JUNIOR DOCTORS R G KAR

জুনিয়র ডাক্তারদের কথা শুনতে নারাজ রাজ্য

রাজ্য

স্বাস্থ্যভবনের অদূরে ধরনায় জুনিয়র ডাক্তাররা।

তথ্য প্রমাণ লোপাটে দায়ী যারা, কেন স্বাস্থ্যভবনের সেই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? যে পুলিশ আধিকারিকরা তদন্তে বেনিয়মে যুক্ত, ভুল তথ্য দিয়েছেন সংবাদমাধ্যমে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না? সহকর্মীর ভয়াবহ নিপীড়ন এবং হত্যার পরও এই দাবি তোলা কী রাজনীতি?
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যসচিবের সাংবাদিক সম্মেলনের পর এই মর্মে প্রশ্ন তুললেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। জুনিয়র ডাক্তারদের দায়ী করে, তাঁদের ‘খোলা মন’ না থাকার অভিযোগ দায় সারেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এবং তৃণমূলের অন্যতম নেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। জুনিয়র ডাক্তাররা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যে দাবিগুলি তুলেছিলেন, তাকে শর্ত আখ্যা দিয়ে, খারিজ করে দেয় রাজ্য সরকার। 
এদিন ভোর থেকে কয়েক দফায় জুনিয়র ডাক্তার এবং প্রশাসনের মধ্যে ই-মেলে চিঠির আদানপ্রদান হয়। শেষ দফায়, বিকেলে চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যভবনের সামনে ধরনা মঞ্চ থেকে জানিয়েছিলেন যে বৈঠকে তাঁদের ৩০ প্রতিনিধিকে থাকতে দিতে হবে। আলোচনায় কাজে যোগ দেওয়ার আগে আসবে পাঁচ দফা নিয়ে প্রশাসনের মনোভাবের প্রসঙ্গ। বৈঠকে থাকতে হবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে। বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে। 
রাজ্য সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবিতেই ৯ আগস্ট, আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীর দেহ মেলার দিন থেকে আন্দোলনে রয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের প্রধান দাবি, আরজি কর কান্ডের সমস্ত দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা। এর পাশাপাশি আরজি কর কাণ্ডে প্রমাণ লোপাটে অংশ নেওয়া ও প্রমাণ লোপাটে সাহায্য করা সমস্ত আধিকারিককে চিহ্নিত করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা। কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের অপসারণ, রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা ও মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভয়ের পরিবেশ বা ‘থ্রেট কালচার’ কাটিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। 
আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের দেহ মেলে সেমিনার রুমে। তার পাশে বাথরুমের দেওয়াল ভাঙা হয়। তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ তুলছে সিবিআই-ও। জুনিয়র চিকিৎসকদের বক্তব্য, প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ কেবল নয়, স্বাস্থ্য ভবনের শীর্ষ আধিকারিকরা দেওয়াল ভেঙে দিয়ে তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে রাজ্য প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে না কেন। সব স্তরের চিকিৎসকরাই বলছেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রবল দুর্নীতির কেন্দ্রেও স্বাস্থ্যভবনের শীর্ষ স্তর জড়িত। 
জুনিয়র চিকিৎসকরা জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচ দফা দাবির ভিত্তিতে আলোচনা হলে বসতে কোনও আপত্তি নেই। তাঁরা খোলা মনেই আলোচনায় অংশ নিতে আগ্রহী। কিন্তু কর্মবিরতি প্রত্যাহারের শর্ত চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। সংশ্লিষ্ট সব অংশের বক্তব্য, জুনিয়র চিকিৎসকরা ছাত্র হিসেবে কাজ শেখেন। তাঁদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দেওয়া আসলে বোঝায় রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কতটা বেহাল। প্রায় ৯৩ হাজার নথিভুক্ত চিকিৎসক রয়েছেন রাজ্যে, জুনিয়র ডাক্তার মাত্র ৭ হাজারের কিছু বেশি। তাঁরা আন্দোলনে রয়েছেন বলে পুরো দায়িত্ব নিয়ে পরিষেবা দিচ্ছেন সিনিয়র চিকিৎসকরা। তারপরও ২৩ জনের মৃত্যুর দায় স্বাস্থ্যসচিব আন্দোলনের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন কোন তথ্যের ভিত্তিতে? 
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এদিন বলেন, পেছনে রাজনীতি আছে বলে শর্ত চাপানো হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে কাজে যোগ দিতে বলেছিল। তা শোনেননি চিকিৎসকরা। মুখ্যমন্ত্রী কোনও পদক্ষেপ নেননি। 
প্রতিবাদী বিভিন্ন অংশের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টই স্পষ্ট করেছে এই তদন্তের মতো বেনিয়ম অতীতে কখনও দেখা যায়নি। পোস্টমর্টেমেও বেনিয়ম হয়েছে। তা’হলে তথ্য প্রমাণ লোপাটে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আপত্তি কেন রাজ্য প্রশাসনের।

Comments :0

Login to leave a comment