10 percent pay cut for tram workers

ট্রামের কর্মী-শ্রমিকদের ১০ শতাংশ বেতন ছাঁটাই

কলকাতা

 সরকারি পরিবহণ নিগমের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন থেকে ১০ শতাংশ টাকা ছেঁটে দিল সরকার! 
তৃণমূল সরকারের ১৩ বছরে এই প্রথম রাজ্যের সরকারি পরিবহণ নিগমগুলির শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনে কোপ পড়ল। গত বুধবার অফিস ছুটির পর রাত আটটা নাগাদ ট্রাম কোম্পানির শ্রমিকদের বেতনের টাকা ঢোকে। তারপরই শোরগোল পড়ে যায়। পরিবহণ নিগমের কর্মচারীরা জেনে যান, তাঁদের প্রাপ্য বেতন থেকে সরকার ১০ শতাংশ টাকা কম দিয়েছে। শুধু স্থায়ী কর্মচারীরাই নয়, বেতনে কোপের মুখে পড়েছেন নিগমগুলির ঠিকাকর্মীরাও। ১৩ হাজার ৫০০ টাকা ভাতা থেকেও ১০ শতাংশ হারে ১৩০০ টাকা কম পেয়েছেন সিটিসি’র ঠিকা কর্মচারীরাও।
সিটিসি ওয়ার্কার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’র কার্যকরী সভাপতি সুবীর বসু বলেন, ‘‘১৯৬৭ সালে ব্রিটিশ মালিকানা থেকে ট্রাম কোম্পানির সরকারি অধিগ্রহণের পর থেকে বেতনের ওপর কোপের এমন ঘটনা ঘটেনি। এবার যা হলো তা নজিরবিহীন। সরকারের এই সিদ্ধান্তে শ্রমিক, কর্মচারীরা স্তম্ভিত।’’
আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার আবহে নাগরিক আন্দোলন থেকে মানুষকে ফেরাতে ‘পুজোয় ফিরুন’, ‘উৎসবে ফিরুন’ বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। একাই ১২০০ পুজোর উদ্বোধন করে রেড রোডে বিপুল টাকা খরচ করে কার্নিভ্যাল করেছিলেন। এবারও দীপাবলির আগে কলকাতা শহরে একের পর এক পুজো উদ্বোধনে নেমেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। আর সেই উৎসবের আগেই ব্রিটিশ মালিকানাধীন ট্রাম কোম্পানির মতোই সরকারি পরিবহণ সংস্থার কর্মচারীদের বেতনের প্রাপ্য টাকা আটকে দিল খোদ সরকার। সিটিসি’র এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘ন্যূনতম চার হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত কম বেতন দেওয়া হয়েছে।’’ 
বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি দপ্তরে ছুটি। সোমবার ফের চালু হবে সরকারি কাজ। তারমধ্যে সরকারি পরিবহণ নিগমের কর্মচারীদের বেতন বঞ্চনায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে। দীপাবলির উৎসবের আগের রাতে সরকারের এই নজিরবিহীন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আগামী সোমবার বিষয়টির হেস্তনেস্ত করতে চাইছেন।
মহানগর থেকে গণ পরিবহণের অন্যতম মাধ্যম ট্রামকে তুলে দেওয়ার পক্ষে ইতিমধ্যে জোরালো সওয়াল শুরু করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ট্রাম কোম্পানি, সিএসটিসি’র হাতে থাকে বিপুল পরিমাণ মহার্ঘ জমি সরকার বিক্রি করে দিয়েছে। জমি বিক্রির টাকা স্বশাসিত পরিবহণ নিগমগুলির হাতে না দিয়ে সরকার নিজের কোষাগারে ঢুকিয়ে নেয়। এক দশক ধরে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য পরিবহণকে দুর্বল করেছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। এমনকি জ্বালানির দাম যখন ৬৫ টাকা লিটার ছিল তখন থেকে সরকারি বাস ভাড়া একই রেখে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন খাতে কোপ এই প্রথম। 
এরাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা এমনিতেই তাঁদের প্রাপ্য মহার্ঘভাতা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বঞ্চনার ফারাক ৩৬ শতাংশ। এক সময় পরিবহণ নিগমগুলিতেও প্রাপ্য মহার্ঘভাতা দেওয়া হচ্ছিল না। ট্রাম কোম্পানির সিআইটিইউ সংগঠন মামলা করে সেই অধিকার ফিরিয়ে আনে। ফলে মহার্ঘভাতা ও বাৎসরিক ইনক্রিমেন্টের মতো আর্থিক সহায়তা রাজ্যের অন্যান্য কর্মচারীদের মতো পরিবহণ নিগমগুলির কর্মচারীদের দিতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য সরকার। 
মমতা ব্যানার্জি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাঁচ পরিবহণ নিগমের শ্রমিক, কর্মচারী ও আধিকারিকদের বেতন খাতে অর্থ দপ্তর ৯০ শতাংশ টাকা বরাদ্দ করে এসেছে। বাকি ১০ শতাংশ টাকা নিগমগুলির নিজস্ব আয় থেকে সংগ্রহ করে বেতন দেওয়া হতো। একমাত্র কোভিড পর্বে পরিবহণ সংস্থার বেতনের পুরো টাকাটাই রাজ্যের অর্থ দপ্তর থেকে ভরতুকি হিসাবে দেওয়া হচ্ছিল। এবারই সেই পথ বন্ধ করে বেতনে কোপ বসালো রাজ্য সরকার। 
চলতি মাসেই রাজ্যের পরিবহণ দপ্তরের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এক আধিকারিক সিটিসি, এসবিএসটিসি, সিএসটিসি, সারফেস ট্রান্সপোর্ট ও এনবিএসটিসি—  এই পাঁচ পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টরদের কাছে একটি নির্দেশিকা পাঠান। ওই নির্দেশিকাতেই স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, চলতি মাসের বেতন খাতের ৯০ শতাংশ টাকা রাজ্যের অর্থ দপ্তর থেকে দেওয়া হবে। বাকি টাকার জোগান নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, পরিবহণ দপ্তর থেকে বেতনের নির্দেশিকার পর পরিবহণ নিগমগুলির তরফ থেকেও আলাদা করে একটি নির্দেশিকা করা হয়ে থাকে। কিন্তু চলতি মাসের বেতনের আগে সিটিসি’র তরফে কোনও নির্দেশিকা ছাড়াই শ্রমিক, কর্মচারীদের অ্যাকাউন্টে ১০ শতাংশ কেটে বেতন দেওয়া হয়ে যায়।
পরিবহণ দপ্তর সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, সিএসটিসি ও সারফেস ট্রান্সপোর্টের কর্মচারীদের বেতন এখনও অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়নি। সিটিসি’র ১০ শতাংশ বেতন বন্ধ করার খবরের পর এই দুই নিগম কর্তৃপক্ষ ধীরে চলার নীতি নিয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের কর্মচারীদের মাসের প্রথমে ৯০ শতাংশ ও ১০ দিন পরে বাকি ১০ শতাংশ বেতন আলাদাভাবে দেওয়া চালু আছে। সিএসটিসি’র সিআইটিইউ নেতা রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, ‘‘রাজ্য সরকার কত শতাংশ, নিগম কত শতাংশ দিয়ে আমাদের বেতন হবে এসব আমরা বুঝি না। আমরা আমাদের প্রাপ্য বেতন হাতে না পেলে অধিকার বুঝে নেব।’’

Comments :0

Login to leave a comment