অরিজিৎ মন্ডল
দূষণ বিধিতে বাতিল হচ্ছে পুরনো বাস। কিন্তু নতুন করে আর বাস চালাতে আগ্রহী হচ্ছেন না বাসমালিকরা। কলকাতায় এমনিতেই কমেছে বাস। সঙ্কট বাড়বে আরও।
কলকাতার রাস্তায় কমছে বাস। এখন প্রতিদিন কলকাতা শহর ও শহরতলীতে প্রায় ৩৬০০ বাস চলে। ১৫ বছরের পুরনো হওয়ায় বাদ যাবে আরও প্রায় হাজার বাস। এই বাস না নামলে যাত্রীদের সমস্যা বাড়বে।
বাস পরিবহণ শিল্পে সঙ্কটের জেরে সমস্যায় শ্রমিকরাও। এই প্রসঙ্গে সিআইটিইউ রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু বলেন, "বামফ্রন্ট সরকারের সময় আর্থিক সাহায্য করা হয়েছিল। তার সাথে ব্যাঙ্ক থেকেও লোনের ব্যবস্থা করে তৎকালীন সরকার। বর্তমানে সরকার উদাসীন একদিকে যাত্রীদের সমস্যা অন্যদিকে বাস শ্রমিকদের নিয়মিত ছাঁটাই করা হচ্ছে। বাস শ্রমিক ও যাত্রীদের যাতে সমস্যা না হয় সেটা সরকারের দেখা উচিত।"
দেশে পরিবহণ দূষণ কমাতে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ বিএস-৬ মানের নিচে থাকা ১৫ বছরের পুরোনো গাড়িগুলিকে বন্ধ করতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন্দ্রের গণপরিবহণ বিষয়ক বিভাগ ১৫ বছরের পুরনো গাড়িগুলিকে চিহ্নিত করার নির্দেশ পাঠায় রাজ্যকে। সেই গাড়ির মালিকদের নোটিশও পাঠানো হয়।
বাস কর্মচারী ইউনিয়নের কলকাতা জেলা সম্পাদক শুভাশিস মুখার্জি বলেন, " কেন্দ্রের পাবলিক ভেহিক্যাল বিভাগের নিয়ম মৌখিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী বিরোধিতা করলেও সবার আগে লাগু করেছে এ রাজ্যই। রাজ্যের নতুন 'রোড সেফটি বিলে' বলা হয়েছে প্রাইভেট বাস বা গাড়ির ভাড়া ঠিক করবে মালিক সংগঠন। তাই নির্দিষ্ট কোনও রেট চার্ট নেই সরকারের কাছে। কোন রুটের কোন বাসের ভাড়া কত তা জানে না পরিবহণ দপ্তর। যাত্রীদের থেকে বাসগুলি আলাদা আলাদা ভাড়া নিচ্ছে। সমস্যায় পড়ছে যাত্রীরা।’’
রাজ্যের বাস মালিক সংগঠন গুলি দফায় দফায় পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সাথে কথা বলে। তাদের মূল বক্তব্য ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতির জন্য একাধিক বাস চলেনি সেই বাস গুলিকে আরও ২ বছর চালাতে দেওয়া হোক। সেই বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই পরিবহণ মন্ত্রীর।
বাস কর্মী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন অংশই মনে করাচ্ছে যে অতীতে বামফ্রন্ট সরকারের সময়, ২০০৯ সালে, কাজ হারানো কর্মীদের মাসে ২০০০ টাকা করে ভাতার ব্যবস্থা করা হয়। সেই সময় থেকেই দূষণবিধিতে বাস বাতিল হতে থাকে।
যাত্রীরা অভিজ্ঞতা হলো, একাধিক বাসে ১২ টাকার কোনও ভাড়া নেই। কেউ নিচ্ছে ন্যূনতম ১০ টাকা ভাড়া, কেউ নিচ্ছে ১৫ টাকা ভাড়া। শুধু যাত্রীরা সমস্যায় পড়ছে তা নয় কর্মহীন হয়ে পড়ছেন একাধিক বাস কর্মচারী।
শুভাশিস মুখার্জি বলছেন, ‘‘কলকাতা সংলগ্ন শহরতলী বা মফস্সলের যাত্রীদের সংখ্যা কমেছে। ফলে বাস মালিকরা সন্ধ্যার পর বাস চালাতে ইচ্ছুক থাকছেন না। কলকাতার মধ্যেই একাধিক বাস রুট উঠে গেছে যার মধ্যে মিনি বাসের সংখ্যাই বেশি। ২০৪ নম্বর, ৩ নম্বর রুট উঠেছে। উঠে গেছে ঢাকুরিয়া-বিবাদী বাগ, যাদবপুর-পূর্বাঞ্চল, আনোয়ারশাহ-নিমতলা সহ একাধিক মিনি বাসরুট।’’
বাসের মতো ১৫ বছরের পুরনো অটো গুলোকেও ‘স্ক্র্যাপ পলিসি’ অনুসারে বাতিল করতে হবে বলেই সিদ্ধান্ত করা হয়েছে। ২০০৯ সালে পুরোনো অটো বাতিলের সময় কাটাই বাবদ ৬০০০ টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে এতদিন পর এসেও বাড়েনি সেই টাকার অঙ্ক, উল্টে কমেছে। এখন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৫০০০ টাকা। সিআইটিইউ অনুমোদিত কলকাতায় অটো চালক সংগঠনের নেতা অজিত চৌধুরী বলছেন, ‘‘২০০৯ সালে বামফ্রন্ট সরকার নিশ্চিত করেছিল যাতে সমস্ত অটোমালিক ব্যাঙ্কের লোন পান। বর্তমানে বহু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এই খাতে লোন দিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে চড়া সুদে প্রাইভেট ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে।’’
অভিযোগ, দূষণ ও রুট পারমিট বের করার জন্য ঘুষ দিতে হচ্ছে তৃণমুলের নেতাদের।
পরিবহণ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলছেন, এই শিল্পের দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্য সরকারকে। সরকার যদি গণপরিবহনের দিকে নজর না দেয় সমস্যায় পড়বেন সাধারণ যাত্রী থেকে বাস মালিক এবং কর্মচারীরা।
Comments :0