সোচ্চারে বলেছে, মূল অপরাধীদের আড়ালই করতে চাইছে সরকার। জরুরি বিভাগে এই সেমিনার কক্ষ থেকেই মিলেছিল নিহত চিকিৎসক-ছাত্রীর রক্তাক্ত দেহ। পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও দেহের সর্বত্র ভয়াবহ নিপীড়নের ছবি। এই কক্ষেই রয়েছে নমুনা, প্রমাণ।
চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টস’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা নিশ্চিত প্রমান লোপাটের যে আশঙ্কা আমরা করেছিলাম তা দৃঢ় হচ্ছে। কাল (বুধবার) সকাল দশটায় সিবিআই তদন্তভার গ্রহণ করার আগেই সব কাজ সেরে ফেলা হচ্ছে।’’
এই মঞ্চের পক্ষে ডাঃ পুণ্যব্রত গুন এবং ডাঃ হীরালাল কোনার জানিয়েছেন, সকাল ৮টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত আউটডোর এবং জরুরি পরিষেবা বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে চিকিৎসক সমাজ। তাঁরা বলেছেন, ‘‘পরিষেবা বন্ধ থাকবে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে ও ব্যক্তিগত চেম্বারে।’’ তার জন্য জনতার কাছে অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার কথাও বলেছেন তাঁরা। মঞ্চের পক্ষে বলা হয়েছে, ‘‘আশা করি জনগন বুঝতে পারছেন কেন আমরা এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম, আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন। চিকিৎসক-জনগণ ঐক্য জিন্দাবাদ।’’
বিক্ষোভরত চিকিৎসকদের একাংশের আশঙ্কা ঘটনাস্থলের ডিএনএ নমুনাও নষ্ট করে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ দেখা যায় হলুদ পোশাক পরা, পিছনে লেখা ‘কেপি’, মানে কলকাতা পুলিশ, ঢুকছে সেমিনার কক্ষের দিকে। আরজি কর হাসপাতাল চত্বরে বসা বিক্ষোভের মঞ্চে এই খবর হু-হু করে ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত ছাত্রছাত্রী,চিকিৎসক এবং ছাত্র-যুব-মহিলারা বাধা দিতে ছুটে যান। ছড়িয়ে পড়ে যে পুলিশের পোশাক পরিয়ে নিজেদের লোক ঢুকিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।
হাসপাতালে হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক এবং ছাত্রীদের যে বিশেষ লক্ষ্য বানানো হচ্ছে, প্রতিবাদ জানালে যে কোনও ছাত্রছাত্রীকে শাসানির মুখে পড়তে হচ্ছে, সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা বিক্ষোভ মঞ্চেই জানিয়েছেন ডাক্তারি ছাত্রী ঋকন্যা বাগচী। জানিয়েছেন যে তাঁদের অনেককেই বিপন্ন হতে হয়েছে।
একটি ভিডিও-তে দেখা গিয়েছে যে হাসপাতালের একটি ঘরের দেওয়াল ভাঙা। করিডোরের অন্য প্রান্তে রয়েছে পুলিশ। যদি সেমিনার কক্ষই হয়, তা’হলে পুলিশের সামনে তা ভাঙা হলো কিভাবে, তীব্র ক্ষোভে এই প্রশ্ন তুলছেন বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত সব অংশ।
কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় এদিন দুপুরে। নিহত চিকিৎসক-ছাত্রীর বাবা বলেছেন, ‘‘এই নির্দেশে খুশি হওয়ার কারণ নেই। তদন্তে প্রকৃত দোষীরা শাস্তি হোক, আমরা বিচার চাই।’’
Comments :0