বিশ্বজিৎ রায়-বিরাটী
সংবিধান সঙ্কটের সন্মুখীন। সাংবিধানিক ব্যাবস্থাগুলো সঙ্কটে পড়ছে। এবারের নির্বাচনে মোদী ধর্মকে কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হিসাবে তুলে ধরেছিল। দেশের মানুষ মোদীর চারশো পারের স্বপ্নকে ভেঙে দিয়েছে। অথচ যৌবনের সামনে বড় সঙ্কট রুটি, রুজি ও কর্মসংস্থান। এই বিষয়গুলো মোদী ও মমতা কেউ বলে না। এই বিষয়গুলো তুলে ধরে রাস্তার লড়াই আন্দোলন তীব্র করতে হবে। মঙ্গলবার যুবশক্তি পত্রিকার ৫৭ তম প্রতিষ্ঠা দিবসে বিরাটী তরুণ সেনগুপ্ত ভবনে একথা বলেন ডিওয়াইএফআই প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
আরএসএস, দক্ষিণপন্থার বিপদ, প্রতিরোধের বর্নমালা শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন যুবশক্তি পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক পলাশ দাস, সংগঠনের রাজ্য কমিটির সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, যুবশক্তি পত্রিকার সম্পাদক কলতান দাসগুপ্ত, ডিওয়াইএফআই রাজ্য কমিটির সভাপতি ধ্রবজ্যেতি সাহা সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য কমিটির সভাপতি ধ্রবজ্যেতি সাহা।
সেলিম বলেন, ‘‘গোটা দেশ ও রাজ্যের যুবসমাজের স্বপ্নকে ভেঙে চুড়মার করে দিচ্ছে। আসলে স্বপ্ন বিক্রি করে ভোটে জিততে চাইছে দেশ ও রাজ্যের শাসকদল। এবারের নির্বাচনের আগে মোদী কা গ্যারান্টি ফলাও করে প্রচার করেছে। নির্বাচন পেরিয়ে যাওয়ার পর সেটা ভুলে গেছে। যোজনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে। যৌবনের সামনে বড় সংকট কর্মসংস্থান। এই প্রশ্নে দেশ ও রাজ্যের সরকার একই নীতি নিয়েছে। রুটি রুজির কথা বলছে না। শিক্ষা, সাস্থ্য, কর্মসংস্থানের অধিকার মুছে দেওয়া হচ্ছে। মোদী রামমন্দিরের কথা বলছে। মমতা জগন্নাথ মন্দিরের কথা বলছে। ধর্মীয় মেরুকরণের মোড়কে মানুষকে ভাগ করতে চাইছে। এখানে নীতি, আদর্শ কোনো বিষয় নয়। আমাদের রাজ্যে চোপড়াতে যা ঘটেছে, একই জিনিষ রাজস্থান, উওর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশে ঘটছে। মানুষকে জাতপাত, ধর্ম, বর্নের ভিত্তিতে ভাগ করতে চাইছে। এই ভাগাভাগির রাজনীতিকে সামনে আনতে চাইছে। আরএসএসের কাজকর্ম চোখে দেখা যায় না। আরএসএস তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি। এদের মধ্য দিয়ে আরএসএস তাদের ভয়াবহ রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়িত করতে চাইছে। ধর্মনিরপেক্ষ না থাকলে গনতান্ত্রিক অধিকার থাকবে না। গনতান্ত্রিক অধিকার না থাকলে ধর্মনিরপেক্ষ থাকবে না। এই ভয়াবহ বিপদের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে যুবদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন এবারের নির্বাচনে মোদী ও মমতা মানি পাওয়ার ব্যাবহার করছে। মোদী, মমতা, অভিষেক, শুভেন্দুরা একটা ছবি লাগিয়ে দোকান খুলেছে। এরা একে অপরের মাল বিক্রি করছে। এখানে ফ্রানচাইজি রাজনীতি চলছে। ধর্ম, জাতপাত, তোলাবাজি অবাধে চলছে। এরাই ভোট আসলে ভোট করানোর দায়িত্ব নেয়। অপরাধমূলক কাজে দুষ্কৃতীদের একটা বড় নেটওয়ার্ক কাজ করছে। রামমন্দির এর জায়গায় বিজেপি হেরেছে। আজকের বাজেট বক্তৃতায় কর্মসংস্থানের কথা বললেও এরা কাজ দেবে না। বাংলার রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি এরা ধংস করে দিচ্ছে। তৃণমূল বিজেপি এই দুই দলের বোঝাপড়া পরিস্কার হয়ে গেছে। রুটি রুজির কথা সামনে আনতে হবে। দেশ গঠনে যুবদের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশকে দক্ষিণপন্থা ও ফ্যাসিবাদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
পলাশ দাস বলেন, যুবশক্তি পত্রিকা আমাদের কাছে শিক্ষক ও সংগঠকের ভূমিকা পালন করছে। দক্ষিণপন্থার রাজনীতি ঘৃণা, বিদ্বেষ, ধর্ম, জাতপাতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আরএসএস এই দেশে যুবসমাজের মস্তিষ্ক খেয়ে ফেলতে চাইছে। গোটা ইউরোপ জুড়ে ফ্যাসিবাদ একটা মূর্তিমান বিভিষিকা। পৃথিবীতে অতি দক্ষিণপন্থা একটা ঘৃনা ও বিদ্বেষের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এদের রাজনীতি মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে না। এখানে এক দেশ, এক ধর্ম ও এক সংস্কৃতির কথা বলছে। আমাদের দেশের বহুত্ববাদের ভাবনাকে এরা ভেঙে দিতে চাইছে।
মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, যুবশক্তি পত্রিকা এই রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে লড়াই আন্দোলনের প্রতীক। দক্ষিণপন্থার বিপদে আমাদের পা যেন পিছলে না পড়ে তার জন্য যুবশক্তি। রেল, ডাক বিভিন্ন জায়গায় যুবদের কাজ হচ্ছে না। এনডিএ সরকার যুবদের কাজ দেবে না। দেশ গঠনে যুবদের অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে। অসংখ্য ভুল কথা প্রচার করা হচ্ছে। এর থেকে যুবদের সতর্ক থাকতে হবে। রাস্তায় নেমে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
কলতান দাসগুপ্ত বলেন সত্যিটা যুবদের কাছে তুলে ধরে ছাপান্ন পার হয়ে সাতান্ন বছরে যুবশক্তি পত্রিকা পড়েছে। লোকসভা নির্বাচনে প্রচার মাধ্যমের একটা বড় অংশ মোদী, অমিত শা ও মমতার হয়ে প্রচার করেছে। রুটি রুজির লড়াইকে তীব্র করতে রাস্তায় নেমে যুবদের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
Comments :0