কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি। রাঙাপানিতে দুর্ঘটনাস্থলে এই তথ্য জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তবে গত কয়েকবছর পরপর দুর্ঘটনায় রেলের নিজস্ব তদন্ত হলেও শেষ পর্যন্ত সুপারিশ কার্যকর না করার অভিযোগ প্রবল।
সোমবার নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের কাছে রাঙাপানিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে পিছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি মালগাড়ি। মৃত্যু হয়েছে মালগাড়ির চালক এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গার্ডের। এদিন রাত পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। সংঘাতে ছিটকে পড়ে কামরা। একটি অপরটির ওপরে উঠে যায়। আহত ৪৬ যাত্রীর নামের তালিকা দিয়েছে রেল।
বৈষ্ণব বলেছেন, উদ্ধারের কাজ সম্পূর্ণ। উত্তর-পূর্বে রেল যোগাযোগ দ্রুত চালু করার ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এখন।
এদিন সকালে রেল বোর্ড প্রাথমিক অনুমান হিসেবে জানায় যে মালগাড়ির চালক সিগন্যাল না মেনে গাড়ি চালানোয় এই দুর্ঘটনা হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু রেলের সূত্র থেকেই জানা গিয়েছে যে ভোর ৫টা ৫০ থেকে বিকল ছিল এই লাইনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা। কাছেই রানিপাত্রের স্টেশন মাস্টার স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং সিস্টেম খারাপ থাকার বার্তা পাঠিয়েছিলেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের চালককে।
বারবার সিগন্যালিং ব্যবস্থায় ত্রুটির কারণে রেল দুর্ঘটনা দেখা যাচ্ছে। বিলাসবহুল সুপারফাস্ট গোত্রের ট্রেন চড়া ভাড়া হাঁকিয়ে চালু করে প্রচারেও নামতে দেখা যাচ্ছে বিজোপি সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কিন্তু যাত্রী সুরক্ষায় গুরুতর গাফিলতির অভিযোগ উঠলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না রেল। গত বছরের জুনেই ওঢিশার বালেশ্বরে বাহানাহা স্টেশনের কাছে তিন ট্রেনের সংঘর্ষে ২৯৮ জনের মৃত্যু হয়।, সেখানেও সিগন্যালিং ব্যবস্থার ত্রুটিই নজরে আসে। দেখা যায় রেল মুখ্যত কর্মচারীদের ওপর দায় ঠেলে দিতে ব্যস্ত।
গত চার বছরে ২১৭টি ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছে। ২১১ বার সিগন্যাল বিকল হয়ে যাওয়ার ঘটনা চিহ্নিত। যাত্রী সুরক্ষায় জোর দিয়ে কাজ না এগনোয় বারবারই দুর্ঘটনা হচ্ছে। বৈষ্ণব এবার রেলের সুরক্ষা কমিশনারের নজরদারিতে তদন্তের কথা বলছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এবারও কী সঠিক গলদ চিহ্নিত হবে? নাকি শেষ পর্যন্ত রেলকর্মীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে দায়!
রেলকর্মীদের বিভিন্ন অংশ মনে করিয়েছেন যে কর্মীর অভাব বড় সংকট ডেকে আনছে। কর্মরত প্রয়োজনীয় বিশ্রামও পাচ্ছেন না। সুরক্ষার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিভাগেও পড়ে রয়েছে খালি পদ।
এদিন আহত যে যাত্রীদের তালিকা দেওয়া হয়েছে: পার্থ সারথি মণ্ডল, মাখন সেন, মনোজ চন্দ্র দাস, ছবি মণ্ডল, তন্ময় ঘোষ, সুশীল মণ্ডল, শ্রীকান্ত পাত্র, শৌনক সাহা, পবন রবিদাস, অজিত মণ্ডল, শিবা মণ্ডল, পুতুল মণ্ডল, শক্তি বিশ্বাস, মন কুমার, বিশ্বনাথ শর্মা, অনুপ দাস, মিঠু সিনহা, অনিতা দাস, ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল, রাজকুমার বটব্যাল, স্নেহা মণ্ডল, হাসান শেখ, রিপা ঘোষ, রুপন ঘোষ, গোপাল ঘোষ, শম্পা পাল, সন্দি সরকার, হাসিবুল, নিতাই পাল, খুশি সরকার, চণ্ডী সরকার, জিমি দত্ত, দিলদার হোসেন, শান্তনু ভুইঞাঁ, সোহেল রিয়াল, স্মৃতি মণ্ডল, রঞ্জিত কুমার, বিলাস মজুমদার, সুদেশ লোহার, সজ্ঞ্জয় পাল, অরূপ রায়, সুরেশ শেখর পাণ্ডা, পাপড়ি ভৌমিক, নাসিবুল শেখ। আহত দুই যাত্রীর নাম জানাতে পারেনি রেল।
Comments :0