ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে দুই জনের মৃত্যু। ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি এক গৃহবধূর মৃত্যু হল হুগলীর জিরাট হাসপাতালে। মৃতার নাম সাধনা দাস(৪৭)। বাড়ি বলাগড়ের গুপ্তিপাড়া ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের মাঠ ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিন চার দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন ওই গৃহবধূ। বাড়িতেই ছিলেন। জ্বর না কমায় হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করান। এনএস ১ ডেঙ্গু ভাইরাস পজিটিভ আসে রিপোর্টে। বমি পায়খানা শুরু হলে মঙ্গলবার রাতে জিরাট আহমেদপুর ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিন মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের মধ্য চাচন্ড গ্রামের এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃতের নাম সোহেল রানা(১৯)। জানা গেছে , জ্বরের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির তিনদিনের মাথায় মৃত্যু হয় কলেজ পড়ুয়া ছাত্রের। তরতাজা যুবকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের মধ্য চাচন্ড গ্রামে।
সোহেল সুতির অরঙ্গাবাদ ডিএন কলেজের প্রথম বর্ষে পড়াশুনা করতো। মঙ্গলবার রাতে জঙ্গিপুরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর মৃত কলেজ ছাত্রের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় আরো ছয়জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যেই এলাকায় স্প্রে করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ শুরু করেছে প্রশাসন।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন সোহেল। কয়েকদিন আগেই একটি বেসরকারি ল্যাবে রক্ত পরীক্ষা করান। সেখানেই ডেঙ্গু ধরা পড়ে তার। তড়িঘড়ি তাকে সুতির মহেশাইল গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মৃত ছাত্রের মা জানিয়েছেন, ‘‘ওর জ্বর হচ্ছিল দেখে আমিই ওকে ওষুধ খেতে বলি। কিন্তু জ্বর না কমাতে ডাক্তার দেখাতে বলি। জ্বর দুদিনেই কমে যাবে একথা জানিয়ে নিজেই ওষুধ খাচ্ছিল। পরে চিকিৎসক দেখায়। কিন্তু একেবারে অসুস্থ হয়ে পড়ে। জ্বরের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সোহেল। মঙ্গলবার শরীরের উন্নতি হলেও আবার শরীর অবনতি হলে জঙ্গিপুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ওকে উমরপুর তালাই মোড় সংলগ্ন বেসরকারি নার্সিংহোমে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত দশটা নাগাদ মৃত্যু হয় সোহেলর।
এদিন মৃত গৃহবধূর স্বামী রতন দাস জানান, ‘‘রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গু পজেটিভ পাওয়া যায়। জিরাট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসা শুরু হয়। ইংজেকশন দেওয়ার পর থেকে পায়খানা বমি শুরু হয়। হাসপাতাল বলে চুঁচুড়াতে রেফার করার কথা। আমাদের পক্ষে কালনা সুবিধা বলাতে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স যোগার করতে গেলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয় হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন আপনার স্ত্রী।
জেলা স্বাস্থ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হুগলির জেলায় প্রায় ২৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রয়েছেন। তার মধ্যে বলাগড় ব্লকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা জেলার মধ্যে বেশি। বলাগড় ব্লকের গুপ্তিপাড়ায় ডেঙ্গু বাড়তে থাকায় সেখানে সম্প্রতি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের উদ্যোগে ডেঙ্গু স্ক্রিনিং ক্যাম্প করা হয়। এলাকার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে যদিও গ্রাম পঞ্চায়েতের উপর খুশি নয় গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসী বিনয় হালদার জানালেন,‘‘ এলাকায় এত ডেঙ্গু হচ্ছে কিন্তু পঞ্চায়েত সেভাবে কোন রকম কাজ করছে না। মশা মারার কোন রকম স্প্রে আজ পর্যন্ত আমাদের এলাকায় হয়নি।’’
ডেঙ্গু সহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগের ভয়ঙ্কর প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। বেসরকারি তথ্য বলছে, রাজ্যে চলতি বছরে জানুয়ারি মাস থেকে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত অন্তত আড়াই হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গু হু হু করে ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। মুখ রক্ষার্থে এখন ঘন ঘন বৈঠক ডাকছেন প্রশাসনিক প্রধানরা। পৌর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের তরফে আগামীকাল ৮ আগস্ট উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ওই দিন সমস্ত পৌরসভার চেয়ারম্যানদের নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে পৌর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের পক্ষ থেকে।
Comments :0