Hoogly CPIM

সর্বোচ্চ সহমতের ভিত্তিতে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে

জেলা

অলক বিশ্বাস: সিঙ্গুর 
দেশজুড়  এক অস্থির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রের বিজেপি ও রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল দুই দলই এই কাজে লিপ্ত। মানুষের প্রতিদিনকার সমস্যা, অভাব, অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে মানুষের নজর ঘোরাতেই সুকৌশলে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করছে। রবিবার সিঙ্গুরে সিপিআই(এম) হুগলী জেলা ২৫তম সম্মেলন উদ্বোধন করে একথা বলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুমিত দে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকা সাজানো হয়েছে লাল পতাকায়। এলাকার নামকরণ করা হয়েছে কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি ও কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নগর। মঞ্চের নামকরণ করা হয়েছে কমরেড রূপচাঁদ পাল ও কমরেড সুহৃদ দত্ত মঞ্চ।
সুমিত দে প্রতিনিধি সম্মেলনে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, বিদেশ নীতি ও কর্মসংস্থানের প্রশ্নে বিজেপি জোট সরকারের ব্যর্থতার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যা করেন। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, শ্রমিক শোষণ করে মুনাফা বাড়ানোর কাজ চলছে সরকারি মদতে। পরিষেবা না দিয়ে, মজুরি না বাড়িয়ে চলছে ধান্দার গণতন্ত্র। দুর্নীতি, নৈরাজ্যের মধ্যে শেয়ার বাজারের নামে  মানুষকে লোভের ফানুস দেখানো হচ্ছে। পুঁজিপতিদের ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে গরিবের কষ্টার্জিত টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। যেখানে যতটুকু শক্তি আছে সেখানে সিপিআই(এম) ধারাবাহিক লড়াই জারি রেখেছে। তাকে শক্তিশালী করতে সমমনোভাবাপন্ন বামপন্থী দল ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে একত্রিত করার কাজ অব্যাহত রয়েছে। 
এই লড়াইকে দুর্বল করতে দক্ষিণপন্থীরা বামপন্থীদের কোনঠাসা করতে চাইছে। তার মধ্যে দাঁড়িয়েও প্রতিদিন লড়াই, গণআন্দোলন শক্তি সঞ্চয় করছে। 
তিনি বলেন, রাজ্যে আসন শূন্য হলেও গণআন্দোলনের শক্তিকে ভয় পাচ্ছে শাসক দল। সুকৌশলে বামপন্থীদের সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাতে গরিব মানুষ ভুল বুঝে লাল পতাকা ছেড়ে দূরে সরে যায়। এই চাতুরিকেই প্রতিহত করতে হবে আমাদের। এটাই আশু কর্তব্য। উন্নত সমাজ গঠনের লড়াইতে আরও নতুন নতুন মানুষ, নবীন প্রজন্মকে সঙ্গে আনতে হবে। শ্রমের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার চেষ্টাকে শ্রেণিসংগ্রামের মধ্য দিয়েই তার জবাব দিতে হবে। পার্টিকর্মী, সমর্থকদের এখানে কোন ঢিলেমি যেন না থাকে। খুব সতর্কভাবে নিজের নিজের এলাকায় সেই এলাকার চাহিদা অনুযায়ী কর্মসূচি গ্রহণ করে তাকে রুখতে হবে।
সুমিত দে বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারতীয় সংস্কৃতি, সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে গ্রাস করতে চাইছে উগ্র হিন্দুত্ববাদ। বিনোদনের মোড়কে ধনতন্ত্রের বুর্জোয়া ভাবনা ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের গর্বের ঐতিহ্যকে ভুলিয়ে দিতে চায় আরএসএস। তাই প্রতিদিনই ওদের প্রচারের ধারা ধারা বদলে যাচ্ছে। আকৃষ্ট করতে চায় সাধারণ মানুষকে। প্রকৃত সত্যকে আড়াল করতে মিথ্যার অবয়ব তৈরি করছে ওরা। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মিডিয়ায় মোদী, মমতা ও ট্রাম্পকে সামনে আনা হচ্ছে। অথচ এই সময়ে ঘটা বামপন্থীদের সাফল্যগুলি তেমন ফলাও করে প্রচার করা হয় না। বাংলাদেশে কেবল হিন্দুরা নয়, বিরোধী, প্রগতিশীল মানুষের ওপরও আক্রমণ হচ্ছে। এখানকার মিডিয়ার চোখে পড়ছে না। 
