MGNREGA

১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ তুফানগঞ্জে

রাজ্য জেলা

অমিত কুমার দেব- তুফানগঞ্জ

রেগার কাজের মজুরি প্রাপকের তালিকায় নাম মৃত ব্যক্তির। মজুরি প্রাপকের তালিকায় নাম রয়েছে তৃণমূলের ছোট-বড় নেতাদের স্ত্রী, কারও বাবা- মা, আবার কারও সন্তানদের। তাঁদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদেরও নাম রয়েছে এই তালিকায়। আদৌ কি তাঁরা এই রেগার কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন? উঠছে প্রশ্ন। আর এই প্রশ্ন তুলছে তুফানগঞ্জ ২নং ব্লকের শালবাড়ি ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রশাসন। এই ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতি অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৭৭টি জব কার্ডের মজুরি বন্ধের দাবি জানিয়ে তুফানগঞ্জ ২নং ব্লক দপ্তরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মনোরঞ্জন বাড়িয়া।
মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণার পর রেগা শ্রমিকদের মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার আগে গোটা রাজ্যের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও শিবির করে তথ্য সংগ্রহ করছে রাজ্যের শাসক দল। এরই মাঝে এই শালবাড়ি ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতে রেগার কাজের বকেয়া মজুরি প্রাপকদের একটি তালিকা প্রকাশ্যে আনে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রশাসন। আর এই তালিকা নিরীক্ষণ করতে গিয়ে কার্যত চোখ কপালে ওঠে গ্রাম পঞ্চায়েত আধিকারিকদের।
আশ্চর্যজনক ভাবে দেখা যায় ২০২১- ২২ সালের অর্থ বর্ষের এই রেগার মজুরি প্রাপকের তালিকায় জ্বলজ্বল করছে এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বজরাপুর গ্রামের বাসিন্দা জোসনা বর্মন নামে একজন রেগা শ্রমিকের নাম। অথচ ২০১৯ সালে মারা গেছেন তিনি। মৃতের শাশুড়ি সুখময়ী বর্মন বলেন, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে আবেদন জানানোর পর মিলতো রেগার কাজ। তবে ২০১৯ সালে মারা গিয়েছেন তার পুত্রবধূ। মরে গিয়েও ২০২২সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি রেখা শ্রমিক হিসেবে কিভাবে মাটি কাটলেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরাও হতবাক।
এখানেই শেষ নয়, এই রেগার মজুরি প্রাপকের তালিকায় নাম রয়েছে তৃণমূলের তুফানগঞ্জ-২ নং ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি রথীন মন্ডলের স্ত্রী মালতী মন্ডলের নাম। বর্তমান শালবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের  তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি মিলন বর্মনের বাবা প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য কমলাকান্ত বর্মনের নামও। এছাড়াও  এই তালিকায় নাম রয়েছে  তৃণমূলের প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জ্যোতিষ বর্মার ছেলে জয়দীপ বর্মন, তৃণমূল ঘনিষ্ঠ স্থানীয় ঠিকাদার খোরশাদ শেখ, তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির চেয়ারম্যান পরিমল কার্যীর স্ত্রী মৌসুমী কার্যী, তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য যোগেশ রায়, এমনকি স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের বোচামারি হাইস্কুলের পার্শ্ব শিক্ষিকা গীতা কার্যীরও নাম রয়েছে এই মজুরি প্রাপকের তালিকায়।
এব্যাপারে শালবাড়ি ২নং গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মনোরঞ্জন বাড়িয়া জানান, রেগা প্রকল্পে প্রকৃতই যারা মাটি কেটেছেন, তালিকায় তাদের নাম নেই। অথচ মরে গিয়েও রেগার কাজ করেছেন জোৎস্না বর্মন। সেই সাথে তৃণমূলের ছোটো- বড় নেতাদের পরিবার ও তাঁদের আত্মীয়-স্বজনের নাম রয়েছে রেগার মজুরি প্রাপকের তালিকায়। এরা কোনদিনই ১০০দিনের কাজ করেননি। তৃণমূল পরিবারের ৭৭টি জব কার্ডের মজুরি বন্ধের দাবি জানিয়ে  বিডিও- র কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
এই বিষয়ে শালবাড়ি ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল অঞ্চল কমিটির সভাপতি মিলন বর্মন জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের রেগা প্রকল্পের আওতায় এই কাজ হয়েছে। তাই কে কাজ করলো, আর কার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকবে গোটাটাই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিষয়। তাতে তৃণমূলের কোনও হাতে নেই।
তবে এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) নেত্রী শিখা আদিত্য বুধবার বলেন, শুধু শালবাড়ি ২নং গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই নয়, বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এধরনের দুর্নীতি ইতিমধ্যেই সামনে আসতে শুরু করেছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত প্রশাসনের। তিনি বলেন, এটা একটা সাংঘাতিক দুর্নীতি। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে প্রশাসনকে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। এব্যাপারে প্রশাসনকে দাবি জানাবে সিপিআই(এম) বলে এদিন জানান তিনি।
যদিও এব্যাপারে তুফানগঞ্জ-২নং ব্লকের বিডিও ডালকি লামা জানান, গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে একটি অভিযোগ পত্র জমা পড়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

Comments :0

Login to leave a comment