Civic volunteer accused of rape again

ফের দল বেঁধে ধর্ষণ, অভিযুক্তদের মধ্যে সিভিক ভলান্টিয়ারও

রাজ্য

আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার আবহেই রাজ্যে একের পর এক যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। বারাকপুর-কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে স্বামীর সামনে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাতেও অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল সরকারের তৈরি করা সিভিক ভলান্টিয়ার!
দলীয় আনুগত্যকে প্রাধান্য দিয়েই পুলিশ প্রশাসনের সমান্তরাল তৈরি করা এই সিভিক বাহিনী শুধুমাত্র শাসকের বাহিনী হিসাবে যে কাজ করছে এখন তাই নয়, থানার অধীনে কাজ করা এই সিভিক ভলান্টিয়ার বাহিনী এখন যেন অপরাধের অন্যতম উৎসস্থল হয়ে উঠছে। আমতায় প্রতিবাদী ছাত্রনেতা আনিস খানের হত্যা থেকে শুরু করে আর জি করের নৃশংস ঘটনা থেকে বুধবার ভোরে প্রকাশ্য রাস্তায় শিউরে ওঠা বর্বরতায় যুক্ত সেই সিভিক ভলান্টিয়ার।
বুধবার ভোরে বারাকপুর-কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে স্বামীকে মারধর করে তাঁর চোখের সামনেই স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। একে একে আটজন দুষ্কৃতী ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই নির্যাতিতার শরীরে। এই ঘটনায় অভিযোগের ভিত্তিতে ৮ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। এরমধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে বুধবার আদালতে পাঠানো হয়েছিল। 
বৃহস্পতিবার অপর ৪ জনকেও কল্যাণী মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়েছে। প্রত্যেককেই বিচারক ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ ধৃতদের নিজেদের হেপাজতে রেখে আর জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়নি। তবে পুলিশ নিজেদের হেপাজতে না রেখে প্রথমেই জেল হেপাজতের আবেদন করে। ধৃতদের আগামী ৪ নভেম্বরের মধ্যে টিআই প্যারেড করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
অভিযুক্ত ৮ জনই আপাতত জেল হেপাজতে। এই ৮ জনের মধ্যেই রয়েছে এক সিভিক ভলান্টিয়ার। ঘটনার পরে পুলিশও সিভিক ভলান্টিয়ারের পরিচয় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল, ঠিক যেভাবে আর জি করের ঘটনার পরে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বলেছিলেন, অভিযুক্তের পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ নয়, সে অভিযুক্ত সেটাই মূল কথা!
দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম রাহুল সিং। বীজপুর থানার অন্তর্গত কাঁচড়াপাড়া কাঁপা মোড়ে সিভিক ভলান্টিয়ার হিসাবে কাজ করে। এর আগে এই রাহুল সিং অটো চালাতো। তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসাবে এই সিভিক ভলান্টিয়ার এলাকায় পরিচিত। কাঁচড়াপাড়া আমবাগান কলোনিতে এই সিভিক ভলান্টিয়ার বাস করে। তৃণমূলের হয়ে তোলাবাজি থেকে ভোট লুট সবেতেই হাত পাকিয়েছে ধৃত রাহুল।
বুধবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ রেললাইন ধরে বাড়িতে ফিরছিলেন ওই দম্পতি। বারাকপুর-কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের কাঁচরাপাড়া-কল্যাণী রেল ব্রিজের নিচে (ভূপেন লোধ কলোনি এলাকা) ছিল দুষ্কৃতীরা। আট-দশজন মিলে রেললাইনের ধারে বসেছিল। ওই ভোররাতে সেখানে জড়ো হয়ে তারা তাস খেলছিল বলে জানিয়েছেন ওই নির্যাতিতার স্বামী। নির্জন ওই জায়গায় রেললাইন থেকে জোর করে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় ওই গৃহবধূকে। স্বামীকে গাছে বেঁধে তাঁর চোখের সামনে চলে এই নৃশংসতা। এরপর কল্যাণীগামী ব্রিজের নিচে ঝোপঝাড়ের মধ্যে ফেলে বছর কুড়ির ওই গৃহবধূর শরীরে আটজন দুষ্কৃতী একে একে পৈশাচিক অত্যাচার চালায়। ধর্ষণের সময় দুষ্কৃতীরা একে অপরের নাম ধরে ডাকার সময় কয়েকজনের নাম মনে রাখে আক্রান্ত দম্পতি। সেই নামগুলি তাঁরা পুলিশকে জানায়।
