অর্পন সেনগুপ্ত
রবিবার ডার্বি ম্যাচ বাতিল এবং আরজি করের ঘটনার বিচার চেয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে পথে নেমেছিলেন মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। খেলার মাঠে একে অপরের যুযুধান দুই প্রতিপক্ষের একসাথে পথে নামার মতো বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকলো গোটা দেশ। নির্ধারিত সময় ৪ টের কিছু পরেই সল্টলেক ষ্টেডিয়াম মেট্রো স্টেশনের গেটের সামনেই শুরু হয় প্রতিবাদ। ক্যামেরার হাজারো লেন্স এই দৃশ্য বন্দি করতে ব্যাস্ত ছিল।
ঠিক বিকেল ৫ টা নাগাদ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পুলিশের সংখ্যা। ৩ টে পুলিশের ভ্যান এসে দাঁড়ায়। সমর্থকরা শান্তিপূর্নভাবে আন্দোলন করলেও পুলিশ যেন আগে থেকেই অতি তৎপরতা দেখাচ্ছিল এক হাতে লাঠি, এক হাতে ঢাল ও মাথায় হেলমেট পরে। সেইখানে মহিলা পুলিশের সংখ্যা খুবই কম ছিল। হঠাৎই সমর্থকদের লক্ষ্য করে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। কিছুদূরে যাওয়ার পর ফের শুরু হয় আন্দোলন। ধীরে ধীরে লোক বাড়াতে থাকে আন্দোলনে। বেশ কয়েকটি স্লোগান ওঠে ওই আন্দোলনে। ' জোট বেঁধেছে বাঙাল ঘটি, ভয় পেয়েছে হাওয়াই চটি ' ।
স্লোগান ওঠার পরে পুলিশের তৎপরতা যেনো আরো খানিকটা বেড়ে যায়। পুরুষ, মহিলা নির্বিশেষে সকলের ওপর হয় লাঠিচার্জ। এরপরে পুলিশের উদ্দেশ্যে সমর্থকদের বার্তাসুলভ স্লোগান ওঠে
' পুলিশ তুমি চিন্তা করো তোমার মেয়েও হচ্ছে বড় '।
কিছুক্ষণ পর অবশ্য আন্দোলনের মাত্রা বাড়তে পুলিশের ভূমিকা পরিবর্তিত হয় নীরব দর্শকে। এরই মাঝে কোন কারণ ছাড়াই পুলিশ ভ্যানে তোলা হয় দুই একজন ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান সমর্থককে। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় চাপের মুখে। গাড়ির সামনে বসে পড়ে বহু সমর্থক।
শেষের দিকে সবাই চমকে দিয়েই আন্দোলনে সস্ত্রীক যোগদান করেন মোহনবাগানের বর্তমান দলের অধিনায়ক শুভাশীষ বোস।
প্রায় ৪ ঘণ্টা বাইপাসের সব রাস্তা বন্ধ ছিল সেদিন। এই আন্দোলনে প্রশাসনকে একপ্রকার ১০ গোল দিলো ' মহাইষ্টবাগানের ' সমর্থকগন।
সোমবার বিচারের দাবিতে চলতে থাকা এই আন্দোলনের রেশ ছড়িয়ে পড়ল আন্তর্জাতিক স্তরেও। অনূর্ধ্ব ২০ সাফ কাপের ম্যাচে ভুটানকে ১ - ০ গোলে হারিয়েছে ভারত। গোল করেন মনিরুল মোল্লা। এরাজ্যের ছেলে। ভাঙড়ের ছেলে। গোলের পর জার্সি খুলে সেলিব্রেশন করেন তিনি। তবে এই সেলিব্রেশনের বেশির ভাগটাই ছিল প্রতিবাদ। জার্সির ভিতরের ইনারে লেখা ছিল বিচার চাই। এছাড়াও, এই একইদিনে কলকাতা লিগের ম্যাচেও মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ফুটবলাররা একটি ব্যানারে প্রতিবাদ জানান। যাতে লেখা ছিল জাস্টিস ফর আরজিকর। অর্থাৎ হাজারো কাঁটা পেরিয়ে আবারো রক্তাক্ত পায়েই চলছে এই প্রতিবাদ।
Comments :0