Khejur Gur

পুরুলিয়ায় হাজির শিউলিরা, বাড়ছে খেজুর গুড়ের চাহিদা

জেলা

শীতের মরশুম মানেই ভিন জেলা থেকে সিউলির দল এসে হাজির হয় প্রান্তিক এই জেলা পুরুলিয়ায়। খেজুর রস সংগ্রহ করে খেজুর গুড় তৈরি করে পাঠানো হয় পুরুলিয়া জেলা সহ অন্যান্য জেলা এমনকি ঝাড়খণ্ডেও। এই জেলার খেজুর রসের চাহিদা বেশি কারণ পাথুরে জমির খেজুর রস সুস্বাদু হয়। তাই এই জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ফাঁকা জায়গায় খেজুর পাতা কিংবা তাল পাতার তাঁবু খাঁটিয়ে মানুষজন বসবাস করছেন আর তৈরি করছেন খেজুর গুড়। শীতের মরশুমে চাহিদা বাড়ছে এই জেলার খেজুর গুড়ের। স্থানীয় পর্যটক সহ ভিন জেলার পর্যটকরা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করার সময় রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে খেজুর গুড় সংগ্রহ করছেন।


জেলা ছাড়িয়ে ভিন জেলা এবং ভিন রাজ্যেও রপ্তানি হচ্ছে পুরুলিয়ার সুস্বাদু খেজুর গুড়। শীতের মরসুমে আয়ের নতুন পথ দেখাচ্ছে এই খেজুর গুড়ের ব্যবসা। পুরুলিয়ার লাল রুক্ষ মাটিতে খেজুর গাছের বিস্তার ভালো হয়। প্রায় প্রত্যেকটি রাস্তার ধারে রয়েছে সারি সারি খেজুর গাছ। বিনা যত্নেই সেই কাজগুলো যথেষ্ট পরিপুষ্ট। এই মাটির খেজুর গাছের রসের স্বাদও অনেক মিষ্টি। তাই শুধু জেলার নয় ভিন জেলা থেকে গুড় প্রস্তুতকারী সিউলিরা পুরুলিয়ায় এসে গুড় তৈরি করেন। শীতের আগেই বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে খেজুর গাছ লিজ নিয়ে নেন গুড প্রস্তুতকারক ব্যবসায়ীরা। শীতের মরশুমে খেজুর গাছ থেকে গাছের রস সংগ্রহ করেন তাঁরা। বেলার দিকে খেজুর গাছের ডগায় মাটির হাঁড়ি( অধুনা প্লাস্টিক কলসি) বেঁধে দেওয়া হয়। দিনের আলো ফোটার সাথে সাথেই গাছ থেকে খেজুর রস ভর্তি হাড়ি নামিয়ে আনেন সিউলির দল। তারপর সেই রস সংগ্রহ করে আগুনে ফোটানো হয়। বিশাল এলাকা জুড়ে উনুন তৈরি করা হয়। শুকনো পাতা সংগ্রহ করে জ্বালানো হয় আগুন। তারপর সেই গুড় প্রস্তুত করা হয়। সেই গুড় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তো বটেই ভিন জেলা এবং ভিন রাজ্যেও রপ্তানি করা হয়। ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে সেই খেজুর গুড় বিক্রি করা হয়। পাটালি বিক্রি করা হয় দেড়শ টাকার বেশি দামে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বিপুল পরিমাণে এই খেজুর গুড় তৈরি করা হয়। এই শীতের মরশুমে খেজুর গুড় প্রস্তুত করার পর তা বিক্রি করে ভালো লাভের মুখ দেখছেন গুড় প্রস্তুতকারীরা। গুড প্রস্তুতকারী ব্যবসায়ী তথা সিউলি আব্দুল করিম খান, জুম্মান আলী পাঠান প্রমুখদের বক্তব্য পুরুলিয়ার খেজুর রসের স্বাদ ভীষণ ভালো। তাই এখানকার খেজুর রসের তৈরি গুড়ের চাহিদা বেশি। পুরুলিয়ার বাসিন্দা শিক্ষিকা ইন্দ্রানী মাইতি, শিক্ষক সঞ্জীব খান, অধ্যাপিকা পৌলোমী মাল দুয়ারী, শিক্ষক দুর্গাদাস ব্যানার্জি, গৃহবধূ রীনা কুন্ডু সাও প্রমুখদের বক্তব্য এই জেলার খেজুর গুড়ের স্বাদ সত্যিই ভালো। যদিও ইদানিং কিছু কিছু গুড় ব্যবসায়ী গুড় তৈরির সময় সঙ্গে চিনিসহ বিভিন্ন সামগ্রী মিশিয়ে ব্যবসা করছেন। কিছু কিছু ব্যবসায়ীর মধ্যে মানুষকে ঠকানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই জেলার মানুষদের খেজুর গুড় তৈরির বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয় নি। তাই ভিন জেলার ব্যবসায়ীরা এসেই এখানে কয়েক মাস চুটিয়ে ব্যবসা করছেন।

Comments :0

Login to leave a comment