Scarcity of electricity

ব্যাপক হারে লোডশেডিং সত্ত্বেও বিদ্যুৎ ঘাটতি মানছে না রাজ্য

রাজ্য

  তীব্র গরমে দফায় দফায় লোডশেডিং-এ চরম ভোগান্তিতে কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। কোথাও একনাগাড়ে ২-৩ ঘন্টা, আবার কোথাও এক একেক বারে ৪০- ৪৫ মিনিট করে বারে বারে উধাও হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। দুঃসহ গরমে প্যাঁচপ্যাচে ঘাম জর্জরিত শরীরে ফ্যানের হাওয়াটুকুও মিলছে না বাড়িতে বাড়িতে। লোডশেডিং-এর জেরে রাতে ঘুমের দফারফা। চলছে না জলের পাম্প, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে পানীয় জলের আকাল দেখা দিয়েছে এলাকায় এলাকায়। রাজ্য সরকার দাবি করেছে, কোনও বিদ্যুৎ ঘাটতি নেই। তাহলে প্রশ্ন এত লোডশেডিং কেন। সিইএসসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কলকাতায় বিদ্যুৎ ঘাটতি নেই। 
একে গুমোট গরম, তার ওপর বিদ্যুৎ না থাকায় নাজেহাল হয়ে পড়ছেন মানুষ। একই অবস্থা শহরতলিতেও। শুধু সিইএসসি এলাকা নয়, জেলাগুলি থেকে আরও মারাত্মক চেহারায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবর মিলছে। কোথাও উৎপাদন কমে গিয়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আবার কোথাও লাইন ওভারলোডেড হয়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটছে, বাড়ছে কেবল ফল্টের সংখ্যা। অথচ রাজ্য সরকারের দাবি, রাজ্যে পর্ষদ এলাকায় বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত। ক্ষুব্ধ মানুষের প্রশ্ন, তাহলে এত লোডশেডিং-এর এত বাড়বাড়ন্ত কেন। 
পাইকপাড়া থেকে জোকা,কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও দফায় দফায় লোডশেডিং-এর অভিযোগ উঠছে। সিইএসসি সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতার অতিরিক্ত লোড বহন করতে গিয়ে ফল্ট হচ্ছে বিদ্যুতের কেবলে। এই গরমে বিভিন্ন অফিসে এবং বাড়িতে এসি’র চাহিদা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে, দিনরাত এসি চলছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। ফলে হঠাৎ হঠাৎ ওভারলোডেড হয়ে পড়ছে বন্টন সিস্টেম। যখনই এই ওভারলোড হচ্ছে, তখনই সুরক্ষার প্রশ্নে বিদ্যুতের লাইন অফ হয়ে যাচ্ছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। সেটি আবার ঠিক করতে কিছু সময় লাগছে ফলে লোডশেডিং-এর কবলে পড়ছেন মানুষ। তবে সিইএসসি’র এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বহু গ্রাহকই। তাঁদের প্রশ্ন, এই গরমে যে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে তা আগে থেকেই তো জানা ছিল। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন।     
অন্যদিকে রাজ্য সরকার যখন দাবি করছে যে রাজ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে উদ্বৃত্ত্ব, সেখানে গত কয়েকদিন ধরেই গোটা রাজ্যেই লোডশেডিং-এর কবলে পড়ছেন মানুষ- অভিযোগ এমনই। ক্ষুব্ধ মানুষের প্রশ্ন, ঘাটতি না থাকলে কেন এত লোডশেডিং? জানা যাচ্ছে মজুদ কয়লার অভাবে মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ ওয়ার্কমেন্স ইউনিয়ন’র বক্তব্য, উৎপাদনে সাফল্যের জন্য অতি সম্প্রতি বক্রেশ্বর ও সাঁওতালডি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পুরষ্কার পেয়েছে। এই সাফল্য বর্তমান রাজ্য সরকার বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে তাঁদের সাফল্য বলে দাবি করতে শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ ওয়ার্কমেন্স ইউনিয়ন’র নেতা তিলক কানুনগো বলেন, গত ১২ বছরে এই রাজ্যে ১ ইউনিট বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা এই তৃণমূল সরকার করতে পারেনি। উপরন্তু রাজ্যে শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে। তা সত্ত্বেও লোডশেডিং রোখা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার বেলা ৩ টা নাগাদ বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি এলাকা, সিইএসসি এলাকা, ডিভিসি , ডিপিএল সহ গোটা রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২,২০০ মেগাওয়াট। অপরদিকে এই সময়ে সাপ্লাই ছিল ৬৮০০ মেগাওয়াট। এই চিত্র থেকেই বোঝা যাচ্ছে কি ব্যাপক বিদ্যুৎ ঘাটতির মধ্যে দিয়ে রাজ্য যাচ্ছে ।
ওদিকে ব্যাপক বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত বিদ্যুৎ কর্মীরা তৃণমূলী বাহিনীর হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, যাঁদের অধিকাংশই হচ্ছেন ঠিকা কর্মী। শুধু তাই নয়, সংগঠনের বক্তব্য, ইতিমধ্যে বর্ধমানের কাঁকসা, বাঁকুড়ার সোনামুখি, আসানসোল ডিভিসনের ডাবর সাবস্টেশন সহ বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের তিনটি শিফটে কাজ করতে হচ্ছে, কিন্তু দুটি শিফটে কাজ করার জন্য অর্ডার আছে । রাত্রিকালীন শিফটে কাজ করার লিখিত আদেশনামা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নেই। ফলে রাত্রিকালীন শিফটে কাজ করতে গিয়ে যদি সামান্য বেতনের কর্মীদের কোনও দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তার দায় কে নেবে।
 

Comments :0

Login to leave a comment