তিনি বলেন, মানুষের চোখ, কান, মন সবই সতর্ক। ভয় কাজ করছে। একমাত্র গণআন্দোলনই পারে তা ভেঙে দিতে। যেসব গরিব মানুষ আমাদের বাইরে চলে গিয়েছিলেন তাদের মূল্যায়ন, বর্তমান উপলব্ধির কথা বুঝে গণতৎপরতার মধ্যে দিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে আনতে হবে। কমিউনিস্ট পার্টি মানুষের পার্টি। বিকল্প এবং উন্নত প্রগতিশীল মতাদর্শের পার্টি। তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে আমাদের। বর্তমান সময়ে সোশাল মিডিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাকে ব্যবহার করতে হবে ব্যক্তি হিসাবে, মানুষ হিসাবে, পার্টির কর্মী হিসাবে। রাজ্যজুড়ে এত লুট, দুর্নীতি, বেনিয়ম, আবাস যোজনায় স্বজনপোষণ, সেসব সাধ্যমত তুলে ধরতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে। তাঁর বক্তব্যে এসেছে সিঙ্গুরের প্রসঙ্গ। সেদিন বামফ্রন্ট সরকারের বিরাট কর্মযজ্ঞকে বানচাল করেছিল যারা, তারা আজ ক্ষমতায়। বলেছিল তারাই বিকল্প। আজ সিঙ্গুরের মানুষ বুঝতে পারছেন কী পেয়েছেন তাঁরা! আজ ঐ জমিতে শিল্প, কৃষি, কিছুই নেই।
দলুইগাছা বাণীসঙ্ঘ স্টেডিয়ামে খসড়া সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করে বিদায়ী জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, কুসংস্কারের মাধ্যমে বিজেপি, আরএসএস অতীত দিনগুলিকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে। ধর্মচর্চার নাম করে ধর্মান্ধ করে চায়। জেলায় যেখানে যতটুকু সুযোগ আছে, হস্তক্ষেপ করতে হবে। যুগ যুগ ধরে বৈচিত্রের মধ্যে যে ঐক্যের সুর ভারতবর্ষে রয়েছে, তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। যা সিপিআই(এম) ছাড়া কেউ পারবে না। সঙ্গে নিতে হবে অন্য বামপন্থীদেরও। সর্বোচ্চ সহমতের ভিত্তিতে শ্রেণিশত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, আরামবাগ থেকে সিঙ্গুর কোনও ঘটনাই বিচ্ছিন্ন নয়। সতর্ক পর্যবেক্ষণে তার মূল্যায়ণ করে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এই সময়কালে অনেক ঘটনাতেই আমরা সফল হয়েছি। শ্রেণিশত্রুর আক্রমণকেও মোকাবিলা করা গেছে। জেলার অনেক জায়গায় বামপন্থীরা শক্তি সঞ্চয় করেছেন। নতুন কর্মী তৈরি হয়েছে। আন্দোলনে গতি এসেছে। শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুরদের বাদ দিয়ে কোন আন্দোলন শক্তিশালী হতে পারে না। এদিন প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি বীথি বন্দ্যোপাধ্যায়।
সম্মেলনের শুরুতে পতাকা উত্তোলন করেন পার্টির প্রবীণ নেতা শান্তশ্রী চ্যাটার্জি। মঞ্চে রয়েছেন পার্টিনেতা  অমিয় পাত্র, অমল হালদার, সুখেন্দু পানিগ্রাহী, সর্বানীপ্রসাদ সাঁতরা ও মনোদীপ ঘোষ। সম্মেলন পরিচালনা করছে রামকৃষ্ণ রায়চৌধুরি, ভাস্কর রায়, প্রদীপ সাহা, আব্দুল হাই, বন্যা টুডু ও দীপ্তি চ্যাটার্জিকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী। সম্মেলন চলবে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। 
 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment