Job TMC BJP

ব্যবসা নিয়ে ‘যুদ্ধ’ তৃণমূল-বিজেপি’র, কাজের কথা নেই

রাজ্য

—  বিজেপি বলছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কারখানা চলে যাচ্ছে। তৃণমূল পালটা স্লোগান তুলেছে ‘বাংলা মানে ব্যবসা।’ রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যর একটি প্রশ্নের সূত্রে দু’দলের এই সাম্প্রতিক ‘খেলা’ হচ্ছে। কিন্তু এই ‘লড়াই’র মাঝে আসল প্রশ্নটি দু’পক্ষের কেউ তুলছেন না—  পশ্চিমবঙ্গে কর্মসংস্থানের হাল কী!
কর্মসংস্থানের হাল বলতে প্রথমেই আসতে পারে ক্লাস্টারের প্রশ্ন। বিভিন্ন ছোট শিল্পের ক্লাস্টার তৈরির ঘোষণা ছিল মমতা ব্যানার্জির। রাজ্যের ক্ষুদ্র ছোট মাঝারি এবং বস্ত্র শিল্প দপ্তরের দাবি, রাজ্যে ৫৫০টি ক্লাস্টার তৈরি হয়েছে রাজ্যে মমতা ব্যানার্জির শাসনে। এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিচ্ছে স্টেট লেবেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির সাম্প্রতিক রিপোর্ট। সরকারের দাবি করা ৫৫০টি ক্লাস্টারের মধ্যে ২১২টি ক্লাস্টার নিষ্ক্রিয়। আর ২টির কোনও সন্ধানই পাওয়া যায়নি! ছোট শিল্পের ক্লাস্টারেরই এই হাল, কাজের অবস্থা তাই শোচনীয়।
কর্মসংস্থানের সেই ছবি বলতে পারে পরিযায়ীর সংখ্যা। শুধু মণিপুর কিংবা জম্মু কাশ্মীরই নয়, রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে ২৫টি জায়গায় পশ্চিমবঙ্গের যুবরা উপার্জনের জন্য থাকেন। রাজ্য সরকারের শ্রম দপ্তরের রিপোর্ট তাই। ওই দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমাদের হিসাবে রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক ২০লক্ষের বেশি।’’
এটি সরকারি হিসাব। সেই সরকারি হিসাবের প্রকৃত সংখ্যাটি ২০ লক্ষ ৪৭ হাজার। যদিও ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছেন যে, রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা ৫০ লক্ষ। গত ৪ সেপ্টেম্বর আবাসন এবং নির্মাণ শিল্পের সংগঠন ক্রেডাইয়ের রাজ্য সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘৫০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের তালিকা দিয়ে বিশেষ অ্যাপ তৈরি করছি।’’ সেখানে আবাসন নির্মাতাদের মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ ছিল, ‘‘ওই কর্মীদের তালিকা সরকার দিয়ে দেবে। তাঁদের বুঝিয়ে রাজ্যে ফেরাতে উদ্যোগী হন আপনারা। কর্মী প্রয়োজন হলে তালিকা থেকেই সকলকে কাজে লাগান।’’
এখন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ীদের ফেরানোর কথা বলছেন না। কতজন পরিযায়ীকে সরকার ফিরিয়ে রাজ্যে কাজে লাগালো তার কোনও হিসাব রাজ্যের শ্রম দপ্তরে নেই।
গত ১৯ এপ্রিল তিনি হরিহরপাড়ায় বলেছিলেন, ‘‘আপনারা রোজায় এসেছিলেন। আবার কাজে চলে যাবেন। কিন্তু ভোটটা দিয়ে যান। যাঁরা কাজে ডাকবে, তাঁদের বলুন ভোট দিয়ে যাব। এটা আমার অধিকার।’’
অর্থাৎ কাজ না দিতে পারলেও ভোটটি চেয়েছিলেন পরিযায়ীদের। লোকসভা ভোট হয়ে গেছে। এখন পরিযায়ীদের কোনও উল্লেখ নেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। বিজেপি-ও পরিযায়ীদের কাজের কথা তুলছে না। তারা ২০০৭’০৮ থেকে শিল্প আটকানোর বিশৃঙ্খলায় তৃণমূলের শরিক ছিল। এখন তারা বলছে ‘ব্যবসা চলে যাচ্ছে।’ পৌঁছান যাক ২০১৪-র এপ্রিলে। নরেন্দ্র মোদী তখনও প্রধানমন্ত্রী হননি। সাক্ষাৎকারে মোদী জানিয়েছিলেন, ‘‘এখন, যখন আমি গুজরাটের বাইরে এসে সারা দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করি, আমার সিঙ্গুরের জন্যও একটি ভাবনা আছে।’’ সেই ভাবনা আজও অজ্ঞাত থেকে গেছে। সিঙ্গুর তো শুধু নয়, পশ্চিমবঙ্গের কোথাও বিজেপি’র সাংসদরা শিল্প, ব্যবসা গড়তে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, এমন কোনও উদাহরণ নেই।
রাজ্য সরকারের শ্রম দপ্তরের হিসাব বলছে রাজ্যের মানুষ সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে আছেন মহারাষ্ট্রে—  ৩,৬৩,২৫৩। দ্বিতীয় স্থানে কেরালা। সেখানে আছেন ৩,৬১,১৭৭। তৃতীয়স্থানে তামিলনাডু। সেখানে আছেন ২,১৭,৮৪৪জন। চতুর্থ স্থানে কর্নাটক। সেখানে রাজ্যের পরিযায়ী আছেন ১,৬১,৯২৬। অর্থাৎ রাজ্যের তালিকা অনুসারে রাজ্যের পরিযায়ীদের অর্দ্ধেকের বেশি আছেন দক্ষিণ ভারতের চারটি রাজ্যে। তবে রাজ্যের মানুষ কাজ করতে কাশ্মীর কিংবা মণিপুরেও আছেন। রাজ্যের তালিকা বলছে জম্মু, কাশ্মীরে আছেন ৮৫৬২জন।, আবার মণিপুরে আছেন ৩১৬৩জন। লাক্ষাদ্বীপ কিংবা মিজোরামেও পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আছেন কাজের জন্য।
তবে পার্শ্ববর্তী বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওডিশা, আসামেও রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা আছেন। এই রাজ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছেন ওডিশায়—  ১,২১,১৫০।
শুধু পরিযায়ীদের পরিসংখ্যানেই নয়, কর্মসংস্থানে রাজ্যের বেহাল অবস্থা বোঝা যাবে অন্যান্য শিল্পক্ষেত্রেও। গত পাঁচ বছরে রাজ্যে ছোট শিল্পে কাজ হয়েছে মাত্র ৩৫,১৩৪ জনের। বছরে ৭হাজারের কিছু বেশি। পশ্চিমবঙ্গের স্থান দেশে ৮ম। গত তিন বছরে রাজ্যে ছোট শিল্প হয়েছে মাত্র ৪৪৩৫টি। দেশে হয়েছে ১,১৫,৩৩০টি। সারা দেশের ৩.৮শতাংশ। যদিও দেশের মোট জনসংখ্যার ৭.৯ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করেন। রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এবং বস্ত্র শিল্প দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ছোট শিল্পের সংখ্যার বিচারে পশ্চিমবঙ্গ দেশে ১২ নম্বরে। তুলনামূলক অনেক ছোট রাজ্য কেরালা এই রাজ্যের থেকে এগিয়ে।

Comments :0

Login to leave a comment