Ajit Pawar

অজিত পাওয়ারের বাজেয়াপ্ত হাজার কোটির সম্পত্তি ফেরত!

জাতীয়

 
  বিজেপি যে দেশের সবচেয়ে বড় ‘ওয়াশিং মেশিন’ তা আবার প্রমাণিত হলো অজিত পাওয়ারের ক্ষেত্রে। দুর্নীতির অভিযোগে শারদ পাওয়ারের ভাইপো অজিতের পাওয়ারের এক হাজার কোটি টাকার বেনামী সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল আয়কর দপ্তর। এখন অজিত পাওয়ার কাকার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে, এনসিপি ভেঙে ঘর করছেন বিজেপি’র সঙ্গে। তিনি এখন মাহায়ুতি সরকারের উপ মুখ্যমন্ত্রী। আর তাতেই ‘সাত খুন মাফ’! মহারাষ্ট্রে উপ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার দু’দিনের মধ্যেই অজিত পাওয়ারের বাজেয়াপ্ত যাবতীয় সম্পত্তি তাঁকেই ফিরিয়ে দেওয়া হলো! বিজেপি’র সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার ‘উপহার’! একারণেই কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশের কটাক্ষ, ‘‘মোদীর সঙ্গে এসো—যাবতীয় দাগ মুছে যাবে, লুটে নাও বিপুল টাকা।’’
২০২১ সালের ৭ অক্টোবর আয়কর দপ্তর হানা দেয় অজিত পাওয়ার এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে যুক্ত সম্পত্তিস্থলে। তখন অজিত পাওয়ার কাকার দলে, স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি বিরোধী শিবিরে। সেই সময় আয়কর দপ্তর অজিত এবং তাঁর পরিবারের ৩০টি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বাজারমূল্যের সাতারায় জরনদেশ্বর চিনিকল, দক্ষিণ দিল্লির ২০ কোটির একটি ফ্ল্যাট, পার্থ পাওয়ারের নির্মল অফিস, যার বাজারমূল্য প্রায় ২৫ কোটি, গোয়ার ২৫০ কোটি টাকা মূল্যের ‘নিলয়’ রিসোর্ট, পুনে ও মুম্বাই সহ মহারাষ্ট্রের ২৭ অঞ্চলের জমি, যার মূল্য ১২৪ কোটি টাকা। এই সমস্ত সম্পত্তিতে না কি অজিতের নাম সরাসরি ছিল না! তবে স্ত্রী সুনেত্রা এবং ছেলে পার্থর ছাড়াও আরও কয়েক জনের নামে ছিল।
কিন্তু তিন বছরের মাথায় তাঁর যাবতীয় বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি ফিরিয়ে দিলো আয়কর দপ্তরেরই অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল। এখন ট্রাইব্যুনাল জানাচ্ছে, অজিত পাওয়ার যে কারচুপি করে বেনামী বিপুল সম্পত্তি অধিকারী হয়েছেন তার সপক্ষে কোনও তথ্যই দাখিল করতে পারেনি আয়কর দপ্তর। এগুলি যে বেআইনি, সেই নথিও দিতে পারেনি। এমনকি কেন বেনামী বলা হয়েছে, তার ব্যাখ্যাও দিতে পারেনি আয়কর দপ্তর। ট্রাইব্যুনাল উলটে জানিয়েছে, সমস্ত লেনদেন হয়েছে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। আবার চলতি বছরের ৫ নভেম্বর অজিত পাওয়ারের নামে কোনও সম্পত্তি নথিভুক্ত নয় বলে ব্যাখ্যাও দেয় ট্রাইব্যুনাল। তখন আয়কর দপ্তর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য ফের আরজি জানায়। সেই আবেদনও খারিজ করে দিয়েছে আদালত। মাথায় ‘বিজেপি’র ‘হাত’ থাকলে সবই হয়, আদালত থেকে ‘বেনামী’ সম্পত্তিও ছাড়িয়ে দুঃসাধ্য নয়। সেই সুফল পেলেন অজিত পাওয়ার।
মক্কেলের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তমুক্ত হওয়ায় বেজায় খুশি অজিতের আইনজীবী প্রশান্ত পাতিল। তিনি দাবি করেন, ‘‘সমস্ত সম্পত্তির লেনদেন হয়েছে ব্যাঙ্ক কিংবা যাবতীয় বৈধ আর্থিক পথেই। ওই সব অভিযোগের কোনও আইনি ভিত্তি ছিল না, অজিত এবং তাঁর পরিবার কোনও কারচুপিই করেনি।’’ কংগ্রেস মুখপাত্র রমেশ এদিন এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘‘বিজেপি’র ওয়াশিং মেশিন চালু। মোদীর সঙ্গে এসো, দাগ মুছে নাও।’’ আবার কংগ্রেস নেতা বিজয় ওয়দেত্তিয়ার বলেন, ‘‘এটা নতুন কিছু নয়। বিজেপি’র সঙ্গে হাত মেলালেই ‘ক্লিনচিট’ পাওয়া যায়। যিনি বিজেপি’র সঙ্গে নেই, তাঁকেই ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে দুর্নীতিতে। এ খেলা তো চলছেই।’’
কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এমন ঘটনা আকছার দেখা যাচ্ছে। দুর্নীতিগ্রস্তদের দলে কিংবা শরিক হিসাবে টেনে নেওয়ার পরেই তাঁদের সমস্ত অভিযোগ থেকে দায়মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে নিমিষে। মহারাষ্ট্রেই ‘ আদর্শ আবাসন’ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ছিলেন কংগ্রেস নেতা অশোক চ্যবন। তিনিও কিছুদিন আগে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্ত থেকে একজন ‘সৎ রাজনীতিক’ হয়ে গিয়েছেন। এই রকম ঝুরি ঝুরি উদাহরণ রয়েছে গোটা দেশে। বিজেপি’র ‘ওয়াশিং মেশিন’-এ ঢুকলেই সমস্ত কালিমামুক্ত!
 

Comments :0

Login to leave a comment