এই ঘটনায় আটজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পুলিশের জেরায় ধৃতরা এই ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। তাদের মধ্যেই ছিল ধৃত সিভিক রাহুল। এরা কাঁচড়াপাড়া কুলিয়া রোডে আমবাগান কলোনিতে বসবাস করে। এই ঘটনায় তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী কালুয়া, লালুয়া, ডোমা এই তিনজন ধরা পড়ে। এরা কাঁচড়াপাড়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড এলাকায় তৃণমূলের হয়ে সমস্ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। মদ, জুয়া, সাট্টার সমস্ত ঠেক থেকে এরা টাকা তোলে। নির্বাচন এলেই তৃণমূলের হয়ে ভোটলুট করতে ময়দানে নেমে পড়ে। কল্যাণী ব্রিজের নিচে তৃণমূলের এই দুষ্কৃতীর দলের মদতে সকাল থেকেই মদ, জুয়া চালায়। গৃহবধূকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা ঘটনার সময় ঐ স্থানেই ছিল বলে জানা গেছে। 
কাচড়াপাড়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অলকানন্দা গিরি। এই কাউন্সিলরের ভাসুর তৃণমূলের নেতা রামা গিরি এই ওয়ার্ডের পরোক্ষভাবে কাউন্সিলরের সমস্ত কাজকর্ম করে থাকেন। এরা বীজপুরের বিধায়ক সুবোধ অধিকারীর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। কাঁপা মোড়ের একটু আগে বেশ কয়েকটি বারের মালিক এই রামা গিরি। কুলিয়া বিলের পাশে সেচ দপ্তরের সরকারি জমিতে টাকার বিনিময়ে দেড় শতাধিক পরিবারকে বসিয়েছে। আনুমানিক কুড়ি বিঘের মতো সেচ দপ্তরের সরকারি জমিতে এই পরিবারাগুলোকে জমি দেওয়ার বিনিময়ে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই টাকার পরিমাণ এক একটি পরিবার পিছু দেড় লাখ, দুই লাখ। 
ধৃতদের তালিকায় যে সিভিক ভলান্টিয়ার আছে তা কার্যত চেপে গিয়েছিল পুলিশ। একজন সিভিক কীভাবে এলাকার পরিচিত দাগী দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ভোরবেলায় ঘটনাস্থলে জড়ো হয়েছিল সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
আর জি করের নৃশংস ঘটনার তদন্তভার হাতে পাওয়ার ৫৭ দিন পরে গত ৭ অক্টোবর প্রথম দফার প্রাথমিক চার্জশিটে ধর্ষণ ও খুনের সেই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের নামই যুক্ত করেছিল সিবিআই। এমনকি, সুপ্রিম কোর্টেও সরকারকে বারেবারে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের নিরাপত্তায় কেন সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়, এমনকি এঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সরকারকে। আর জি কর মামলার গত ১৫ অক্টোবরের শুনানিতে রাজ্যের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় প্রশ্ন করেন, ‘‘কে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করেন? কোন আইন অনুসারে তাঁদের নিয়োগ করা হয়?’’ আগামী ৫ নভেম্বরের শুনানিতে এমনই ছ’দফা প্রশ্নের উত্তর হলফনামা আকারে জানাতে হবে রাজ্যক।
আবার আনিস খান হত্যা মামলায় ধৃত সক্রিয় তৃণমূল কর্মী তথা দুই সিভিক ভলান্টিয়ার জামিনে মুক্ত হয়ে ফের সিভিকের কাজে আমতা থানার অধীনেই যুক্ত।

Comments :0

Login to leave a comment