STORY \ GREEN GLOVES — SOURISH MISHRA \ NATUNPATA \1 DECEMBER 2024

গল্প \ সবুজ গ্লাভস \ সৌরীশ মিশ্র \ নতুনপাতা \ ১ ডিসেম্বর ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

STORY   GREEN GLOVES  SOURISH MISHRA  NATUNPATA 1 DECEMBER 2024

গল্প

সবুজ গ্লাভস

সৌরীশ মিশ্র

নতুনপাতা


ওয়েলিংটন স্কোয়ারের কাছেই একটা বাড়িতে কাজ করতে এসেছিল রজত। টি ভি সারভিসিং-এর কাজ করে ও। কাজ সেড়ে এখন সে চলেছে হেঁটে বাসস্টপের দিকে। রাস্তার উল্টোদিকে সারি দিয়ে একের পর এক শীতবস্ত্রের দোকান। কতো রকমের পশমের জিনিসের পসড়াই না সেইসব দোকানে! ঐ সব দেখতে দেখতেই এগোচ্ছিল রজত। হঠাৎ একটা দোকানের সাজানো জিনিসগুলোয় চোখ পড়তেই ও দাঁড়িয়ে পড়ল। সে কি যেন ভাবল কয়েকক্ষণ। তারপর, প্যান্টের ব্যাক-পকেট থেকে বের করলো তার মানিব্যাগটা। তাতে রাখা নোটগুলোয় একবার চোখ বুলিয়ে মানিব্যাগটা ফের পকেটে ঢুকিয়ে এগিয়ে গেল রজত দোকানটার দিকে।
ঐ দোকানটার পসড়া বলতে মূলতঃ উলের গ্লাভসই। টেবিলে ঢেলে রাখা নানান রঙের, নানান মাপের পশমের দস্তানা।
"আপনার কাছে ছ'-সাত বছরের বাচ্চার গ্লাভস হবে?" জিজ্ঞেস করে দোকানী ভদ্রমহিলাকে রজত।
"হ্যাঁ।" বলেই দোকানী তাঁর পিছনের তাকটা থেকে একটা পিচবোর্ডের বাক্স এনে রজতের সামনের টেবিলটায় রাখে। তারপর, সেটা থেকে পাঁচ-ছ'টা প্যাক করা গ্লাভস বের করে এগিয়ে দেয় রজতের দিকে। 
রজত প্লাস্টিকের মোড়কগুলো থেকে গ্লাভসগুলো বের করে একে একে। এবং বুঝতে পারে, গ্লাভস প্রত্যেকটিই তাঁর মেয়ে মিঠির হাতে একেবারে ঠিকঠাক ফিটিংস হবে। রজত তার মেয়ের জন্য গ্লাভস পছন্দ করতে লেগে যায়।


দুই

রজতের মেয়ে রনিতা যার ডাকনাম মিঠি ক্লাস টু-তে পড়ে। ওর মর্নিং স্কুল। সকাল সাতটায় শুরু হয় ক্লাস। তাই, বাড়ি থেকে মিঠিকে বেরোতেই হয় সাড়ে ছ'টার মধ্যেই। রজতই সাইকেল করে স্কুলে নিয়ে যায় মিঠিকে।
গত ক'দিন ভালো ঠান্ডা পড়েছে। যে দিন প্রথম ঠান্ডাটা হঠাৎই বেশ অনুভূত হোলো, সেই দিন থেকেই রজত লক্ষ্য করছে, সাইকেলের সিটে বসেই মেয়ে তার ফুল-সোয়েটারের লম্বা হাতা দুটোর মধ্যে নিজের হাত দুটো ঢুকিয়ে নিচ্ছে। অনাবৃত হাত দুটোয় ঠান্ডা লাগছে বলেই যে মেয়ে এমন করছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি রজতের। তাই সে ঠিকই করেছিল মেয়ের জন্য উলেন গ্লাভস কিনবে। আর, আজ ওয়েলিংটনের এই গ্লাভসের দোকানটায় হঠাৎ চোখ পড়তেই আর সাথে বাড়তি কিছু টাকাও আছে দেখে, ঠিক করে ফেলে রজত, আজই কিনে ফেলবে ও মেয়ের গ্লাভস।


তিন

রজতের পছন্দ করা হয়ে গেছে মিঠির জন্য গ্লাভস। গ্লাভসটা কচি কলাপাতা রঙের। মিঠির বড় পছন্দের রঙ এটা। 
মিঠির ছোট্ট ছোট্ট হাত দুটোয় বেশ মানাবে গ্লাভসগুলো। তার চেয়েও বড় কথা, হাত দুটোয় ঠান্ডা হাওয়া লাগায় যে কষ্টটা গত ক'দিন ধরে মেয়েটা স্কুলে যাওয়ার সময় পাচ্ছিল সেটা আর আগামীকাল সকাল থেকে পেতে হবে না ওকে। মনে মনে নিজেই নিজেকে কথাকটা বলে রজত। কেমন একটা ভাল লাগার অনুভূতিও হয় ওর মনের ভিতরে। একেই বোধহয় বলে পিতৃস্নেহ।
রজত তার পছন্দ করা গ্লাভসটা দোকানীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, "দিয়ে দিন এটা।"


 

Comments :0

Login to leave a comment